মো. জিল্লুর রহমান জিলু, বালাগঞ্জ (সিলেট) থেকে ॥ ইউরোপের গ্রিসের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে মধ্যপ্রাচ্যের ওমান থেকে ৬মাস যাবত নিখোঁজ রয়েছেন বালাগঞ্জের এক যুবক। তার নাম মতিন মিয়া (৩৫)। তিনি উপজেলার দেওয়ান বাজার ইউনিয়নের হায়দরপুর গ্রামের মৃত বাবরু মিয়ার ছেলে। তিনি ৭ভাই ও ১ বোনের মধ্যে ৫ম। মতিন মিয়ার নিখোঁজ ঘটনায় তার পরিবারের লোকজন, আত্মীয়-স্বজন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিশেহারা। তারা দালালদের কাছে দফায় দফায় ধর্ণা দিয়েও কোন সন্ধান পাচ্ছেন না। পরিবারের লোকজন অভিযোগ জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট দালালরা নানা অজুহাতে প্রায় সাড়ে ৮লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। নিখোঁজ মতিন মিয়া ইরানে জেলে বন্দী রয়েছেন এবং শিগগির মুক্তি পাবেন বলে দালালরা মাসের পর মাস টালবাহানা চালিয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, নিখোঁজ মতিন মিয়ার গ্রামের বাড়িতে বিরাজ করছে সুনসান নিরবতা। চাপা কান্নায় বাকরুদ্ধ আত্মীয়-স্বজন, পরিবারের লোকজন। তাদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, নিখোঁজ মতিন মিয়া গত বছর ২৯জুলাই দালালদের মাধ্যমে ইউরোপের গ্রিসের উদ্দেশ্যে দেশত্যাগ করেন। এর আগে সংশ্লিষ্ট দালালরা তাকে বিমানযোগে তুরস্ক হয়ে গ্রিস পৌঁছে দেবার কথা বলে ৪লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। পরবর্তীতে তুরস্ক না নিয়ে মতিন মিয়াকে বিমানযোগে আরব আমিরাত নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কিছুদিন থাকার পর তাকে মধ্যপ্রাচের দেশ ওমানে স্থানান্তর করা হয়। অবশেষে ওমান থেকে গ্রিসের উদ্দ্যেশ্যে ইরান নেয়ার পথে তিনি নিখোঁজ হয়ে পড়েন। গত আগস্ট মাসের শেষের দিকে ওমান থাকাকালে সর্বশেষ পরিবারের লোকজনের সাথে মতিন মিয়ার কথা হয়। ইরানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার পর থেকে পরিবারের সাথে তার আর কোন যোগাযোগ হয়নি। অবশ্য সংশ্লিষ্ট দালালরা মতিন মিয়া ইরানে জেলেবন্দী রয়েছেন বলে আত্মীয়-স্বজনদের কাছে জানিয়ে আসছে।
নিখোঁজ মতিন মিয়ার বড়ভাই বাছিত মিয়া, বাদশা মিয়া, ছোটভাই চুনু মিয়া, একমাত্র বোন হামিদা বেগম, ভাবি জেসমিন বেগম, ঝর্ণা বেগম, চাচাতো বোন আছিয়া বেগম, ভাতিজী রুমানা বেগম, ফাইজা বেগম, রুকিয়া বেগম জানান, দীর্ঘ ৬মাস যাবত মতিন মিয়ার সন্ধান না পেয়ে তারা গভীর উদ্বিগ্ন। তারা এ ব্যাপারে সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। আলাপকালে তারা জানিয়েছেন, মতিন মিয়া দীর্ঘ প্রায় ১২/১৩ বছর সৌদি আরব ছিলেন। গত বছরের প্রথম দিকে দেশে এসে গ্রিস যাবার প্রস্তুতি নেন। ইউরোপ যাবার স্বপ্ন পূরণের উদ্দেশ্যে মতিন মিয়া গোয়াইনঘাট উপজেলার সাহেদা বেগম, তার বোনপো সিলেট মেজরটিলার রাসেল ও আব্দুল্লাহ এবং বিয়ানীবাজার উপজেলার ছরওয়ার হোসেনসহ কয়েকজনের মাধ্যমে কথা চূড়ান্ত করেন। এ উদ্দেশ্যে মতিন মিয়া এবং তার পরিবারের পক্ষ থেকে কয়েক কিস্তিতে প্রায় ৪লাখ টাকা অগ্রিম প্রদান করা হয়। সিদ্ধান্ত হয়, বিমানযোগে মতিন মিয়াকে প্রথমে তুরস্ক এরপর গ্রিস পৌঁছে দেয়া হবে। এ লক্ষ্যে গত ২৯জুলাই ঢাকা থেকে মতিন মিয়াকে আরব আমিরাতের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়। আরব আমিরাত কিছুদিন থাকার পর ১৯আগস্ট তাকে ওমান নেয়া হয়। সর্বশেষ গত ২৩আগস্ট সংশ্লিষ্ট দালালরা মতিন মিয়াকে গ্রিসের উদ্দেশ্যে ইরান পৌঁছে দেবার কথা বলে ওমান থেকে তাকে নিয়ে যাত্রা করে। পরবর্তীতে ওমান থেকে ইরান নেয়ার পথে এবং ইরানে সেনাবাহিনীর হাতে বন্দী হয়ে পড়া এবং বন্দীদশা থেকে ছাড়িয়ে আনার কথা বলে দালালরা মতিন মিয়ার পরিবারের কাছে আরও টাকা দাবি করে। এসময় মতিন মিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে কয়েক কিস্তিতে প্রায় সাড়ে ৪লাখ টাকা প্রদান করা হয়।
মতিন মিয়ার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, সর্বশেষ ওমান থাকাকালে তার সাথে পরিবারের লোকজন, আত্মীয়-স্বজনদের কথা হয়েছে। ইরানের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরুর পর থেকে মতিন মিয়ার সাথে তাদের আর কথা হয়নি। এসময় মতিন মিয়া ইরানের সেনাবাহিনীর হাতে বন্দী হয়েছেন বলে দালালরা আত্মীয়-স্বজনদের জানিয়ে দেয়। একই সময়ে তাকে মুক্ত করার জন্য এবং মুক্ত করে তুরস্ক পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে দফায় দফায় টাকা গ্রহণ করেছে। মতিন মিয়ার স্বজনরা জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট দালালরা সর্বমোট ৮লাখ ৩৭হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ ৬মাসেও নিখোঁজ মতিন মিয়ার কোন সন্ধান তারা পাননি। বর্তমানে দালালরাও মতিন মিয়ার ব্যাপারে কোন তথ্য প্রদান করতে পারছে না। এ অবস্থায় মতিন মিয়া বেঁচে আছেন কিনা তার কোন জবাব নেই পরিবার-পরিজনের কাছে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। তারা এখন যে কোন কিছুর বিনিময়ে মতিন মিয়াকে ফিরে পেতে চান। তাদের দাবি ৮লাখ ৩৭হাজার টাকা দালালরা আত্মসাৎ করেছে। প্রয়োজনে আরও টাকা দেবেন, তবু নিখোঁজ মতিন মিয়ার সন্ধান এবং তাকে যেন দেশে পৌঁছে দেয়া হয়।
এদিকে আলাপকালে বালাগঞ্জ থানার অফিসার ইন-চার্জ গাজী আতাউর রহমান মতিন মিয়ার নিখোঁজ ঘটনার বিষয়ে অবগত নন বলে জানিয়েছেন।