বালাগঞ্জে দু’পক্ষের সংঘর্ষের সময় মধ্যস্থতা করতে গিয়ে হামলায় নিহত রাজমিস্ত্রি ঠিকাদার ছমির মিয়ার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। আজ বুধবার (০৭ অক্টোবর) বাদ মাগরিব স্থানীয় আহমদপুর জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে পঞ্চায়েতি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে। জানাজায় শত শত শোকাহত এলাকাবাসী শরিক হন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মামলার প্রস্তুতি চলছে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (০৬ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বালাগঞ্জ উপজেলার দেওয়ান বাজার ইউনিয়নের মোরারবাজারে পাওনা টাকা আদায়কে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। মোরারবাজারের চা-দোকানী স্থানীয় আহমদপুর গ্রামের মছব্বির আলী একই গ্রামের ক্রেতা পারভেজ মিয়া (৩২)’র কাছে পাওনা ২শ ২০টাকা চাইতে গেলে উভয় পক্ষে মারামারির সূত্রপাত হয়। এসময় দোকানী মছব্বির আলী পারভেজ মিয়াকে ছাতা দিয়ে মাথায় আঘাত করেন। পারভেজ রক্তাক্ত জখম হলে পারভেজের মামা (ফুফা) ছমির মিয়াসহ স্থানীয় লোকজন তাকে মোরারবাজারে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। চিকিৎসা শেষে ফিরে আসার পথে উভয় পক্ষে আবার মারামারির সূত্রপাত হয়। এসময় ছমির মিয়া উভয় পক্ষকে শান্ত করতে গেলে পারভেজের প্রতিপক্ষ মছব্বির আলী তাকে বুকে কিল-ঘুষি মারেন। ঘটনার কিছুক্ষণ পর ছমির মিয়ার শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়ে যায় এবং তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এসময় তাকে ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজারে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পর সংবাদ পেয়ে গত মঙ্গলবার (০৬ অক্টোবর) রাতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ওসমানীনগর সার্কেল) মো. রফিকুল ইসলাম, বালাগঞ্জ থানার অফিসার ইন-চার্জ গাজী আতাউর রহমান, সিলেট জেলা পরিষদের সদস্য লোকন মিয়া, ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল আলম, আওয়ামী লীগ নেতা হাজী এমএ মালেক, আব্দুল কাদির খসরু, আব্দুল জলিল, আব্দুল্লাহ রহমানসহ বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। রাত ১টার দিকে ময়না তদন্তের জন্য মৃতদেহ সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। এদিকে আজ বুধবার (০৭ অক্টোবর) ময়না তদন্ত শেষে বিকালে মৃতদেহ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। বাদ মাগরিব জানাজা শেষে স্থানীয় আহমদপুর পঞ্চায়েতি কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়েছে। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত মছব্বির আলীসহ অন্যরা পলাতক রয়েছে। নিহত ছমির মিয়া (৪৫) স্থানীয় আহমদপুর গ্রামের মৃত রইছ আলীর ছেলে। ইমন আহমদ (১৫) ও নাঈম আহমদ (১৩) নামে ছমির মিয়ার দু’টি ছেলে রয়েছে। এর মধ্যে ইমন আহমদ বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বলে জানা গেছে। নিহতের স্ত্রী ফাতেহা বেগমসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন। এ ব্যাপারে আলাপকালে সিলেট জেলা পরিষদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক লোকন মিয়া, দেওয়ান বাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল আলম, সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল, দেওয়ান বাজার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহবায়ক হাজী এমএ মালেক, সদস্য সচিব আব্দুল কাদির খসরু, স্থানীয় গ্রামবাসী আব্দুল্লাহ রহমান, আব্দুল করিম, বশির উদ্দিন, মজনু মিয়া, আব্দুল মালিক, শাহেদ আহমদ প্রমুখ এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। ঘটনার সাথে জড়িত মছব্বির আলীসহ সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আজ বুধবার (০৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বালাগঞ্জ থানার অফিসার ইন-চার্জ গাজী আতাউর রহমান, পুলিশ পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) মুরাদ উল্লাহ বাহার নিহতদের বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রী, সন্তানদের সাথে কথা বলেছেন। আলাপকালে বালাগঞ্জ থানার অফিসার ইন-চার্জ গাজী আতাউর রহমান জানিয়েছেন, মামলার প্রস্তুতি চলছে। তদন্তের মাধ্যমে সঠিক বিচার নিশ্চিত করা হবে।