ইরানের রাজধানী তেহরান থেকে ইউক্রেনগামী একটি বিমান গত বুধবার উড্ডয়নের তিন মিনিটের মাথায় বিধ্বস্ত হয়ে ১৭৬ জন আরোহীর সবাই নিহত হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার দাবির পর এবার ইরানের সামরিক বাহিনী স্বীকার করেছে তারা ভুল করে সেদিন ওই বিমানটি ভূপাতিত করেছিল।
বিবিসি ও আলজাজিরার প্রতিবেদনে ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনের বরাতে জানানো হয়েছে, গত বুধবার তেহরানের ইমাম খামেনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের ৩ মিনিট পর ইউক্রেনের যাত্রীবহী বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিমানটি ভূপাতিত করে ইরানের সামরিক বাহিনী। তবে তারা দাবি করছে, ভুলে বিমানটি ভূপাতিত করে তাদের বাহিনী।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ বলেছেন, ‘একটি শোকের দিন। সশস্ত্র বাহিনীর অভ্যন্তরীণ তদন্ত শেষে প্রাথমিকভাবে এই উপসংহারে আসা গেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের হঠকারিতার কারণে তৈরি সংকটকালীন সময়ে ‘‘মানবিক ভুলের’’ কারণে এই বিপর্যয়। আমাদের জনগণ, ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবার এবং অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত জাতির প্রতি আমাদের গভীর অনুশোচনা, ক্ষমা ও শোক প্রকাশ করছি।’
বিমানটিতে থাকা অধিকাংশ আরোহীই ইরানি এবং ইরানি বংশোদ্ভূত কানাডীয় নাগরিক। নিহতদের মধ্যে ৮২ জন ইরানি, ৬৩ জন কানাডীয়, ১০ জন সুইডেনের, চারজন আফগানিস্তানের, তিনজন জার্মানির এবং তিনজন ব্রিটেনের নাগরিক। অপরদিকে নয় ক্রুসহ ১১ জন ইউক্রেনের নাগরিক নিহত হয়েছেন।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো গতকাল বলেন, তিনি বেশ কিছু গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য হাতে পেয়েছেন। এসব তথ্য অনুযায়ী, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতেই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এটা হতে পারে যে, এই ঘটনা অনিচ্ছাকৃত। তবে ইরান সে অভিযোগ অস্বীকার করছিল।
ট্রুডো আরও বলেন, কানাডীয়দের অনেক প্রশ্ন রয়েছে এবং তারা এর উত্তর চায়। তবে এখনই তিনি কাউকে দোষারোপ করতে চান না। এই বিমানটিকে রাশিয়া নির্মিত টর-এম১ ক্ষেপণাস্ত্র দ্বারা আঘাত করা হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইরান বলছে, মানবীয় ভুলের কারণেই ১৭৬ আরোহীর সবাইকে নিয়ে ওই ইউক্রেনীয় বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছিল। ঘটনার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে আসছিল যে, ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতেই এর কারণ। তখন ইরানের কর্মকর্তারা তা আড়াল করে উল্টো দাবি করেন, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়।
ইউক্রেনের বিমানটি বিধ্বস্ত হয় যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের মধ্যে তীব্র উত্তেজনার মধ্যে। ইরাকের রাজধানী বাগদাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ড্রোন হামলা চালিয়ে ইরানি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর কুদস ফোর্সের প্রধান জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে হত্যা করায় বুধবার ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরান ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই ইউক্রেনের বিমানটি বিধ্বস্ত হয়।
পেন্টাগন ও মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগের সিনিয়র এক কর্মকর্তা এর আগে বলেন, পেন্টাগনের মূল্যায়ন হলো বিমান ভূপাতিত করার বিষয়টি ছিল দুর্ঘটনা।