শাহীন সুলতানা, কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :
১৩ বছর বয়সে ৭১’র স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা এ.এফ.এম আমান উল্লাহ। তিনি ১৯৫৮ সালের ৪ জুলাই কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার সালুয়া ইউনিয়নের দক্ষিন সালুয়া গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতার নাম মরহুম এ,কে.এম ছাইদুর রহমান (চাঁন মিয়া মাস্টার) ও মাতা মরহুমা মেহেরুনেছা।
এ.এফ.এম আমান উল্লাহ ১৩ বছর বয়সে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ডাকে অনুপ্রাণিত হয়ে এর এক মাস পর মে মাসে তৎকালীন কুলিয়ারচর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ মুছা মিয়া’র নিকট থেকে আওয়ামী লীগ হিসেবে একটি পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে মা-বাবা, বোন ও পরিবারের সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর ও কসবা এলাকা দিয়ে পালিয়ে ভারতে চলে যান।
সেসময় তিনি ৭ম শ্রেণীতে পড়ুয়া ছাত্র ও তার বয়স ১৩ বছর। কিশোর এ.এফ.এম আমান উল্লাহ ভারতে গিয়ে প্রথমেই কংগ্রেস ভবনে যান। সেখনে তালিকায় নাম নিবন্ধন করে পরে তিনি হাঁপানিয়া ক্যাম্পে গিয়ে ভর্তি হন। ওই ক্যাম্পে ১৫/২০ দিন থাকার পর এখান থেকে চলে যান গোপন নগরে। সেখানে ১৫ দিনের একটি প্রশিক্ষণ শেষ করে তিনি চলে যান লেবুচড়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। সেখানে মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ শেষে তাকে পাঠানো হয় ভারতের খেজামারা ৩ নম্বর সেক্টরে়। ৩ নম্বর সেক্ররে ৮/১০ দিন থাকার পর তাকে পুনরায় অম্পিনগরের একটি টেনিং সেন্টার পাহারা দেয়ার দায়িত্বে পাঠানো হয়। অম্পিনগর টেনিং সেন্টারে প্রায় ১ মাস থাকার পর পুনরায় খেজামারা ৩ নম্বর সেক্টরে পাঠায়। তখন খেজামারা ৩ নম্বর সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর শফিল্লাহ। ওই সেক্টরে থাকাকালীন সময় কিশোর আমান উল্লাহ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় যুদ্ধ চলা অবস্থায় ভারতীয় সৈন্যদের সহযোগীতায় নিয়োজিত ছিলেন। এখানে প্রায় একমাস থাকার পর অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় বীর মুক্তিযোদ্ধা এনামুল হক কমান্ডারের ৩২ জনের ১টি গ্রুপের সাথে তিনি বাংলাদেশে এসে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেন। তাদের প্রথম ক্যাম্পটি ছিল কুলিয়ারচর উপজেলার ছয়সূতী ইউনিয়নের বর্তমান ভূমি অফিস। ওই ক্যাম্পে থেকেই কিশোর আমান উল্লাহ কুলিয়ারচর এলাকা সহ এর পার্শবর্তী ভৈরব উপজেলার কালীকাপ্রসাদ সহ আরো বিভিন্ন স্থানে পাকবাহিনী ও তাদের সহযোগী রাজাকাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেন। এর পর দেশ স্বাধীন হয়।
কিশোর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এ.এফ.এম আমান উল্লাহ এ প্রতিনিধিকে বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ঐতিহাসিক ভাষন “এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” আমরা এই ভাষনে উদ্ধেলিত হয়ে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি শত্রুমুক্ত করে স্বাধীন সার্বভৌমত্ব বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলাম। যার ফলে আজ মু্ক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং সুফল এনে দিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধাদের ঘরে।
তিনি বলেন, আমরা মুক্তিযোদ্ধা। আমরা আমাদের এই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। এ কথা আজ বিশ্বের সকলেই এক বাক্যে স্বীকার করেন এবং করবেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রসংসা করে এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, জাতির চরম দুঃসহ মুহূর্তে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আজ বিশ্ব মানবতার বিবেক রূপে আবির্ভূত হয়েছেন।
দেশরত্ন শেখ হাসিনা শুধু জাতীয় নেতাই নন, তিনি আজ তৃতীয় বিশ্বের একজন বিচণ বিশ্বনেতা হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছেন। বিশ্ব মানবতা যখন মুখ থুবড়ে পড়ছে, মানবতার ঝান্ডা হাতে দেশরত্ন শেখ হাসিনা তখন মাথা তুলে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর কণ্ঠে উচ্চারিত হয় নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠস্বর। দেশরত্ন শেখ হাসিনার ঘোর শত্রুরাও আজ তাঁর মানবিকতার প্রশংসা করছেন। এ ছাড়াও বিশ্ব গণমাধ্যম দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে বলেছেন, ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’। ২০১৬ সালে শান্তিতে নোবেলজয়ী কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট জুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোস বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে ‘বিশ্ব মানবতার বিবেক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। যা গোটা বাঙালী জাতির গর্ভ।