এমএ কাশেম ভূঁইয়া-হোমনা (কুমিল্লা)
কুমিল্লার হোমনার জয়পুর গ্রামের এক দিনমজুর পরিবারের নবম শ্রেণীর ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। গত ২২ ফেব্রুয়ারী দিবাগত সাড়ে ১২টার দিকে জয়পুর গ্রামের দক্ষিণপার্শ্বে খালি জমির একটি সাপ্তাহিক খানকা শরীফের ভিতরে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর ধর্ষণকারীদের পরিবারের লোকজন প্রভাবশালীদের দিয়ে গোপনে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্ঠা করে বলে অভিযোগ উঠে। পরে ঘটনার ৭দিন পর সংবাদ পেয়ে হোমনা থানা পুলিশের তৎপরতায় অবশেষে ভেস্তে যায় ধামাচাপার ঘটনা। পুলিশের সহযোগিতায় ভিকটিমের মা বাদী হয়ে ধর্ষণের সাথে জড়িত ৭ যুবকের বিরুদ্ধে হোমনা থানায় মামলা নং ১৩, তারিখ ২৯.০২.২০২০ইং দায়ের করা হয়। তবে কোন আসামী গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি বলে জানায় পুলিশ। আসামীদেও গ্রেফতারে টিম গঠন করা হয়েছে বলেও জানায়।
মামলা ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, হোমনার জয়পুর গ্রামে দরিদ্র দিন মজুর পরিবারের মেয়ে ও অনন্তপুর দড়িকান্দি হাজ্বী মাজেদুল ইসলাম দাখিল মাদ্রাসার নবম শ্রেনীর ছাত্রী (১৫) গত ২২ ফেব্রুয়ারী রাতে বাড়ির লোকজনের সাথে গ্রামের একটি ওরশের মেলায় ঘুরতে যায়। সেখান থেকে একই গ্রামের পূর্বপাড়ার জয়নাল আবেদিনের ছেলে জুয়েল রানা (২২) ও মনির হোসেনের ছেলে আল আমিন (১৯) তাকে কৌশলে গ্রামের দক্ষিণ পাশে জমির মাঝ খানে টিনের দোচালা সাপ্তাহিক খানকা শরীফের ঘরে নিয়ে যায়। সেখানে কোমল পানিয়ের সাথে চেতনানাশক ঔষধ সেবনের মাধ্যমে প্রথমে জুয়েল রানা ও আল আমিন ধর্ষণ করে এবং সে দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে। এরপর ভিকটিম অচেতন হয়ে গেলে একই গ্রামের বাবর আলীর ছেলে পারভেজ মিয়া (১৯), জহিরুল ইসলামের ছেলে জিয়া (১৭), শাহ আলমের ছেলে জালাল উদ্দিন (১৭), কবির মিয়ার ছেলে শাকিব (১৭) ও শাহিন মিয়ার ছেলে শাহ পরানকে (১৭) ডেকে নেয় এবং তারাও রাতভর পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরে গ্রামের দক্ষিণপার্শ্বে একটি দীঘির পারে অচেতন অবস্থায় ভিকটিমকে ফেলে ধর্ষণকারীরা চলে যায়।
পরদিন রবিবার সকালে গ্রামের কৃষক দীঘির পাড়ে অচেতণ অবস্থায় ভিকটিমকে দেখতে পেয়ে পরিবারের লোকজনকে জানালে তারা ভিকটিমকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে। এসময় ভিকটিমের পরিবারের মোবাইল নাম্বারে ফোন দিয়ে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য প্রাণনাশের হুমকি দেয় ধর্ষকরা। তাদের হুমকির ভয়ে ভিকটিমের পরিবারের লোকজন ভিকটিমকে নিয়ে আত্মগোপনে চলে যায় এবং গোপনে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্ঠা চলে। পরে “কাঠগড়ায় উত্তর” ফেসবুকের ফেইক আইডি থেকে ধর্ষণকারীদের ফোনালাপসহ ছবি প্রকাশ করা হয়। যেখানে ধর্ষণের কথা স্বীকার করা ও ভিডিও ধারণ করা হয়েছে এমন একটি ভয়েসক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। বিষয়টি হোমনা থানা পুলিশের দৃষ্টিগোচর হলে থানার ওসি আবুল কায়েস আকন্দ ঘটনাস্থলে যান এবং ভিকটিমের পরিবারকে সহায়তার আশ্বাস দিয়ে ভিকটিমকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন।
গণধর্ষনের ঘটনায় ৭জনকে আসামী করে ভিকটটিমের মা বাদী হয়ে ২৯ ফ্রেব্রুয়ারী শনিবার হোমনা থানায় মামলা নং ১৩ দায়ের করেন।
থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবুল কায়েস আকন্দ সংবাদকে বলেন, আমরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিস্তারিত জেনে ভিকটিমের পরিবারকে সহযোগিতা করি এবং ভিকটিমের মা ৭জনকে আসামী করে মামলা দিয়েছে। আমরা আসামীদের গ্রেফতারের জন্য একটি টিম গঠন করে দিয়েছি। আশা করি খুব দ্রুত আসামীদের গ্রেফতারে সক্ষম হবো।