ইসলাম প্রকৃতির ধর্ম। এর প্রতিটি বিধান প্রকৃতিসম্মত ও মানুষের স্বভাববান্ধব। প্রথমে ঈমান নিয়ে বললে বলতে হয়, মানুষ মাত্রই বিশ্বাসের শক্তি চায়। নির্ভর করতে চায়। আস্থা রাখতে চায়। নিজের দুঃখ, কষ্ট দুর্বলতা, অসহায়ত্ব থেকে রক্ষার জন্য মানসিক বল আশা করে। নিজের সব অক্ষমতা উতরে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত একটি ভরসা চায়।
নিজের মনের আকুতি, নৈবেদ্য, ভক্তি অর্পণের জন্য একটি পরম শক্তি চায়। এসব মানুষের স্বভাব। মানুষের সৃষ্টি ও গঠনও এমন চাহিদাকে সাপোর্ট করে। যে চাহিদা বা নিবেদন আল্লাহ পূরণ করেছেন। তিনি নিজেকে অনন্ত গুণের অধিকারী অসংখ্য নামের অধিকারী পরম ক্ষমতাধর ও অপার করুণাময় রূপে পরিচিত করিয়েছেন।
মানুষের সব বিনয় ও বন্দেগী যেন শুধু তারই উদ্দেশে নিবেদিত হয়, এ বিধানও জারি করেছেন। বলেছেন, মানুষ তোমরা বল ‘হে আল্লাহ, আমরা শুধু তোমারই ইবাদত করি। আর কেবল তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।’ আল্লাহর সাথে আর কারও তুলনা হয় না। উপমা হয় না। তার কোনো শরীক নেই। সমকক্ষ নেই। তিনি এক একক ও অদ্বিতীয়। এ বিশ্বাসের নাম ঈমান।
এর পাশাপাশি আল্লাহর রাসূলগণ, আসমানি সব কিতাব, আল্লাহর ফেরেশতা, পরকাল, ভাগ্যের ভালো মন্দ আল্লাহর হুকুমেই হয় এবং মৃত্যুর পর মানুষের পুনরুত্থান ইত্যাদিও ঈমানের অংশ। এ ঈমান বা বিশ্বাস মানুষকে তার জীবনযুদ্ধে সফল হতে দারুণভাবে সাহায্য করে। যার বিশ্বাস নেই, সে মানসিকভাবে দুর্বল মানুষ। আধ্যাত্মিকভাবে মৃত মানুষ।
তার প্রকাশ্য শক্তি সামর্থ থাকলেও এ শক্তি জৈবিক ও পাশবিক। মানবিক শক্তির জন্য ঈমান অপরিহার্য। ফেরেশতাসুলভ সৌজন্য আসে ঈমান থেকেই। বর্তমানে পৃথিবীর জ্ঞানী-গুণিরা মানুষের পূর্ণতার জন্য ঈমানকে অপরিহার্য মনে করছেন। যদিও তারা ঈমান শব্দটি ব্যবহার করছেন না। তবে, একটা কিছুর বিশ্বাস ও আস্থা, শক্তিশালী কিছুর ওপর আস্থা ও নির্ভরতা মানবজনমের জন্য জরুরি মনে করছেন।
আরো পড়ুনঃ কমলাপুরে ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু
জার্মানীর একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান মানুষের সামগ্রিক সুস্থতার জন্য অন্তত ১০ মিনিট এমন কিছু ব্যায়াম বা আসন প্রস্তাব করেছে, যা শতভাগ নামাজের দাঁড়ানো, রুকু, সোজা হয়ে দাঁড়ানো, সেজদা, আত্তাহিয়্যাতুর বৈঠক, দৃষ্টি ও অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নিয়ন্ত্রণে রাখা, কথা বন্ধ রেখে রিল্যাক্স করা, এমনকি দু’দিকে ঘাড় বাঁকানো পর্যন্ত তারা সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
কিন্তু সালাত বা নামাজ নামটি ব্যবহার করছে না। এখানে ঈমান, নিয়ত, মনযোগ ও আল্লাহর উদ্দেশ্যে তাসবীহ তাহলীল, দোয়া দুরুদ না থাকায় এটি মানুষের জন্য বিশাল উপকারী আসন বা ব্যায়াম হিসাবে পশ্চিমে জনপ্রিয় হয়ে যাচ্ছে। তবে, বান্দা হিসাবে মহান সৃষ্টি ও পালনকর্তা আল্লাহর ইবাদতরূপে, তার দেড় হাজার বছর যাবত বিশ্বমুসলিম যে আমলটি করে আসছে, সেটির হাকীকত তারা চিন্তা ও গ্রহণ করতে পারছে না।
তবে, এর বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্বও অস্বীকার করতে পারছে না। গত কয়েক বছর এটি ট্রেন্ড হয়ে গেছে, মুসলমানের সাথে সাথে রোজার সময় উপবাস করা। শত শত ঘটনা ব্যক্তিগতভাবে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা গণমাধ্যমে এমন দেখা যাচ্ছে যে, সমাজের সাথে বা প্রতিবেশির সাথে কিংবা সহকর্মীর সাথে শখ করে বহু অমুসলিম দেশে দেশে রোজা পালন করছে।
এর স্বাস্থ্যগত অতুলনীয় উপকার বিবেচনায় আধুনিক জগতের মানুষ রোজার মাসে ব্যবহারিক সিয়াম পালন করছে। যার পূর্ণতা তখনই আসবে যখন তারা ঈমান ও সওয়াবের আশায় রোজা রাখবে। তবে, পশ্চিমা জগতে এমনকি মুসলিম বিশ্বেও ইসলামি বিশ্বাস জীবনব্যবস্থার প্রতি সীমাতিরিক্ত বিদ্বেষ ও বিরূপ সমালোচনা সত্তে¡
ও মানুষ মানবিক ও প্রাকৃতিক ধর্ম ইসলামের প্রতি ঝুঁকছে। হাজার বাধার মুখেও ইসলামের গ্রহণযোগ্যতা প্রতিদিনই বাড়ছে।