করোনাভাইরাস: দুবাইয়ে ২৮ প্রবাসীর কাছে ‘রিয়েল হিরো’ সুজানা

স্বাস্থ্য

মহামারী করোনাভাইরাসে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো লকডাউনে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ দুবাই। সব কর্মক্ষেত্র বন্ধ। স্থানীয়দের পাশাপাশি এতে চরম বিপাকে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া প্রবাসীরা। দিনযাপন করছেন কষ্টে। দুবাইয়ের ডেইরা ও বানিয়াসে অবস্থানরত ২৮ জন প্রবাসীর পাশে দাঁড়ালেন জনপ্রিয় মডেল অভিনেত্রী সুজানা জাফর।

বুধবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে ডেইরা দুবাই, সাবকা রোডে বসবাসরত ১৩ প্রবাসীদের কাছে কমপক্ষে ১৫ দিনের খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন সুজানা জাফর।

তবে কী কী দিয়েছেন সেগুলো গোপন রাখতে চাইলেন এ অভিনেত্রী। বললেন, মানুষের পাশে থাকছি এটাই বড় কথা। তারা ভালো থাকলে আমি খুশি। আল্লাহ চেয়েছে বলে পেরেছি। আমি উছিলা মাত্র।

অভিনয়ে নিয়মিত নন সুজানা। বছর তিনেক হলো ফ্যাশন হাউজ ব্যবসায় মনোযোগ দিয়েছেন। পাশাপাশি ঢাকা টু দুবাই আসা যাওয়ার মধ্যে থাকেন। যেখানেই থাকেন না কেন উত্তরার অটিস্টিকদের একটি আশ্রম নিজের সাধ্যের মধ্যে দেখভাল করেন। সময় করে ছুটে যান সেখানে। সময় কাটান।

এছাড়া সুবিধাবঞ্চিত স্কুলে খরচ, শিক্ষার্থীদের পেলে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন পাশে থাকার। মানুষের বিপদে সর্বাত্মক পাশে থাকার চেষ্টা করলেও কখনোই এসব নিয়ে প্রচারমুখী নন সুজানা।

চলমান করোনা পরিস্থিতিতে তিনি দুবাই থাকলেও দেশের অনেক অসচ্ছল পরিবারকে দূর থেকে সাহায্য করে যাচ্ছেন তিনি। প্রবাসীদের পরিচয় গোপন রাখার শর্তে চ্যানেল আই অনলাইনকে সুজানা বলেন, ১৫ জন এবং ১৩ জন দুই গ্রুপে মোট ২৮ বাংলাদেশের মানুষ এখানে থাকে।

আমার ফেসবুক পেজে সেখান থেকে ২ জন তাদের অবস্থার কথা জানায়। এরপর তাদের থেকে পরিচয় পত্রের ছবি নিয়ে নিশ্চিত হয়েছি এবং জানতে পেরেছি ওই মানুষগুলো করোনার প্রভাবে লকডাউনে কতোটা অসহায় দিন পার করছে। এরমধ্যে তাদের খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। এরপর সুপারশপ থেকে ভাইয়ের মাধ্যমে তাদের বাসায় খাবার পৌঁছে দিয়েছি। এ অবস্থায় আমি বাসার বাইরে যেতে পারছি না। সবচেয়ে বেশি ভালো লাগতো মানুষগুলোকে নিজ হাতে রান্না করে যদি খাওয়াতে পারতাম।

দুবাইতে থাকা ওই প্রবাসীর বেশিরভাগ বাড়ি চট্টগ্রাম, কুমিল্লায়। তাদের একজন জানান, গত ২০-২২ দিন তারা গৃহবন্দি। কাজ বন্ধ। মোটেও বাইরে যেতে পারছেন না। বেতনও হাতে পাননি। খাওয়াদাওয়ায় বেশি সমস্যায় পড়েছেন গত ২ দিন।

সুজানা জাফরের ভক্ত হওয়ায় তার ফেসবুক ফলো করতেন। সেখানে তিনি প্রয়োজনে মানুষকে সাহায্যের আশ্বাস দেন। সুজানার পোস্ট দেখে তার ইনবক্সে যোগাযোগ করলে তিনি বিপদে পাশে দাঁড়ান। কয়েকদিনের খাদ্যসামগ্রী পাঠিয়েছেন। তার জন্য প্রাণ খুলে দোয়া দিচ্ছি।-বলছিলেন দুবাই প্রবাসী সেই বাংলাদেশি।

কক্সবাজারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক দুবাই প্রবাসী থাকেন বানিয়াসে। তিনি সুজানাকে বাস্তব জীবনের ‘সুপারহিরো’ উল্লেখ করে আবেগতাড়িত হয়ে বলেন, যখনই অনাহারে থাকার মতো অবস্থা আমাদের, কী করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না; তখন আমাদের সমস্যা জানতে পেরে ১৫ জন সদস্যের প্রায় দুই সপ্তাহের খাবার পাঠিয়ে দিয়েছেন সুজানা আপা। অন্য কোনো অসুবিধে আছে কিনা বারবার খোঁজ নিয়েছেন। বিদেশে থেকে উনি যেভাবে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন জানিনা দেশে থাকলে আপন মানুষরাও এমন করতো কিনা।

সুজানা বলেন, দেশে কষ্টে থাকলে কেউ না কেউ সাহায্য করে। কিন্তু বিদেশে সবাই সবার অচেনা। কেউ পাশে দাঁড়ায় না। আগামীতে অবস্থার পরিবর্তন না হলে আমি তাদের আরও খাবার দিতে চাই। এমন খারাপ সময়ে থাকা দুবাই প্রবাসী কেউ থাকলে আমার সাথে যোগাযোগ করলে আমি চেষ্টা করবো পাশে থাকার জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.