মাঠে গিয়ে কৃষকের পাশে থাকার জন্য মন্ত্রিসভার সদস্যসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, মাঠে গিয়ে ধান কাটায় কৃষককে সহায়তা দিতে হবে। এতে লজ্জার কিছু নেই। সম্পূর্ণ সুস্থ থাকলে নিজেও মাঠে গিয়ে ধান কাটায় অংশ নিতেন বলে এ সময় উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর তেজগাঁওয়ের কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকের পর অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় ধানের বাম্পার ফলন, ধানের মূল্য সংকট এবং মাঠ থেকে ধান কাটার বেলায় চলমান কৃষি শ্রমিক সংকট নিয়ে কথা হয়। কৃষি শ্রমিক পাওয়া গেলেও তাদের মাত্রাতিরিক্ত পারিশ্রমিকের প্রসঙ্গও বৈঠকের আলোচনায় স্থান পায়।
এ সময় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং উপমন্ত্রীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কৃষি খাতে সরকার বীজ, সার, কীটনাশক, কৃষি উপকরণসহ ব্যাপক সহায়তা দেওয়ায় এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে ধান মজুত রাখার জন্য পর্যাপ্ত জায়গার সংকট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় কৃষকের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, কৃষককে সহায়তা দিতে হবে। মাঠে গিয়ে ধান কাটতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ইতিমধ্যে কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছে। ধান কাটা রীতিমতো উৎসবে রূপ নিয়েছে। মাঠে গিয়ে ধান কাটার এ উৎসবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অংশ নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, কর্মসংস্থান বেড়েছে। এ কারণেই ধান কাটার জন্য চাহিদা অনুযায়ী কৃষি শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ কর্মসংস্থান হচ্ছে না বলে কেউ কেউ সরকারের সমালোচনা করছে।
এসময় ধানক্ষেতে আগুন লাগানোর বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষ কত সাধনা করে নিজের ক্ষেতে ধান ফলায়, সেই ধানে তারা আগুন দেবে—আমি তা বিশ্বাস করি না। তবে আমাদের সমালোচকের অভাব নেই। কিন্তু তারা দেখে না যে বৈশাখ মাসে ধান কাটার জন্য গ্রামে শ্রমিক পাওয়া যায় না। তার মানে আমরা ভিন্ন খাতে মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পেরেছি। এ কারণেই গ্রামে কৃষি শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। এটা সরকারের সফলতারও অংশ।’
তিনি তরুণ সমাজের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘লেখাপড়া শিখে শুধু শহরে ঘুরলেই হবে না, কৃষিও সম্মানজনক কাজ। উন্নত জ্ঞান অর্জন করে কৃষি খাতেও কাজ করতে হবে। এটা আমাদের মূল জায়গা, এটাকে অবজ্ঞা করার সুযোগ নেই।’ কৃষিকাজ করে যেন পস্তাতে না হয়, সে জন্য বাজারে দাম যা-ই থাকুক, ভবিষ্যতে কৃষকের স্বার্থে ভর্তুকি দিয়ে সরকারিভাবে সংগ্রহ করা ধানের মূল্যবৃদ্ধি করা যায় কি না, সেটাও বিবেচনা করা হবে বলে জানান তিনি।
চালের দাম কম হওয়ায় কৃষকরা উত্পাদিত ধানের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না বলে এসময় মত দেন একাধিক মন্ত্রী। এ সময় চাল রপ্তানির প্রসঙ্গ আসে। জবাবে প্রধানমন্ত্রী চাল রপ্তানির ব্যাপারে ইতিবাচক মত দিয়ে বলেন, ‘একদিকে রপ্তানি করলে চালের দাম বেড়ে যায়, যারা চাল কিনে খায় তাদের কষ্ট হয়। অন্যদিকে চালের দাম কম থাকলে কৃষক ঠিকমতো দাম পায় না।’ এ বিষয়টি সমন্বয় করে কিভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়, তা দেখা হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে জল, স্থল ও আকাশপথের সব বন্দরে পণ্য যেন সম্পূর্ণ স্ক্যানিং হয়ে দেশে ঢোকে সেই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের কড়া নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সব বন্দরে যাতে অটোমেশন হয় সেই বিষয়ে কোনো ধরনের ওজর-আপত্তি গ্রহণ করা হবে না বলেও হুঁশিয়ার করেন প্রধানমন্ত্রী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ মঙ্গলবার থেকে আগামী মাসের ৮ তারিখ পর্যন্ত বিদেশ সফরে থাকবেন। অর্থাৎ তিনি ঈদের সময় দেশের বাইরে থাকবেন। এ কারণে মন্ত্রিসভার নির্ধারিত এজেন্ডার বাইরে প্রায় এক ঘণ্টা অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।
পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিকালীন দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে ঠিক থাকে, সে জন্য সব মন্ত্রীকে খেয়াল রাখার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় যেকোনো সন্ত্রাসমূলক অপতত্পরতা প্রতিরোধে চোখ-কান খোলা রাখার জন্য মন্ত্রীদের বলেন তিনি।
দেশের মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা বিধানে নিজেদের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঈদের ছুটি যেন সবার জন্য আনন্দময় হয়, তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। আমরা সেটা অবশ্যই করব। সূত্র- কালের কণ্ঠ