সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা আজাদুর রহমানের বাসভবন এবং যুবলীগ কর্মী শমসের আলীর বাসা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাতে তাঁরা শাহপরাণ থানায় মামলা করেন। ওই দুই মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শাহপরাণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশীদ চৌধুরী প্রথম আলোকে মামলা হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন নজরুল ইসলাম (৩০), ফুজায়েল মল্লিক (২০), তারেক আহমদ (৩১) ও রাহেল উদ্দিন(২৫)। তাঁরা সবাই ছাত্রলীগের কর্মী।
আজাদুর রহমান সিলেট সিটি করপোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং তিনি সিলেট নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। অন্যদিকে শমসের আলী নামের যুবলীগ কর্মীর পদপদবি না থাকলেও তিনি আজাদুর রহমানের সমর্থক। আজাদুর রহমান সিলেটের আলোচিত ‘টিলাগড় গ্রুপের’ একটা অংশের নেতা হিসেবেও পরিচিত। এ ছাড়া টিলাগড় এলাকায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরীর একটি এবং সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর) আসনের সংসদ সদস্য ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রণজিত সরকারের অপর একটি পক্ষ রয়েছে।
আজাদুর রহমানের মামলায় ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, ‘হামলাকারী ব্যক্তিরা এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী, ত্রাস সৃষ্টিকারী ও জবরদখলকারী। তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অপকর্ম করায় স্থানীয় নিরীহ জনগণ আমার নিকট বিচার চাইলে আমি আসামিদের বিচার ও তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেই। এতে আসামিরা ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে হত্যার পরিকল্পনা ও বাসায় হামলা করে।’
যুবলীগের কর্মী শমসের আলীসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১৫ থেকে ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন আজাদুর রহমান। মামলায় তিনি আসামিদের বিরুদ্ধে হামলা, চাঁদাবাজি, প্রাণনাশের হুমকি ও লুটপাটের অভিযোগ এনেছেন।
শাহপরাণ থানার ওসি হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, দুটি মামলার এজাহারভুক্ত চার আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল বিভিন্ন সময় তাঁদের অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ শনিবার বিকেলে তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের অভিযান অব্যাহত।
হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি
সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর আজাদুর রহমানের বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে তিন দিনের কর্মসূচির ঘোষণা করেছে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ।
আজ দুপুরে সিলেট নগর ভবনের সম্মেলনকক্ষে জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো. মখলিছুর রহমান কামরানের সভাপতিত্বে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
সভায় হামলার ঘটনায় নিন্দা জানানোর পাশাপাশি সব কাউন্সিলর ও কর্মকর্তাদের সর্বসম্মতিক্রমে আগামীকাল রোববার থেকে তিন দিনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এতে দ্রুত সময়ের মধ্যে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানানো হয়। এ সময় সিটি করপোরেশনের সব ওয়ার্ডের সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর এবং কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর জানান, তিন দিনের কর্মসূচি কাল থেকে শুরু হবে। এর মধ্যে কাল দুপুর ১২টায় নগর ভবনসহ ৪২টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে একযোগে এক ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করা হবে। এ ছাড়া আগামী ১ জুলাই টিলাগড় পয়েন্টে অবস্থান কর্মসূচি ও ২ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালন করা হবে। সূত্র: প্রথম আলো