নিউজ ডেস্ক:: সড়কে প্রাণহানির ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়। ঈদ এলেই আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যায় সেই মৃত্যুর মিছিল। বেহাল সড়কে বেপরোয়া চালকদের প্রতিযোগিতায় যানবাহন খানাখন্দকে পড়ে সৃষ্টি হয় আরো দুর্ঘটনার।
কখনো পথচারীকে বাঁচাতে গিয়ে ঘটে দুর্ঘটনা, আবার দ্রুতগতিতে যান চালাতে গিয়ে রাস্তা পারাপারকালে পথচারীরা চাপা দিয়েও দুর্ঘটনা ঘটছে হরহামেশাই। আর আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণের ঘটনা তো ঘটছেই। শনিবার (২৫ মে) সিলেট, শ্রীমঙ্গল ও হবিগঞ্জে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫ জন।
নিহতদের মধ্যে রয়েছেন— সিলেটের গোলাপগঞ্জে ময়নুল ইসলাম, শ্রীমঙ্গলের কিশোর আলমগীর, হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার আদাউরের মিঠুরায় চৌধুরীর স্ত্রী শান্তা রায় চৌধুরী (৩০), একই উপজেলার হালুয়াপাড়ার মিসির আলীর ছেলে আবু তাহের (৬০) ও মিনাল উদ্দিন (৪০)।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে বাসের চাকায় পৃষ্ট হয়ে ময়নুল ইসলাম নামের এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। তিনি উপজেলার ফাজিলপুরের (খাপরিপাড়া) গ্রামের মৃত সিদ্দিক আলীর ছেলে।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ওসি (তদন্ত) দীলিপ কান্ত নাথ বলেন, সিলেট থেকে ছেড়ে যাওয়া জকিগঞ্জগামী একটি বাসের (সিলেট জ-১১-০৭৯৯) যাত্রী ছিলেন ময়নুল। তিনি উপজেলার ফাজিলপুরে নিজ বাড়ির সামনের সড়কে নামতে গিয়ে বাসের চাকার নিচে পৃষ্ট হন। ঘটনার পরপরই বাসের চালক ও হেলপার পালিয়ে যায়। গুরুতর অবস্থায় তাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে দ্রুতগামী বালুভর্তি ট্রাক চাপায় আলমগীর (১২) এক শিশু মারা যান। শনিবার সকাল ১১টার দিকে উপজেলার সিন্দুরখাঁন ইউনিয়নের হুগলিয়া বাজারে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত আলমগীর (১২) একই উপজেলার সিক্কা গ্রামের বাসিন্দা।
প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুস ছালেক বলেন, শিশুটি রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় দ্রুতগামী ট্রাকটি তাকে চাপা দিয়ে চলে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন।
অন্যদিকে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়কে ট্রাকের ধাক্কায় হবিগঞ্জের অটোরিকশা ও দুই যাত্রী নিহত হয়েছেন। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও চারজন। এদিন দুপুরের দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বিজয়নগরের সাতবর্গ পেট্রোল পাম্প এলাকায় হতাহতের এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন— হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার আদাউরের মিঠুরায় চৌধুরীর স্ত্রী শান্তা রায় চৌধুরী (৩০), একই উপজেলার হালুয়াপাড়ার মিসির আলীর ছেলে আবু তাহের (৬০) ও মিনাল উদ্দিন (৪০)।
হাইওয়ে থানার ওসি মোহাম্মদ হোসেন সরকার বলেন, অটোরিকশাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে যাত্রী নিয়ে হবিগঞ্জের মাধবপুরের দিকে যাচ্ছিল। পথে বিপরীত দিক থেকে আসা ট্রাক ধাক্কা দিলে অটোরিকশার যাত্রী মিনাল উদ্দিন ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মাত্রাতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো, অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন করায় গাড়ির নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পারা, ঝুঁকিপূর্ণ অভারটেক, প্রশিক্ষণহীন বা স্বল্প প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চালক কর্তৃক গাড়ি চালানো, মহাসড়কে থ্রি হুইলার, নসিমন, করিমন, ভটভটি, ইজিবাইক ও সিএনজি অটোরিকশা চালানো এবং সড়কে ডিভাইডার না থাকা ও সড়কে খানাখন্দকের কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটছে।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) সিলেটের উপ পরিচালক শহিদুল্লাহ কায়সার বলেন, দুর্ঘটনা রোদে ট্রাফিক আইন মেনে চলছে হবে। দুর্ঘটনা ঘটার ২০টি কারণ চিহ্নিত করে এগুলোর মেনে চলার বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে লিফলেট বিলি করা ছাড়াও পরিবহণ শ্রমিকদের নিয়ে সভা সেমিনার করা হয়েছে। তাছাড়া লোক স্বল্পতা থাকলে বিভিন্ন সময় ফিটনেসবিহীন যানবাহন প্রতিহত করতে অভিযান চালিয়েছে, এই তদারকি এখনো চলমান রয়েছে।
বিআরটিএ’র তথ্য অনুসারে প্রতি বছর গড়ে ২ হাজার ৬৪০ জন লোক মারা যায়। গড়ে প্রতিদিন মারা যায় ৭ জন। আর গত বছর (২০১৮ সালে) দুর্ঘটনা ঘটে ২ হাজার ৬০৯টি। এতে প্রাণ হারিয়েছেন ২ হাজার ৫৩৫ জন এবং আহত হয়েছেন ১ হাজার ৯২০ জন।সূত্রে ডেইলি সিলেট