হাফিজুল হক,সাপাহার,নওগাঁ প্রতিনিধিঃ- নওগাঁর সাপাহারে ৯ ডিসেম্বর/২০১৯, ৫ জন জয়িতাকে নির্বাচন করা হয়েছে এবং “জয়িতা অন্বেষনে বাংলাদেশ” শীর্ষক এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জয়িতাদেরকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে । বর্তমান সময়ে আমাদের সমাজে এমন অসংখ্য নারী রয়েছে যারা নিজেদের মনোবল, ইচ্ছাশক্তি এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে হয়ে উঠেছে স্বাবলম্বী। আর এই সব নারীদের তৃণমূল পর্যায় থেকে উজ্জীবিত ও অনুপ্রাণিত করার লক্ষে মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধিনে উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর জীবন যুুদ্ধে জয়ী নারীদের স্বীকৃতি প্রদানের জন্য ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ শীর্ষক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। স¤প্রতি নওগাঁর সাপাহার উপজেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উদ্যোগে উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নের ৫ টি ক্যাটাগরিতে প্রতিটি বিভাগে একাধিক আবেদনকারীদের মধ্যে থেকে দক্ষতার সাথে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কল্যাণ চৌধুরীর সভাপতিত্বে উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিসার সুলতান মাহমুদ এবং কমিটির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যাছাই-বাছাই করে ৫ জন জয়িতাকে নির্বাচন করা হয় এবং “জয়িতা অন্বেষনে বাংলাদেশ” শীর্ষক এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জয়িতাদেরকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। জয়িতাদের মধ্যে অর্থনৈতিক ভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী প্রতিবন্ধকতা ও সফলতা ক্যাটাগরিতে উপজেলার সাপাহার
বাজারের নার্গিস সরকার, শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী প্রতিবন্ধকতা ও সফলতা ক্যাটাগরিতে উপজেলার ফুটকইল গ্রামের নারগিস জাহান, “সফল জননী নারী” প্রতিবন্ধকতা ও সফলতা ক্যাটাগরিতে উপজেলা সদরের নুরজাহান বেগম, “নির্যাতনের বিভিষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যেমে জীবন শুরু করেছেন যে নারী” প্রতিবন্ধকতা ও সফলতা ক্যাটাগরিতে উপজেলা সদরের করলডাঙ্গা গ্রামের লিলুফার ইয়াসমিন (কনা),“সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন যে নারী” প্রতিবন্ধকতা ও সফলতা ক্যাটাগরিতে উপজেলার চাঁচাহার গ্রামের বিলকিস রানী শ্রেষ্ঠ সফল জননী নারী হিসেবে সম্মাননা গ্রহণ করেছেন। সফল জয়িতা নার্গিস সরকার বলেন আমাদের সমাজে অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্তে¡ও জীবন সংগ্রাম করে তিনি আর্থিকভাবে সফল হয়েছেন। ২০৮৫ খ্রিঃ ১৪ বছর বয়সে বিবাহ করার পর ১৯৯৯ সনে নগদ ২,৭০০টাকা ও ৩০,০০০টাকা ঋণ নিয়ে ৪ টি গাভী কিনে পালনের কাজ শুরু করেন এবং সফলতা পান।২০০৫ সনে নগদ ৪ লক্ষ টাকা ও মার্কেন্টাইল ব্যাংক হতে ১২ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে সরিষার মিল এর ৬ টি ঘানী স্থাপন করে কাজ শুরু করেন।২০১৭ সালে ব্যবসার সাথে বায়ুগ্যাস ব্যবসা শুরু করেন।২০১৬ সালে ‘ডেইরী ফার্মে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও ব্যবসায়ে বায়োগ্যাস যুক্ত করে ২০১৭ সালে ডেইরী ও বায়োগ্যাস প্রকল্পে আইসিবিইএফ হতে ১ লক্ষ ৪০ লক্ষ সুদ মুক্ত ঋণ গ্রহন করেন। বর্তমানে তার এই আতœ- কর্মসংস্থান মুলক কাজে প্রবল মানসিক ইচ্ছাশক্তিতে বলিয়ান হয়ে আর্থিকভাকে সমাজে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং ২০১৭ সালে উত্তর বঙ্গেও ২২ টি খারের মধ্যে তিনি প্রথম ও নওগাঁ
জেলা চেম্বার ও কমার্সেও সদস্য হন বলে তিনি জানান সেই সাথে তাকে জেলা পযায়ের শেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচন করেন।
জয়িতা নারগিস জাহান বলেন, তিনি ছোট বেলা থেকেই নানান প্রতিবন্ধকতার মধ্যে বড় হয়েছেন। প্রত্যান্ত গ্রাম এলাকা ফুটকইল হতে সাপাহার এসে লেখা পড়া করা গ্রামের লোক জন ভালো চখে দেখতো না অনেকে বাঁধার সৃষ্টি করতো, সে বাঁধাকে অতিক্রম করে বাবার সিদ্ধান্ত মোতাবেক রাজশাহী গিয়ে লেখা পড়া করেন এবং বর্তমানে তিনি রাজশাহী বিশ্বিদ্যালয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী প্রতিবন্ধকতা ও সফলতা ক্যাটাগরিতে জেলা পযায়েও প্রথম হয়েছে। সফল জননী নুরজাহান বেগম বলেন, তার প্রথম সন্তান তারেক হোসেন ২০০২ সালে প্রার্থমিক বৃত্তি পরীক্ষায় প্রথম হোন। ২০০৫ সালে অষ্টম শ্রেনী বৃত্তি পরিক্ষায় উপজেলা প্রথম স্থান অধিকার করেন।২০০৮ সালে গোল্ডেন এ প্লাস ও বৃত্তি সহ এসএসসি পাশ করেন২০১০ সালে রাজশাহী নিউ ডিগ্রী কলেজ হতে এ প্লাস অর্জন করেন,২০১৭ সালে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হতে এমবিবিএস পাশ করেন।বিসিএস পরীক্ষায় সুপারীশ প্রাপ্ত হয়ে বর্তমানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তওে সহকারী সার্জন হিসাবে যোগদান করেন। দ্বিতীয় সন্তান আরিফ হোসেন প্রার্থমিক বৃত্তি পরীক্ষায় ও অষ্টম শ্রেনী বৃত্তি পরিক্ষায় বৃত্তি লাভ করেন,এসএসসি ও এইচ
এসসিতে এ প্লাস পেয়ে বর্তমানে রাজশাহী বিশ্বিদ্যালয়ে ফার্মেসী বিভাগে অধ্যয়নরত। জয়িতা মোসাঃ লিলুফার ইয়াসমিন (কনা) বলেন, ১২ বছর বয়সে বাল্য বিয়ের স্বীকার হন তিনি ,তার আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না। বিয়ের পর থেকে স্বামী তাকে শারিরীক ও মানষিকভাবে নির্যাতন করত। তালাকপ্রাপ্ত হওয়ার পর চরম দারিদ্রতা মোকাবেলা করেছেন তিনি। সমাজের কিছু লোকের অনেক কটুকথা ও সমালোচনার শিকার হন।তিনি স্বামী না থাকার পর সন্তান কে বর্তমানে সাপাহার সরকারী কলেজে বিকম অনার্সে অধ্যয়নরত রেখেছে। ছোট্র ২টি বোনকে লেখা পড়া করানোর পর বিয়ে দিয়েছেন।বৃদ্ধ মার সেবা কওে যাচ্ছেন।আলোহা এনজিওতে দর্জি প্রশিক্ষক হিসাবে নিয়োজিত আছেন তিনি। জয়িতা বিলকিস রানী বলেন, ছোটবেলা থেকেই বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে সমাজ সেবামূলক বিভিন্ন কাজ করতেন তিনি। বিবাহের পর সমাজসেবা মূলক কাজে স্বাামীর উৎসাহ পান। যৌতুক প্রথা নিরোধ, আদিবাসীদের জীবনমান উন্নয়ন, সমাজের অসহায় ও অবহেলিত মানুষের পাশে দাড়ানোসহ সমাজ সংস্কার মূলক বিভিন্ন কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়াতে সমাজের এক শ্রেণির মানুষ তার কাজের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন। সাপাহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কল্যাণ চৌধুরী বলেন, এই জয়িতারা এই সমাজের পিছিয়ে পড়া অন্য নারীদের জন্য এক মহা দৃষ্টান্তর। তাদের খুজে বের করে সম্মানিত করা আমাদের নৈতিক দায়িত্বের একটি অংশ। তাই আমরা চেষ্টা করেছি এই জয়িতাদের ক্ষুদ্র হলেও সম্মানিত করার। আমাদের চেষ্টা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।