কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে সন্তানের বৃত্তির টাকা দিয়ে জুয়া খেলতে বাঁধা দেওয়ায় স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে খুন করার অভিযোগ উঠেছে । এ ঘটনায় অভিযুক্ত স্বামীকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে এলাকাবাসী। ঘটনাটি ঘটেছে গত সোমবার (৩ আগষ্ট) সকাল ৬ টার দিকে উপজেলার কান্দিগ্রাম এলাকায়। জানা যায়, প্রায় ১৫ বছর আগে উপজেলার কান্দিগ্রাম পূর্বপাড়া এলাকার রঙ্গু মিয়ার ছেলে মো. স্বপন মিয়া (৩৮) এর সাথে পারিবারিক ভাবে একই পাড়ার মৃত সুলতান মিয়ার কন্যা মোছা. রেখা আক্তার (৩৩) এর বিবাহ হয়। সংসার জীবনে জুবায়ের হাসান ও সামিয়া নামে তাদের ১৩ বছরের একটি ছেলে ও ৮ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। স্বামী স্বপন মিয়া জুয়া খেলার অভ্যাস থাকায় সে সারা দিন-রাত জুয়া খেলায় মেতে থাকতো, আর স্ত্রী রেখা আক্তার পার্শ্ববর্তী একটি মুরগীর ফার্মে কাজ করে অতি কষ্টে সংসার চালিয়ে সন্তানদের লেখাপড়া করাতো। ছেলে জুবায়ের হাসান বর্তমানে স্থানীয় ছয়সূতী ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র আর মেয়ে সামিয়া পার্শবর্তী একটি কিন্ডারগার্টেনের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী। জুবায়ের হাসান গত বছর পিএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ ও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে। ছেলের বৃত্তি পাওয়া টাকা নিয়ে গত ২ আগষ্ট বোববার রাতে জুয়া খেলতে ঘর থেকে বাহির হয়ে পরদিন ভোরেও বাড়ীতে ফেরেনি স্বপন মিয়া। স্বামী বাড়ি না ফেরায় রেখা আক্তার ভোর ৫টার দিকে স্বামীকে খুঁজতে বের হয়। খুঁজতে খুঁজতে প্রায় ভোর ৬ টার দিকে কান্দিগ্রাম দক্ষিনপাড়া হাকিয়া বেগমের ঘরে জুয়ার আড্ডায় গিয়ে স্বামীকে পেয়ে তাদের সন্তানের বৃত্তির টাকা দিয়ে জুয়া খেলতে বাঁধা দেয়। এতে স্বামী স্বপন মিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে রেখা আক্তারকে মারতে মারতে ভৈরব-কিশোরগঞ্জ হাইওয়ে রাস্তার পূর্ব পার্শ্বে কাঠালতলী জনৈক শামীম মিয়ার টং দোকানের সামনে এনে আরো বেধর মারধর করতে থাকে। এ সময় রেখা আক্তার স্বামীকে গালাগালী করলে দোকানদার শামীম ও তার স্ত্রী রেখা বেগম স্বপন মিয়াকে সহযোগীতা করে। নির্মম আঘাত সইতে না পেরে দোকানের সামনেই রেখা আক্তার ঢলে পরে। এর পর স্বপন মিয়া আহত স্ত্রীকে নিয়ে প্রথমে তার বাড়াটিয়া বাসায় নেয়। পরে তাকে কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার রেখা আক্তারকে ভাগলপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে রেফার্ড করেন। ভাগলপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই রেখা আক্তারের মৃত্যু হয়। পরে রেখা আক্তারকে বাড়ী এনে বলা বলি করে বিষ খেয়ে রেখা আত্মহত্যা করেছে। এ সংবাদ ছড়িয়ে দিয়ে স্বপন মিয়া পালিয়ে যাওয়ার সময় এলাকাবাসী তাকে আটক করে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ আসার পর এলাকাবাসী স্বপন মিয়াকে পুলিশে সোপর্দ করে। এ ব্যাপারে মৃত রেখা আক্তারের মা মনোয়ারা (৭০), ভাই আক্কাছ, (৫২), বোন নিয়াসা (৩৫) ও রোমা (৩০) অভিযোগ করে বলেন, স্বপন মিয়া দীর্ঘদিন ধরে জুয়া খেলার টাকা জোগার করে দেওয়ার জন্য রেখা আক্তারকে মারধরসহ খুন করার চেষ্টা করতো। মানুষিক ভাবে যন্ত্রণা দিত। ঘটনার দিন সন্তানের বৃত্তির টাকা দিয়ে জুয়া খেলতে বাঁধা দেওয়ায় রেখাকে নির্মম ভাবে মারধোর করে খুন করেছে স্বপন মিয়া। মৃত্যুর পর রেখার একটি হাত ভাংগা ছিল, কান দিয়ে রক্ত ঝড়ছিল এবং গলায় আঙ্গুলের চাপ দেওয়া কালো দাগ ছিল। তারা এ হত্যাকান্ডের কঠিন বিচার দাবী করেন। ছেলে জুবায়ের হাসান বলে, বৃত্তি পাওয়া সব টাকা তার বাবা জুয়া খেলতে নিয়ে যায়। এর পর দিন মায়ের লাশ দেখতে পান। এব্যপারে স্বপন মিয়ার মা বলেন, সকালে জুয়ার আড্ডা থেকে স্বপনকে ডেকে আনে রেখা। এরপর তাদের ঝগড়া হয়। রেখাও স্বপনকে বকাবাজি করে। এর পরে রেখাকে মৃত নিয়ে আসলে আমি আমার ছেলেকে চড়-থাপ্পর মেরে শাসন করি একি করলি তুই? রেখা বেগমের পাশের রুমের ভাড়াটিয়া সবুজ খাঁ (৬০) ও তার স্ত্রী মরিয়মনেছা (৫৫) বলেন, আজ ঘুম থেকে উঠতে আমাদের কিছুটা দেরি হওয়ায় আমরা কিছুই বলতে পারিছিনা। তবে ঘুম থেকে ওঠে দেখি স্বপন রেখাকে নিয়ে হাসপাতালে যাইতেছে এবং স্বপন বলতেছে রেখা বিশ খেয়েছে। অথচ রেখার বিশ খাওয়ার কোন গন্ধ আমাদের কাছে লাগেনি। আবার প্রায় এক ঘন্টা পরেই রেখাকে মৃত নিয়ে আসে। তারা আরো বলেন, প্রায়ই স্বপন মিয়া রেখাকে মারপিঠ করত, ঘরে তালা বদ্ধ করে রাখত। কয়েক দিন আগে স্বপন রেখাকে গলা চিপে ধরে শ্বাসরোদ্ধ করে হত্যার চেষ্টা করলে আমরা বাধা দিয়ে রেখাকে রক্ষা করি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকালে রেখা আক্তারকে তার স্বামী হাসপাতালে এনে বিশ খেয়েছে বলে জানায়। পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভাগলপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে রেফার্ড করা হয় । এ ঘটনায় গত ৪ আগষ্ট সকাল সোয়া ১০ টার দিকে রেখা আক্তারের বড় ভাই মো. তাহের মিয়াকে বাদী করে ধারা : ৩০৬ পেনাল কোড-১৮৬০ আত্মহত্যা প্ররোচনার অপরাধে কুলিয়ারচর থানায় একটি মামলা রুজু করে পুলিশ। মামলা নং-০৩। মামলার তদন্তকারী অফিসার ইমদাদুল হোসাইন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সুরতহাল করার সময় লাশে কোথাও কোন প্রকার আঘাতের দাগ পাওয়া যায়নি। তবে বিষ খাওয়ায় কিছুটা আলামত দেখতে পাওয়া গেছে। কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ কে এম সুলতান মাহমুদ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অভিযুক্ত আসামী স্বপন মিয়াকে গ্রেফতার করে কিশোরগঞ্জ আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে এবং লাশ ময়না তদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। যদি মৃত্যুর কারণ হত্যা হয় তাহলে ৩০২ ধারায় হত্যা মামলা নেওয়া হবে। এলাকাবাসী বলেন, জুয়ার কারনেই জীবন দিতে হলো রেখাকে। এই জুয়ার আড্ডাস্থল হলো কান্দিগ্রাম দক্ষিনপাড়ার মৃত রহমান মিয়ার ( রেহমান) স্ত্রী হাকিয়া বেগমের বসত ঘরে ।হাকিয়া বেগমের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম ও রাজু মিয়ার নেতৃত্বে সারারাত এ আড্ডা চলে আসছে । হাকিয়া বেগমের ছেলে মালেক মিয়া হিজরা ব্যবসা করে। মালেক মিয়া দুইটা বিয়ে করেছে। সন্তানের বাবা হয়েও সে হিজরা সেজে চাঁদাবাজি করে বেড়ায়।