যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে গেলেন ৪০০ কোটির পিয়ন

জাতীয়

৪০০ কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া আলোচিত জাহাঙ্গীর আলম যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে গেছেন। আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই রবিবার রাতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। সোমবার (১৫ জুলাই) বিকালে বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জাহাঙ্গীরের বড় ভাই মো. মীর হোসেন। তিনি নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার খিলপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন।

খিলপাড়া ইউনিয়নের নাহারখিল গ্রামে জাহাঙ্গীরের চারতলা বাড়ি আছে। বিকালে ওই বাড়িতে গেলে নিচতলায় মীর হোসেনের সঙ্গে দেখা হয় এই প্রতিনিধির। বাড়ির ওপরের তিনতলা ফাঁকা পড়ে আছে। দোতলা ও তিনতলায় জাহাঙ্গীর থাকতেন। সেখানে এখন কেউ নেই। সব ফ্লোর তালাবদ্ধ অবস্থায় আছে।

জাহাঙ্গীর এখন কোথায় জানতে চাইলে মীর হোসেন , ‘জাহাঙ্গীর দুই বিয়ে করেছে। প্রথম স্ত্রীর ঘরে এক সন্তান আর দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে তিন সন্তান রয়েছে। প্রথম স্ত্রী দেশে আছে, তবে তার সঙ্গে জাহাঙ্গীরের যোগাযোগ নেই। দ্বিতীয় স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে থাকে। রবিবার রাতে তার কাছেই চলে গেছে জাহাঙ্গীর।’

মীর হোসেন আরও বলেন, ‘আমরা এতদিন জানতাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার খুবই ভালো সম্পর্ক। তার কার্যালয়ে আসা-যাওয়া আছে। হঠাৎ রবিবার প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে ৪০০ কোটি টাকার মালিক হয়ে যাওয়ার কথা শুনে লজ্জিত ও হতভম্ব হয়ে পড়ি। সন্ধ্যায় বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। তখনও জাহাঙ্গীর দেশেই ছিল। এরপর রাতে শুনেছি যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছে। তবে এখনও তার সঙ্গে আমার কথা হয়নি। তার ব্যক্তিগত সব মোবাইল নম্বর বন্ধ আছে। এজন্য যোগাযোগ করতে পারছি না।’

এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে জাহাঙ্গীর আলমের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। মোবাইলে এসএমএস ও হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা দিলেও কোনও উত্তর দেননি তিনি।

এর আগে রবিবার বিকালে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তার বাসার সাবেক এক পিয়নের অর্থসম্পদের বিষয়টি সামনে আনেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার বাসায় কাজ করেছে, পিয়ন ছিল সে, এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না। বাস্তব কথা। কী করে বানালো এত টাকা? জানতে পেরেছি, পরেই ব্যবস্থা নিয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী ওই পিয়নের পরিচয় নিয়ে ইঙ্গিত না দিলেও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, সেই পিয়নের নাম জাহাঙ্গীর আলম। তাকে নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। তার বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থেকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। জাহাঙ্গীর প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মচারী হিসেবে ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালের দুই মেয়াদের পুরোটা সময় এবং প্রধানমন্ত্রীর টানা তৃতীয় মেয়াদেরও কিছু সময় ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলে থাকার সময়ও জাহাঙ্গীর তার বাসভবন সুধা সদনে ব্যক্তিগত স্টাফ হিসেবে কাজ করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাহাঙ্গীর আলম প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মচারী হলেও নিজের পরিচয় দিতেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত বিশেষ সহকারী। এই পরিচয় ব্যবহার করে নিয়মিত সচিবালয়ে তদবির বাণিজ্য করতেন। একইসঙ্গে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের কাছে নানা তদবির করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। একই পরিচয় ব্যবহার করে তিনি নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির পদও বাগিয়ে নিয়েছিলেন। নোয়াখালী-১ সংসদীয় আসনে নিজের একটি রাজনৈতিক বলয় তৈরি করেছেন।

জেলার একটি গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, জাহাঙ্গীর বুঝতে পেরেছেন যেকোনও সময় তাকে গ্রেফতার করা হতে পারে। এজন্য যেভাবেই হোক যেকোনও উপায়ে দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করেছেন।

এদিকে, জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেইসঙ্গে তাদের হিসাব খোলার ফরমসহ যাবতীয় তথ্য আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে পাঠাতে বলা হয়েছে। রবিবার বিকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) সব ব্যাংকে এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠিয়েছে।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানে উল্লিখিত ব্যক্তিবর্গ ও তাঁদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে কোনও হিসাব থাকলে সেসব হিসাবের লেনদেন মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ২৩(১)(গ) ধারার আওতায় ৩০ দিনের জন্য স্থগিত রাখার নির্দেশনা দেওয়া হলো।

জাহাঙ্গীর আলমের যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে নোয়াখালী-১ আসনের সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহীম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে সত্য নাকি মিথ্যা, তা জানি না।’

সূত্রঃ বাংলার ট্রিবিউন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.