Sunday, December 22, 2024

মেঘালয়

ভ্রমণ

মেঘালয়ের দর্শনীয় স্থান

মেঘলায়ে রয়েছে অনেক দর্শনীয় স্থান। বাংলাদেশ থেকে মেঘালয় ভ্রমণে মূলত ডাউকি, শিলিং এবং চেরাপুঞ্জির ভ্রমণ স্থান গুলোতে পর্যটকরা ঘুরতে বেশি পছন্দ করে। এখানে জনপ্রিয় কিছু স্থানের তথ্য তুলে ধরা হলো-

মাওলাওং গ্রাম ও স্নোংপাডং গ্রাম

শিলং (Shillong) থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই গ্রামটি তকমা পেয়েছে এশিয়ার সবচেয়ে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন গ্রাম হিসাবে। খুব বেশী কিছু দেখবার এখানে না থাকলেও গাছের উপর তৈরি বাড়ি এবং সর্বত্র বাঁশের তৈরি ময়লা ফেলবার ঝুড়ি প্রাচীন জীবনকাল ও তাতে পরিচ্ছন্নতার চর্চা অনেককিছু শেখায়। ১০-১৫ মিনিট দূরে সিঙ্গেল রুট ব্রিজ আছে একটি। স্নোংপাডং গ্রামে রয়েছে উমগট নদী। ভাল সাতার জানলে স্নোরকেলিং করবার লোভ সামলানো খুব কঠিন কারণ ফিরোজা সবুজ পানিতে খালি চোখে যেভাবে নদীর অন্তঃসার দেখা যায় তা নদীতে নেমে আরও কাছে থেকে দেখতে পারলে মন্দ হয়না। যাত্রাপথে ব্রিজ পরলে নেমে ব্রিজ থেকে দাঁড়িয়ে ছবিপ্রেমিরা নদী ও নৌকার ছবি তুলবার ভাল ভিউ পাবেন।

উমিয়াম লেক

শিলং থেকে বেশ কিছু দূরে অবস্থিত উমিয়াম লেক বা বড়পানি হ্রদ। পোস্টকার্ডে দেখা স্কটল্যান্ডের হ্রদের সাথে এই উমিয়াম লেকের সাদৃশ্য পাওয়া যায়।

এলিফেন্ট ফলস

এলিফেন্ট ফলস বা হস্তি জলপ্রপাত মেঘালয়ের পর্যটকদের কাছে বিখ্যাত আকর্ষণগুলোর একটি। জলপ্রপাতের কাছে একটি হাতির সাদৃশ্য পাথর থাকবার কারণে এই নামকরণ। আফসোসের কথা ভূমিকম্পের জন্য এখন আর এই পাথরটি দেখা যায় না কিন্তু তিন ধাপে গড়া এই জলপ্রপাতটি তার নিজস্ব সৌন্দর্য দিয়ে পর্যটকদের কাছে টানতে অসফল হয়না।

নংরিয়াত গ্রাম

‘নংরিয়াত গ্রাম’ হচ্ছে চেরাপুঞ্জির একটি অংশ। শিলং থেকে ট্রেক করে এই গ্রামে যেতে সময় লাগবে ২ ঘণ্টা কিন্তু আশেপাশের দুর্দান্ত সব দৃশ্য দুই ঘন্টাকে কখনই ক্লান্তিকর হতে দিবেনা। এখানে রয়েছে ডাবল ডেকার লিভিং রুট ব্রিজ যা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না প্রকৃতির কি অপরূপ সৃষ্টি। এছাড়া পাথুরে ট্রেইল বেয়ে উঠতে পারলে দেখতে যেতে পারেন রেইনবো ফলসে। নাম না জানা অসংখ্য ঝর্না, আনাচে কানাচে ময়ূরের পাখার রঙের স্বচ্ছ হ্রদ ও সিঙ্গেল রুট ব্রিজ চোখকে আরাম দেয়। নংরিয়াতের আসল সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে ট্রেইল ধরে হাঁটা ছাড়া বিকল্প কিছু নেই।

চেরাপুঞ্জি

চেরাপুঞ্জি বিখ্যাত তার বর্ষণের জন্য। শুধু বৃষ্টি নয়, বৃষ্টিপাতের আশীর্বাদস্বরূপ এখানেও রয়েছে চোখ জুড়ানো ঝর্ণা ও রহস্যময় গুহা। চেরাপুঞ্জির জনপ্রিয় স্থান গুলোর মধ্যে রয়েছে সেভেন সিস্টার্স ফলস, নোহকালিকাই ফল, মৌসিমাই গুহা, আরওয়াহ গুহা ও পাহাড়ের সারির এক শ্বাসরুদ্ধকর দৃশ্য দেখবার জন্য মাউইন্টেইন ভিউ।

লাইতলাম ক্যানিয়ন

গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন দেখবার স্বাদ অল্পে মেটাতে চাইলে মূল শহর থেকে ৪৫ মিনিট যাত্রাপথের দূরত্বে অবস্থিত লাইতলাম ক্যানিয়ন ঘুরবার জন্য আদর্শ জায়গা। এখানকার চূড়ায় উঠে আসেপাশের গিরিখাতের এক অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়।

শিলং পিক

শিলং এর উপত্যকা ও পাহাড়ের সারির দৃশ্য এবং সতেজ বাতাস প্রাণভরে নিতে চাইলে চলে যেতে হবে শিলং পিকে। এই সর্বোচ্চ স্থান থেকে প্রায় পুরো এলাকার একটি মনোমুগ্ধকর ছবি চোখ তুলে নেয় হৃদয়ে।

গলফ লেক ও ওয়ার্ডস লেক

গলফ কোর্ট টি ব্রিটিশ আমলের তৈরি একটি গলফ খেলবার মাঠ যেখানে কাছেই রয়েছে ওয়ার্ডস লেক নামের একটি হ্রদ ও গলফ জলপ্রপাত। কোর্টটির আসেপাশে এখানে সেখানে রয়েছে পাইনের সারি। ওয়ার্ডস লেকে রয়েছে নৌকা চড়ার সুবিধা, কৃত্তিম ভাবে সাজানো সেতু ও রাজহাঁসের দল।

লেডি হায়াদ্রি পার্ক

এটি একটি বাগান যেখানে ছোট খাট একটি চিড়িয়াখানা ও জাদুঘর রয়েছে। প্রকৃতির সান্নিধ্যে এসে একটু হাফ ধরলে শিশুদের নিয়ে বেড়াবার জন্য এটি একটি চমৎকার জায়গা।
এছাড়া শিলং-এ দেখা যায় ১০০ বছরের পুরনো অল সেন্টস চার্চ, মদিনা মসজিদ, ডন ভস্কো মিউজিয়াম ও এদিক সেদিক ট্র্যাক করলে অখ্যাত গ্রামের ভিতর দিয়ে বয়ে যাওয়া অসংখ্য নাম না জানা নদী ও ঝর্না।

মেঘালয় ট্যুর প্ল্যান

মেঘালয় কিভাবে ঘুরবেন তার ৪ দিনের একটা খসড়া প্ল্যান এইখানে দেওয়া হলো। তবে আপনি আপনার মত কর প্ল্যান সাজিয়ে নিতে পারেন। আপনার হাতে কত দিন সময় আছে এবং কি কি ঘুরে দেখার ইচ্ছে তা নিজের মত করে প্ল্যান করে নিলেই সবচেয়ে ভাল হবে। আর যদি আপনি কোন ট্যুর এজেন্সির সাথে ঘুরতে যান তাহলে হয়তো আপনাকে এই নিয়ে ভাবতে হবেনা।

প্রথম দিন- (ডাউকি) :
স্নোংপাডং গ্রাম
বরহিল ও উক্রেম ঝর্না
মাওলাওং গ্রাম
উমগট নদী
লিভিং রুট ব্রিজ
ক্রাংসুরি ঝর্না
রাতে চেরাপুঞ্জিতে থাকবেন।

দ্বিতীয় দিন- (চেরাপুঞ্জি)
সেভেন সিস্টার্স ফল
মৌসিমাই গুহা
নোহকালিকাই ঝর্না
ডাবল ডেকার রুট ব্রিজ
ইকো পার্ক
মাউন্টেইন ভিউ
শিলং এ ফিরে এসে রাতে সেখানে স্টে!

তৃতীয় দিন- (শিলং)
ডাইন্থেম ঝর্না
উমিয়াম লেক
লাইতলাম
মদিনা মসজিদ

চতুর্থ দিন- (শিলং-ডাউকি)
ডন ভস্কো মিউজিয়াম
ওয়ার্ডস লেক
শিলং পিক
ক্যাথিড্রাল চার্চ
লেডি হায়াদ্রি পার্ক
ডাউকি বর্ডারের পথে এলিফেন্ট ফলস পরে। এটি প্রথম দিন বা শেষের দিন ফিরে আসবার সময় কোন এক ফাঁকে দেখে নিবেন।

ভ্রমণের সময়

পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী বৃষ্টি হয় মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে। তাই এখানকার উঁচু পাহাড়ের বুকে ঝর্নার শব্দ শুনবার জন্য বর্ষাকাল শ্রেষ্ঠ সময়। মে থেকে অক্টোবর সাধারণত এই জন্য পর্যটক এখানে বেশী আসে। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির ঠাণ্ডায় পাহাড়ের অন্য রুপ দেখা যায় কিন্তু তখন এখানে বেশ ঠাণ্ডা পরে। তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রী থেকে ১৫ ডিগ্রীর মধ্যে থাকে। পছন্দমতো সময় বুঝে শীত বা বর্ষা – যেকোন সময় ঘুরে আসতে পারেন মেঘালয়।

মেঘালয় কিভাবে যাবেন

সড়কপথে মেঘালয় (শিলং) গেলে তুলনামুল কম খরচ হয়। এক্ষেত্রে শ্যামলী পরিবহন ভিসা ব্যবস্থা সহ সরাসরি ঢাকা থেকে শিলং যাবার ও আসবার সেবা দিয়ে থাকে। আরও সাশ্রয়ে বা নিজ ব্যবস্থায় যারা ভ্রমণ করতে চান তারা বাসে, প্লেনে বা ট্রেনে করে সিলেট পৌঁছে সেখান থেকে সিএনজি বা বাসে করে তামাবিল যাবেন। সেখানে ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে ডাউকি থেকে ট্যাক্সি নিয়ে বা লোকাল গাড়ি করে সরাসরি শিলং যেতে পারেন।

কোথায় থাকবেন – হোটেল ও রিসোর্ট

পর্যটকদের বিপুল পরিমাণ আনাগোনার জন্য মেঘালয়ের আনাচে কানাচে নানা মানের নানা দামের হোটেল গড়ে উঠেছে। পুলিশ বাজার নামক জায়গাটায় বিশেষ করে নানা ধরনের অসংখ্য হোটেল দেখা যায়। ফোর স্টার বা মোটামোটি লাক্সারিয়াস হোটেল শহরে একটিই আছে যার নাম হোটেল পোলো টাওয়ার্স। ব্যাকপ্যাকারস দের জন্য রয়েছে বেশ অনেকগুলো বাজেট হোটেল। শিলং ক্লাব গেস্ট হাউস, পাইন সুইটস হোটেল, হোটেল নাইট ইন এদের মধ্যে অন্যতম।আল্পাইন কন্টিনেন্টাল হল হোটেল মাঝারি বাজেটের হোটেল। ৯০০ থেকে ১২০০ রুপির মধ্যে বাজেট হোস্টেল পাওয়া যায় যেখানে রুম শেয়ার করে গ্রুপ ট্রাভেলারসরা একসাথে থাকতে পারবেন। ১৫০০ রুপি থেকে ৪৫০০ রুপির মধ্যে হোটেল ইয়ালানা, বুল্ভারড, এবং দি ই সি হোটেলে রুম পাওয়া যাবে।

কোথায় খাবেন ও কি খাবেন

শিলং এর রেস্তোরা গুলোতে শূকরের মাংস ও মুরগীর মাংস বেশী পাওয়া যায়। হিন্দুরাষ্ট্র হওয়ায় এখানে গরুর গোশত দেখা যায় না। তবে সবখানে প্রচুর মাছ আছে যা প্রচণ্ড উপাদেয়। পুলিশ বাজার জামে মসজিদের পাশে মুসলিম রেস্তোরা সাভেরাতে হালাল গরুর গোশ পাওয়া যায়। ভিন্ন কিছু বা উপজাতীয় খাবারের স্বাদ নিতে হলে চলে যেতে হবে সিসেম নামের রেস্তোরায়। শেফস মাল্টি কুজিন মোটামোটি ধরনের বাজেটের মধ্যে ভাল খাবার এর সেবা দেয়। শিলং শহরে ফাস্টফুড চেইন শপ কে এফ সি, ডমিনস, সাবওয়ে দেখতে পাওয়া যায়। আর যেকোনো রেস্টুরেন্টেই ১৮০ থেকে ২০০ রুপির ননভেজ বা ভেজ থালি পাওয়া যায় যা একজনের খাবার হিসাবে যথেষ্ট। এছাড়া নানারকম স্ট্রিটফুড যেমন মোমো ও থোকমার জন্যও শিলং প্রসিদ্ধ।

কেনাকাটা

কেনাকাটার জন্যে সবচেয়ে ভালো জায়গা হলো শিলং এর পুলিশ বাজার। কেনাকাটা করতে হলে তাই পুলিশ বাজারের বিকল্প নেই। লোকাল খাবার যেমন কমলালেবুর মধু, দারুচিনি, চেরি ব্র্যান্ডি ইত্যাদি কিনতে হলে সোহরাবাজার নামের জায়গায় যেতে পারেন। এই স্থানটি চেরাপুঞ্জি যাবার পথে পরবে।

ভ্রমণ টিপস

  • কেনাকাটার বিষয় বা অন্য কোন সেবা নিতে চাইলে রবিবার বন্ধের দিন এই জিনিসটি খেয়ালে রাখতে হবে।
  • টুরিস্টি এলাকায় ডলার ভাঙ্গালে কম দাম পাওয়া যায় এই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে । পুলিশ বাজার এলাকায় বেশ অনেকগুলো মানি এক্সচেঞ্জের অফিস রয়েছে যা নির্ভরযোগ্য। ডলার ভাঙ্গানোর রশিদ সাথে রাখা ভাল কেননা অনেকসময় ইমিগ্রেশনে দেখতে চাইতে পারে।
  • যেহেতু মেঘালয়ে প্রায় সবসময় বৃষ্টি হয় এবং পাহাড় বেয়ে নেমে বেশিরভাগ জায়গায় ঝর্না দেখতে যেতে হয় তাই ভ্রমনে সাথে ছোট ছাতা, হাল্কা রেইনকোট এবং ভাল গ্রিপের ট্র্যাকিং সু বা সাধারণ জুতা নেওয়া ভাল।
  • সময় হাতে বেশী পাবার জন্য সকাল সকাল ইমিগ্রেশন অফিসে থাকবার চেষ্টা করুন। ইমিগ্রেশন অফিস খুলবার সময় সকাল ৯টা তবে অনেক সময়ের আগেও খুলে যায়। আগেরদিন রাতে সিলেট রউনা হয়ে সকালের প্রথম ভাগে বর্ডার পার হতে পারলে সেই দিনই বেশ কিছু স্থান ঘুরে দেখতে পারবেন।

জরুরী ফোন নাম্বার
শিলং পুলিশ সদর দফতর – ৯১ ৩৬৪ ২২২৪৪০০
মেঘালয় পর্যটন দফতর- ৯১ ৩৬৪ ২২৬২২০

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.