মোঃ শহীদুজ্জামান রনি: কুমিল্লা মেঘনার এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী বাজার, খিরাচক বাজার এখন বিলুপ্তির পথে। মেঘনা থেকে ভাটেরচর ঢাকাগামী হাইওয়ে সড়কের সাথে সংযুক্ত, ভাওরখোলা কদমতলী থেকে মির্জানগর হয়ে গোবিন্দপুর ইউনিয়নের সেননগর ও আলীপুর ঘাটে যাওয়ার মাঝামাঝি এই খিরাচক বাজার। আজ থেকে ২০/২৫ বছর আগে কাঠ বাঁশ সহ ঘরবাড়ি মেরামতের বিভিন্ন আসবাবপত্র ও নৌকা বিক্রেতা হিসেবে একটি স্বনামধন্য বাজার হিসেবে পরিচিত ছিল এই খিরাচক বাজার। সপ্তাহে ২ টি হার্ট হতো এই বাজারে শুক্রবার কাঠ বাঁশ ও মঙ্গলবার নৌকা। মেঘনার মধ্যে সর্ববৃহৎ বাজার ছিল ২টি চন্দনপুর বাজার ও খিরাচক বাজার। ১৫/২০ বছর আগে এই হাটের ইজারা হতো আড়াই-তিন লক্ষ টাকা, সেই বাজার গত অর্থ বছরে দেড় লক্ষ টাকা ইজারা হয়েছে। বিলুপ্তির কারণ হিসেবে দেখা যায় বাজারের পশ্চিমে কদমতলা থেকে বাজারে আসার রাস্তাটি বেহাল অবস্থা ও ব্রিজ ভেঙে ঝুলে আছে, পূর্ব পাশে সেননগর থেকে খিরাচক বাজারে আসার ব্রিজটিও অর্ধেক বাঁশের সাঁকো দিয়ে তৈরি, অর্ধেক চারটি রডের উপরে দাঁড়িয়ে আছে যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ যে কোন সময় ভেঙে পড়তে পারে। যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম বাজারের দুইপাশের দুই ব্রিজ ভাঙা ও রাস্তার বেহাল অবস্থা। এলাকাবাসী অনেকে জানান এই ব্রীজ নিয়ে এ যাবৎ অনেক জাতীয় পত্রিকায় নিউজ হয়েছে কিন্তু কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি। বালু ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন বলেন আমরা আগে ব্রিজের নিচ দিয়ে আমাদের বালুর বোট দিয়ে বালু ব্যবসা করেছি, কিন্তু এখন এই ব্রিজের নিচ দিয়ে একটি ট্রলার পর্যন্ত যায়না কখন জানি ব্রিজ ভেঙে কি দুর্ঘটনা ঘটে। খিরাচক গ্রামের মোঃ রমিজ উদ্দিন বলেন কি বলবো বুড়া হয়ে ঠেকছি, দূরের কোন বাজারে যেতে পারিনা আমাদের কপাল মন্দ, ভালো একটা জায়গায় আত্মীয়তা পর্যন্ত করা যাচ্ছে না, দুই পাশে দুই ভাঙা ব্রিজের মধ্যখানে আমরা আছি, মেঘনায় অনেক জায়গায় যেখানে রাস্তা নাই কিন্তু ব্রিজ আছে, আর আমাদের এমন একটা বাজার বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে রাস্তা ও ব্রিজের কারণে, এখন যদি আল্লাহ দেখে আমাদের কষ্ট। মোঃ আবুল কাশেম জানান আগে এই বাজারে সপ্তাহে দুইদিন বাজার হতো এবং এমন লোকজনের সমাগম হত, কোনো একটা লোক হারিয়ে গেলে তাকে মাইকিং ছাড়া খুঁজে পাওয়া সম্ভব হতো না, এখন বাজার হয় কিন্তু লোক থাকে না। এখন শুক্রবার কাঠ বিক্রি হয় আর মঙ্গলবারে নৌকা বিক্রি হয় আশেপাশের কিছু লোক আসে। খিরাচক বাজারের ইজারাদার আব্দুল রব মিয়া জানান বাজারের ডাক এনেছি ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকায়, এই টাকা কিভাবে উঠাবো বুঝে উঠতে পারছিনা। বাজারটির অবস্থান গোবিন্দপুর ইউনিয়ন ও ভাওরখোলা ইউনিয়ন এর মাঝামাঝি, বাজারটি ভাওরখোলা ইউনিয়নের মধ্যে অবস্থিত। উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ সাইফুল্লাহ মিয়া রতন শিকদার এর সাথে কথা বলে জানান. এই বাজার শুদু ব্রিজের কারণে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এমনটা সঠিক নয় কালের পরিবর্তনে কিছুটা বিলুপ্ত হচ্ছে , আগে যোগাযোগ ব্যাবস্থা এতো ভালো ছিল না লোকজন নৌকায় চলাচল করতো তাই এই হাট একটু ভালো চলতো কিন্তু এখন রাস্তাঘাট উন্নয়ন হয়েছে মানুষেরও উন্নয়ন হয়েছে আগে মানুষ কাঠের ঘর দিত এখন বিল্ডিং দেয় তাই এই বাজারের এই অবস্থা । উপজেলা নির্বাহি অফিসার প্রবীর কুমার রায় এর সাথে কথা বলে জানান ব্রিজগুলো ঠিক হলে বাজারটি মেরামত করবো বাজারের বরাদ্দ আছে ব্রিজের জন্য কাজ করা যাচ্ছে না। উপজেলা প্রকৌশলী খন্দকার মাহমুদুল আশরাফ এর সাথে কথা বলে জানান ব্রিজের কাজ প্রক্রিয়াধীন আমাদের এক্সচেঞ্জ অফিসার সহ ব্রিজগুলো পরিদর্শন করে গেছেন, এখন ডিজাইনের কাজ চলমান খুব শীঘ্রই ব্রিজগুলোর টেন্ডার হবে ।