মোঃ আলাউদ্দিন,কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার নৌপথে দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে চলছে চাঁদাবাজির রমরমা বাণিজ্য। প্রতিদিন নৌযান চালকদের কাছ থেকে পথে পথে চাঁদা আদায় করা হলেও, এই অনিয়ম বন্ধে প্রশাসনের কার্যকর তৎপরতা নেই বললেই চলে। চালকদের মতে, চাঁদাবাজি এখন নিয়মিত ব্যবসায় পরিণত হয়েছে, কিন্তু কোনো প্রতিকার নেই। অসহায়ের মতো তারা কষ্টার্জিত অর্থ হারাতে বাধ্য হচ্ছেন।
গত বুধবার (১৩ নভেম্বর) সরেজমিনে মেঘনার মুগারচর ও কাঠালিয়া ব্রিজসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নৌপথে যাতায়াত করা চালকদের মধ্যে আতঙ্ক ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। বাল্কহেড চালক মো. সজিব সহ কয়েকজন চালক জানান, “প্রতিবার সুনামগঞ্জ থেকে দাউদকান্দি যাওয়ার পথে প্রায় ১০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। বিশেষ করে মুগারচর বা কাঠালিয়া ব্রিজের নিচে ৩,৮০০ টাকা দিতে বাধ্য করা হয়। টাকা না দিলে মারধর করা হয়।” চালকদের ভাষ্যমতে, এই চাঁদার একটি বড় অংশ পুলিশের উচ্চমহলে পৌঁছে যায় বলে জানানো হয়, যা চালকদের এই অবিচার মেনে নিতে বাধ্য করছে।
অন্যদিকে প্রশাসনের নীরব ভূমিকা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ রয়েছে। তাদের মতে, প্রশাসনের সহায়তা ছাড়া এত বড় পরিসরে চাঁদাবাজি চালানো সম্ভব নয়। কিছু অসাধু কর্মকর্তার মদদে এই চাঁদাবাজি দেড় দশক ধরে অব্যাহত আছে।
নৌযান মালিক ও ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, প্রশাসন চাইলে এই চাঁদাবাজি সহজেই বন্ধ করতে পারে। তবে দীর্ঘদিন কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় নৌপথ দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। তারা দ্রুত প্রশাসনের কার্যকর হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন, যাতে নৌযাত্রা ও ব্যবসা নির্বিঘ্নে চালানো সম্ভব হয়। বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে, সাধারণ চালক ও ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
মেঘনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল জলিল বলেন, “চাঁদাবাজির সঙ্গে পুলিশের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। চালকরা যদি এ ধরনের কোনো ঘটনা বলে থাকেন, তারা থানায় এসে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ জানাতে পারেন। তবে এই ধরনের অভিযোগের বিষয়ে নৌপুলিশই দায়িত্বপ্রাপ্ত। আমাদের থানার এখতিয়ারের বাইরে হওয়ায় বিষয়টি তাদেরই দেখতে হয়।”
চালিভাঙ্গা নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. আজমগীর হোসাইন বলেন, “নৌপথে চাঁদাবাজিসহ যে কোনো অনিয়মের বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করি। অভিযোগকারীরা চাইলে সরাসরি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। আমি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখব এবং অদৃশ্য এই চক্রটিকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করব।”