![](https://dainikajkermeghna.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
ফ্রিল্যান্সারদের জন্য ভিসা পাওয়া একটু ঝামেলা। নিজে নিজে করতে গেলে ভিসা পাবো কি পাবো না, তাই এজেন্সির হেল্প নেই। ১০ দিনের মধ্যে ভিসা দেওয়ার কথা থাকলেও প্রায় ২২ দিন পর ভিসা দেয়। সিঙ্গাপুরের ই-ভিসা। ফী নেয় চার হাজার টাকা। এয়ার টিকেট নিজে নিজেই কিনে নেই। প্রায় ২৭৭ ডলারের মত লাগে রিটার্ন টিকেট। স্কুট এয়ারলাইন্সে। কিছু দিন আগে টিকেট কিনে রাখলে আরো কম খরচ হওয়ার কথা।
৩১ তারিখ রাত নয়টা ১৫ তে ফ্লাইট ছিল। বাসা থেকে বের হয়েছি সন্ধ্যা ৬টার পর। সময় মত বের হলে উবারও এক মিনিটের মধ্যে চলে আসে। ৭টার মধ্যে এয়ারপোর্ট পৌঁছে যাই। গিয়ে দেখি বোর্ডিং পাস দেওয়া হচ্ছে। বোর্ডিং পাস নিয়ে নেই। টিকেটও দেখানো লাগে নাই। শুধু পাসপোর্টটা এগিয়ে দিলেই বোর্ডিং পাস দিয়ে দেয়। আমি বলেছি সম্ভব হলে উইন্ডো সিট দেওয়ার জন্য। উইন্ডো সিটই দিয়েছে।
ইমিগ্রেশন ফরম পূরণ করে ইমিগ্রেশনের জন্য গেলাম। সব কিছু চেক করতে করতে ইমিগ্রেশন অফিসার বলল স্টিকার ভিসা নিলে ভালো হতো। বলল আপনার ভালোর জন্যই বলছি। আমি বললাম ঠিক আছে। এরপর কোন ভিসা করলে স্টিকার ভিসা নিব।
ইমিগ্রেশন শেষে একটু হাঁটাহাঁটি করলাম। এরপর দেখি বোর্ডিং এর জন্য ডাকল। গেলাম।
সময় মত বিমান টেকঅফ করল। প্রায় চার ঘণ্টার মত ফ্লাইট। ল্যান্ড করে টার্মিনালে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সাড়ে চার ঘণ্টার মত লেগে যায়। স্কুট এয়ারলাইন্সে কোন খাবার দেয় না। এক্সট্রা কিনতে হয়। ১৪ ডলার হচ্ছে হচ্ছে সাধারণ একটা মিল। পানিও কিনে খেতে হয়। ৪ ডলার! কোন কিছুই খাইনি। যদিও আমার ব্যাগে চকলেট ছিল। কিন্তু অলসতা করে খাওয়া হয়নি। ঘুমিয়েছি।
১ এ নভেম্বর
লোকাল টাইম সকাল সাড়ে তিনটার দিকে ইমিগ্রেশন এরিয়ায় এলাম। ইমিগ্রেশন ফরম পূরণ করে ইমিগ্রেশন ডেস্কে গেলাম। জিজ্ঞেস করল কত দিন থাকব, রিটার্ণ টিকেট কেটেছি কিনা। এরপর চেক করল। তারপর বলল হোটেল বুকিং করেছি কিনা, তা চেক করল। এরপর এরাইভাল সীল মারল এবং ইমিগ্রেশন ফরমের একটা কপি আমাকে রিটার্ণ দিল।
ইমিগ্রেশন পার হয়ে বের হওয়ার পর দেখলাম ম্যাগডোনান্ড। আমার খিদার কথা মনে পড়ল। খেয়ে নিলাম। এরপর এয়ারপোর্ট থেকে বের হতে হবে। ট্যাক্সি এক্সপেন্সিভ। আমার প্ল্যান হচ্ছে মেট্রো এবং পাবলিক বাস ব্যবহার করা। এদিক সেদিক খোঁজা খুঁজি করে মেট্রো স্টেশন বের করলাম। এটা হচ্ছে টার্মিনাল দুই এর ডান দিকে। গিয়ে দেখি সব বন্ধ। ঐখানে কয়েকজন দাঁড়িয়ে ছিল। একজনকে জিজ্ঞেস করলাম মেট্রো কখন চালু হবে। উনি বাংলায় বলল সাড়ে পাঁচটায়। বাংলাদেশী! তখন ৫টা বাজে। আমি ভাবলাম দাঁড়িয়ে না থেকে গিয়ে কফি খেয়ে আসি। স্টারবাক্স দেখে এসেছি টার্মিনাল দুই এর দ্বিতীয় তলায়। সেখানে গিয়ে বসে বসে কফি খেলাম।
মেট্রো ব্যবহার করতে হলে টিকেট লাগবে। টিকেট কাউন্টার বন্ধ। ৮টার আগে খুলবে না। পাশেই ছিল একটা বুথ। ez card এর বুথ। দেখলাম ঐখান থেকে ৩০ ডলারে তিন দিনের জন্য বাস এবং মেট্রো ব্যবহারের কার্ড পাওয়া যাবে। ১০ ডলার এক্সট্রা নিবে। কার্ড ফেরত দিলে ১০ দশ ডলার ফেরত দেওয়া হবে। কার্ড নেওয়া খুবি সিম্পল। ট্যুরিস্ট দের জন্য এক দিন, দুই দিন এবং তিনদিনের অপশন রয়েছে। আমি তিন দিনের কার্ড নিয়ে নিলাম একটা। এরপর আমার ডেবিড কার্ড দিয়ে পেমেন্ট করার পর কার্ড দিয়ে দিল। তা দিয়ে মেট্রোতে উঠে পড়লাম।
আমার হোটেল হচ্ছে চায়না টাউনে। কিন্তু হোটেলে চেক ইন টাইম হচ্ছে ২টায়। এত সকালে সবই বন্ধ। অন্য কোন প্ল্যানও নেই। এক্সপো নামক স্টেশনে নেমে গেলাম। সেখানের কাছেই ছিল পোর্ট ক্যানিং পার্ক। তখন সম্ভবত ছয়টা। কিছু মানুষ ব্যায়াম করছিল। পুরা পার্ক হেঁটে দেখলাম। আমার নিজেরও ব্যায়াম হয়ে গেলো। পিঠে ব্যাকপ্যাক নিয়ে হাঁটতে কষ্টই হচ্ছিল। পার্কে হেঁটে বের হয়ে পরলাম। মেট্রো স্টেশনে এসে চায়না টাউনে আসার মেট্রোতে উঠে পরলাম। তখনো সব বন্ধ। অল্প কয়েকটা খাবার দোকান ছাড়া। আমি হাঁটতে হাঁটতে হকার সেন্টারে চলে গেলাম। ঐখানে বসে সুগার ক্যান খেলাম। মিক্স ফ্রুট বিক্রি করছিল প্লাস্টিকের মগে করে। একটা নিয়ে নিলাম। এরপর আবার হাঁটা শুরু করলাম। অফিস টাইম। সবাই সুটেড বুটেড হয়ে যে যার গন্তব্যে যাচ্ছে। ট্যুরিস্ট ও রয়েছে অনেক। হাঁটতে হাঁটতে ম্যারিনা এরিয়ায় চলে এলাম। দূর থেকে ম্যারিনা বে স্যান্ডস দেখে যেতে লাগলাম। দেখলাম গার্ডেনও। ম্যারিনা বে স্যান্ডস, সিঙ্গাপুর ফ্লায়য়ার, গার্ডেন সব কাছা কাছি।
ম্যারিনা বে স্যান্ডস এর সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় সিকিউরিটি জিজ্ঞেস করল কোথায় যাবো। বললাম গার্ডেনে। এরপর আমাকে রাস্তা দেখিয়ে দিল। গার্ডেন এরিয়া অনেক বড়। অনেক সুন্দর করে সব সাজানো। রয়েছে অনেক অনেক ভাস্কোর্য। পুরা এরিয়ায় ঘুরতে কোন টিকেট লাগে না। কিন্তু OCBC স্কাই ওয়েতে উঠতে গেলে ৮ ডলার লাগে। টিকেট কেটে উপরে উঠে গেলাম। উপর থেকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগে।
গার্ডেন এরিয়ায় এছাড়া রয়েছে ফ্লাওয়ার ডোম এবং ক্লাউড ফরেস্ট, যে গুলোর জন্য লাগে ৩০ ডলার এক সাথে।
ফ্লাওয়ার ডোম এবং ক্লাউড ফরেস্ট দুইটাই এয়ার কন্ডিশন্ড পুরা এরিয়া। কাঁচের ঘরের ভেতর শত প্রজাতির ফুল অন্য অন্যান্য গাছ। এছাড়া রয়েছে সুন্দর কত গুলো ভাস্কোর্য। ভালোই লাগে। কি সুন্দর ফুলের ঘ্রাণ। মন ভালো করে দেওয়ার মত। ফ্লাওয়ার ডোমে অনেকক্ষণ থেকে বের হলাম। এরপর গেলাম ক্লাউড ফরেস্ট। ঢুকার মুখে রয়েছে বিশাল আর্টিফিশিয়াল ঝর্ণা।
![](https://jakir.me/wp-content/uploads/2018/11/DSC_7766.jpg)
ফ্লাওয়ার ডোমের ভেতর কিছু গাছ
ক্লাউড ফরেস্টেও রয়েছে নানা প্রকারের ফুল গাছ। রয়েছে অনেক ছোট ছোট ঝর্ণা। ক্লাউড ফরেস্ট নামের সাথে মিল রেখে কিছু কিছু যায়গা থেকে ধোয়া উঠে। এত সুন্দর সব ফুল ফুটে রয়েছে, ভালো লাগে দেখতে। ক্লাউড ফরেস্টের উপরে হাঁটার রাস্তা রয়েছে। যা দিয়ে সিঙ্গাপুরের স্কাই ভিউ দেখা যায়।
![](https://jakir.me/wp-content/uploads/2018/11/DSC_7798.jpg)
ক্লাউড ফরেস্টের আর্টিফিশিয়াল ঝর্ণা
ক্লাউড ফরেস্টে – এই অংশটা সামনে থেকে অনেক বেশি সুন্দর।
![](https://jakir.me/wp-content/uploads/2018/11/DSC_7842.jpg)
ফ্লাই ট্র্যাপ – কি ভয়ঙ্কর গাছ। বড় হলে সম্ভবত মানুষকেও খেয়ে ফেলত
![](https://jakir.me/wp-content/uploads/2018/11/DSC_7851.jpg)
ক্লাউড ফরেস্টের ভেতর হাঁটার রাস্তা এবং বাহিরের ভিউ
এসব ঘুরতে ঘুরতে দুইটা বাজল। আমি মেট্রোতে করে ফিরে এলাম চায়ানা টাউনে। চায়না টাউন পয়েন্টে বসে খাবার খেয়ে নিলাম। আমার তখনো সিম কেনা হয়নি। Seven-Eleven সুপারশপ গুলোতে সিম পাওয়া যায়। ট্যুরিস্ট সিম ১২ ডলারে ৭ দিনের জন্য ১০০ জিবি ডেটা, ৫০০ মিনিট লোকাল কল এবং ২০ মিনিট ইন্ট্যারন্যাশনাল কল। দারুণ প্যাকেজ।
সকাল থেকে মেঘলা ছিল আকাশ। বৃষ্টি ছিল না। এখন বৃষ্টি হচ্ছে। ঘুড়ি ঘুড়ি বৃষ্টি। হোস্টেলে এলাম। চেকইন করে যখনই বিছানা দেখলাম, শুয়ে পড়লাম। সারাদিন এত বেশি হেঁটেছি যে দুই পা ব্যথা হয়ে রয়েছে। রাতেও তো ঘুমানো হয়নি ঠিক মত। ঘুম থেকে উঠেছি ১০টার দিকে। আমি যেখানে থাকি, তা থেকে বের হলেই ফুডকোট। হেঁটে হেঁটে দেখলাম কি খাওয়া যায়। হালাল খাবার খোঁজার জন্য একটু হাঁটতে হলো। একটা ফুড কোটে গিয়ে সী ফুডের একটা আইটেম অর্ডার দিলাম। অত বেশি টেস্ট ছিল না তারপরও খেয়ে হোটেলে ফিরে এলাম।
২ নভেম্বর
দুই তারিখ সকালে ঘুম থেকে উঠে চলে গেলাম বোটানিক্যাল গার্ডেন। মেট্রোতে করে। মেট্রো স্টেশন থেকে বের হলেই বোটানিক্যাল গার্ডেনের গেট। মোটামুটি বড় সড় এরিয়া। সকাল বেলা দেখলাম সবাই ব্যায়াম করতে। খোলা মাঠে ব্যায়ম করে এবং গার্ডেনের ভেতর দিয়ে রাস্তা গুলোতে মানুষ দোড়াদৌড়ি করে। অনেকে আবার এক সাথে ইয়োগা করে।
![](https://jakir.me/wp-content/uploads/2018/11/DSC_7942.jpg)
বোটানিক্যাল গার্ডেন ও এর ভেতর একটা পাবলিক থিয়েটার
![](https://jakir.me/wp-content/uploads/2018/11/DSC_7943.jpg)
গ্রুপ ইয়োগা
মোটামুটি বড় সড় এরিয়া নিয়েই বোটানিক্যাল গার্ডেন। ভেতরে লেক রয়েছে। অনেক প্রজাতির প্রাণী দেখা যায় এর ভেতর। কাওসার ভাই এসেছে উনার ফ্যামিলি নিয়ে ঘুরতে। রাতে কথা হলো উনার সাথে। আমরা এক সাথে ঘুরব। বোটানিক্যাল গার্ডেন থেকে চলে গেলাম উনি যেখানে থাকে, The Glades। আবাসিক এরিয়া। ভেতরে কি সুন্দর একটা সুইমিং পুল রয়েছে। আসলে একটা না, অনেক গুলো। বাচ্চাদের জন্য আলাদা।
কাওয়াসার ভাই, ভাবী, জারা এবং সারা সহ আমরা গেলাম চিড়িয়াখানায়। দুপুরের দিকে গিয়েছি। যাওয়ার পর দেখি বৃষ্টি শুরু। কিছুক্ষণ বৃষ্টি কমার জন্য অপেক্ষা করলাম আমরা। কিন্তু বৃষ্টি কমার কোন লক্ষণ দেখিনি। ঐখানে পলেথিনের জামা পাওয়া যায়। কি নাম বলে ঐটার, জানা নেই। যেটা গায়ে দিয়ে আমরা হাঁটতে লাগলাম।
আমরা টিকেট কাটার সময় ট্রামের টিকেট কেটে নেই। চিড়িয়াখানার ভেতর দিয়ে ঘুরায়। বিভিন্ন স্টপে থামায়। কিছুক্ষণ হেঁটে দেখার পর আমরা ট্রামে উঠে পড়লাম। বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী রয়েছে। খুব একটা বড় না চিড়িয়াখানাটি। ২ ঘণ্টার মধ্যেই ঘুরা শেষ হয়ে যায়।
আমরা চিড়িয়াখানা থেকে বের হয়ে ফুডকোর্টে বসে খাওয়া দাওয়া করি। নাইট সাফারির জন্য টিকেট চিড়িয়াখানার টিকেটের সাথে কেটে নেই। নাইট সাফারি চিড়িয়াখানার পাশেই। নাইট সাফারিতে উঠার জন্য অনেকেই দেখি লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল। আমরাও লাইনে দাঁড়ালাম। এক সময় উঠে পড়লাম। প্রায় আধা ঘণ্টার একটা রাইড। ট্রামে করে ঘুরায় আস্তে আস্তে। বনের ভেতর দিকে। বিভিন্ন প্রাণী দুই পাশে। বলা যায় ন্যাচারাল পরিবেশে। চিড়িয়াখানা থেকে নাইট সাফারি বেশি ভালো লাগছিল আমার কাছে।
নাইট সাফারি শেষে আমরা যাই Gardens by the Bay তে। রাতে সব কি সুন্দর লাইটিং করা। দেখতে ভালো লাগছিল। কিছুক্ষণ সেখানে থেকে গেলাম Marina Bay Sands Hotel এ। ঐটার রুপটপ থেকে সব কিছু সুন্দর ভাবে দেখা যায়। রুপটপ হচ্ছে ৫৭ তলার উপরে। তার দুইটা অংশ। একটা হচ্ছে বার এরিয়া। আরেকটা সুইমিং পুল। সুইমিং পুল শুধু হোটেলের গেস্টদের জন্য। বার এরিয়া সবার জন্য এক্সেসেবল। যদিও আমাদের সাথে বাচ্চা থাকায় ঐখানে প্রবেশ করতে দেয়নি। আমরা এরপর নিচে নেমে আসি। কাওসার ভাইয়েরা উনাদের হোটেলে যায়। আমি যাই আমার হোস্টেলে।
![](https://jakir.me/wp-content/uploads/2018/11/DSC_7971.jpg)
সন্ধ্যার পর ম্যারিনা এরিয়া
![](https://jakir.me/wp-content/uploads/2018/11/DSC_8015.jpg)
৫৭ তলা থেকে সিঙ্গাপুর
৩ এ নভেম্বর
৩ তারিখ সকালে ঘুম থেকে উঠে চলে গেলাম সিঙ্গাপুর ফ্লায়ারে। দূর থেকে কত ছোটই না দেখাচ্ছে। কিন্তু কাছে গেলে বোঝা যায় কত বিশাল। দূর থেকে মনে হয় স্থির। আসলে মুভিং। ফ্লায়ারে উঠার জন্য টিকেট কেটে নিলাম। এরপর গিয়ে লাইনে দাঁড়ালাম। ১০ মিনিটের মত লাইন। এরপর উঠে পড়লাম ফ্লায়ারে। মোট ২৮টা ক্যাপসুল রয়েছে। প্রতিটাতে ৮ জন করে উঠা যাবে। সবাই সুন্দর ভাবেই হেঁটে চারপাশ দেখার মত স্পেস রয়েছে ভেতরে। আস্তে আস্তে উপড়ের দিকে আমরা উঠতে লাগলাম। চারপাশ দেখতে দেখতে। ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ। পুরা সিঙ্গাপুরের স্কাই ভিউ দেখা যাচ্ছিল।
![](https://jakir.me/wp-content/uploads/2018/11/DSC_8077.jpg)
ফ্লায়ার থেকে সিঙ্গাপুরের একাংশ
![](https://jakir.me/wp-content/uploads/2018/11/DSC_8080.jpg)
ফ্লায়ারের ক্যাপচুল ও সিঙ্গাপুর
এরপর গেলাম অর্চাড রোড। মুভি দেখতে। Shaw Theatre Lido থিয়েটারে। আইম্যাক্স মুভি থিয়েটারে মুভি দেখার এক্সপেরিয়েন্স নেওয়ার জন্য। এছাড়া আমার Bohemian Rhapsody মুভিটা দেখার ইচ্ছে ছিল। দুইটাই এক সাথে হয়ে যাছে। মুভিটি মূলত Freddie Mercury এর বায়োগ্রাফি। Queen ব্যান্ডের ভোকাল। Bhohemian Rhapsody গানটা কত যে শুনছি। সেখান থেকেই মুভিটি দেখার আগ্রহ।
আইম্যাক্সের এক্সপেরিয়েন্স দারুণ। অনেক বিশাল স্ক্রিন ছিল। সাউন্ড সিস্টেম খুবি সুন্দর। দেশে যদি আইম্যাক্স থিয়েটার থাকত, সব গুলো মুভি হয়তো সেখানেই দেখতাম।
মুভি দেখে বের হয়েছি। অর্চাড রোড হেঁটে হেঁটে দেখছি। দুই পাশেই অনেক গুলো শপিং মল। এক একটা এক এক রকম করে সাজানো। রাস্তাটাও সাজানো। আপসুস হচ্ছিল যে এটা আমার শহর না! এখানে আমি একজন পরিদর্শক। এসব ফেলে চলে যেতে হবে। হাঁটতে হাঁটতে অ্যাপল স্টোর চোখে পড়ল। গেলাম। এখানে একদিনে যত গুলো আইফোন বিক্রি হয়, আমি জানি না বাংলাদেশে ৬ মাসে এত গুলো বিক্রি হয় কিনা! iPhone Xs Max কিনতে ইচ্ছে করছিল। ওরা GST রাখে ৭%। ট্রাভেলাররা যা আবার এয়ারপোর্টে ফেরত পায়। তবে তার জন্য পাসপোর্ট লাগবে। পাসপোর্ট সাথে ছিল না। ভাবলাম পরে আসব।
চলে গেলাম আরব স্ট্রিটে। আমার ল্যাম্ব চপ খেতে ইচ্ছে করছিল। ঐখানে কাবাব হাউজ ছিল একটা। অর্ডার দেই। আমি ভাবলাম ল্যাম্ব চপ বলতে শুধু ল্যাম্ব চপই সার্ভ করবে, তাই সাথে খাওয়ার জন্য রুটি অর্ডার দেই। পরে সার্ভ করার সময় দেখি সাথে রাইস ও দিল। রুটিটা বাড়তি হয়ে গেলো! খাবার খুব একটা ভালো ছিল না। ওরা মাংস বেশি পুড়ে ফেলছে। খেতে খেতে কাওসার ভাই এর সাথে কথা হচ্ছিল। উনি ফোন কিনবে। আমি বললাম আমিও কিনব। আমি আমার হোস্টেলে গিয়ে পাসপোর্ট নিয়ে রওনা দেই। সিঙ্গাপুর ছোট, এছাড়া কোন জ্যাম নেই। এত সুন্দর যাতায়াত ব্যবস্থা। যে কোন জায়গায় আমার মনে হয় ১ ঘণ্টারও কম সময়ে পৌঁছে যাওয়া যায়।
উনি কিনল iPhone Xs আর ঘড়ি। আমি কিনলাম iPhone Xs Max। টাকা দিয়ে গেলে আমার কার্ড ডিক্লাইন দেখাচ্ছিল। SCB এর ERQ একাউন্ট খুললাম যেন বিদেশ গিয়ে কোন ঝামেলা ছাড়াই ঘুরাঘুরি করা যায়। কিন্তু ঝামেলা হচ্ছেই। কিছু যায়গায় কার্ড দিয়ে পেমেন্ট করা যায়, কিছু জায়গায় করা যায় না। পরে কাওসার ভাই আমার পেমেন্ট করে দিল। আমরা এরপর আবার চলে গেলাম আরব স্ট্রিটে। ঐখানে একটা রেস্টুরেন্টে বসে খাওয়া দাওয়া করলাম। এরপর কাওসার ভাইয়েরা উনাদের হোটেলে চলে যায়। আমি আমার হোস্টেলে ফিরি।
৪ এ নভেম্বর
৪ তারিখ সকালে চলে গেলাম Southern Ridges এ। এটি হচ্ছে বনের উপর দিয়ে হাঁটার রাস্তা। অনেক সুন্দর। হাঁটতে হাঁটতে গেলাম Telok Blangah Hill Park এর দিকে। সবাই জগিং করছিল। পার্কের বিভিন্ন জায়গায় পানি, ড্রিঙ্কস এর অটোমেটেড বুথ রয়েছে। একটা বুথের সামনে আমি দাঁড়িয়েছি পানি কেনার জন্য। তো আমি টাকা বের করেছি পানি নেওয়ার জন্য, কিন্তু ঐটাতে টাকা সাপোর্ট করে না। শুধু কার্ড দিয়ে পে করা যায়। সম্ভবত সিংগাপুরের একজন আমার পানির টাকা পে করে দিতে চাচ্ছিল। আমি ধন্যবাদ দিয়ে বললাম আমার কাছে কার্ড আছে। গাড়ি বা মেট্রোতে উঠার জন্য যে কার্ড, সে একই কার্ড দিয়ে এখানেও পে করা যায়। প্রথম দিন ez card যেটা নিয়েছি, ঐটা। ঐটা দিয়ে তিন দিন যে কোন পাবলিক বাসে রাইড দিতে পারছিলাম। এরপর টাকা লোড করে নিয়েছি। তাও অটোমেটেড। নিজের ডেভিড কার্ড থেকে ঐটাতে সিঙ্গাপুরের ডলার লোড করে নিয়েছি। সেখান থেকেই পে করা গিয়েছে।
![](https://jakir.me/wp-content/uploads/2018/11/IMG_0188.jpg)
Southern Ridges
পার্ক থেকে যাবো ক্যাবল কারে উঠার জন্য। তার জন্য বাসে করে যেতে হবে। কাছা কাছি বাস স্টেশনে হেঁটে চলে গেলাম। এরপর বাসে উঠে পড়লাম। গুগলে যেখানে নামতে বলল, তা একটা বাস স্টেশন। ঐখানে আবার অনেক গুলো ফুডকোর্টও রয়েছেল। রয়েছে হালাল ফুড কোর্ট। আমি একটাতে বসে চিকেন রাইস অর্ডার করে খেয়ে নিলাম। এরপর কাছা কাছি ক্যাবল কার স্টেশনে গেলাম টিটেক কাটার জন্য। ক্যাবল কার মূলত সেন্টোসাতে যাওয়া আসা করে। জন প্রতি ৩৫ ডলার। আর আনলিমিটেড ক্যাবল কার রাইড হচ্ছে ৫৫ ডলার। ভাবলাম আনলিমিটেডটাই নেই। নিয়ে উঠে পড়লাম ক্যাবল কারে।
![](https://jakir.me/wp-content/uploads/2018/11/IMG_0214.jpg)
ক্যাবল কার থেকে সিঙ্গাপুরের একাংশ
উপর থেকে অনেক সুন্দরই দেখাচ্ছিল সব। আমার সাথে একই ক্যাবিনে উঠেছে সিঙ্গাপুরের এক ফ্যামিলি। আমি মোবাইল বের করে ছবি তুলতেছিলাম। জিজ্ঞেস করল আমার ছবি তুলে দিবে কিনা। আমি বললাম, দিন। আমার ছবি তুলে দিল। এরপর সেন্টোসাতে কি কি করা যায়, কি কি রয়েছে এসব নিয়ে বলল। সেন্টোসা স্টেশনে নেমে গেলাম। স্টারবাক্সে ছিল। বসে কফি খেলাম। সেন্টোসাতে আরেকটি লাইন রয়েছে ক্যাবল কারের। ঐটাতে উঠলাম। ক্যাবল কার থেকে সেন্টোসা দেখতে লাগলাম।
সেন্টোসাতে অনেক কিছুই করা যায়। বাঞ্জি জাম্প আছে, জিপলাইনিং আছে। বীচও অনেক সুন্দর। ক্যাবল কারে করে চলে গেলাম সেন্টোসার মারলায়নের কাছে। ঐখানে আরো অনেক কিছু রয়েছে। ইউনভার্সাল স্ট্যুডিও, একুরিয়াম, ফুড কোর্ট সহ সব কিছু ঐ যায়গায়। পুরা এলাকা ঘুরে দেখলাম। এরপর এসে উঠলাম মারলায়নে। ক্যাবল কারের টিকেট কাটার সময় মারলায়ন এর টিকেট ফ্রি দিল। ভেতরে যাওয়ার পর সিংগাপুর এবং মারলায়নের হিস্ট্রি নিয়ে একটা ভিডিও দেখালো। টিকেট নেওয়ার সময় আমাকে একটা কার্ড দিল নিজের ভাগ্য পরীক্ষা করার জন্য। ঐ কার্ডটা ম্যাজিক মেশিনে দেওয়ার পর একটা কয়েন দিল। গোল্ডের! এক কাপলের সাথে লিফটে উঠতে ছিলাম মারলায়নের উপরে। ওরা বলল এটা সত্যিকারের গোল্ড। মিনিমাম ৫০০০ ডলার হবে। আমি বললাম ১০০০ ডলার দিন, আমারটা দিয়ে দিচ্ছি। হাসল ওরা। মারলায়নের মাথার উপর থেকে পুরা সেন্টোসার কি সুন্দর ভিউ দেখা যায়। অনেকক্ষণ ধরে অন্ধকারে থাকার কারণে বের হয়ে এত সুন্দর দৃশ্য দেখে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। কিছুক্ষণ থাকলাম।
![](https://jakir.me/wp-content/uploads/2018/11/IMG_0684.jpg)
মারলায়নের উপর থেকে সেন্টোসার একাংশ
মারলায়ন ঘুরে বীচে হাঁটতে লাগলাম। বীচ গুলো এমন যে, সামনের দিকে ঢেউ ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য দ্বীপের মত করে করা। ঐ দ্বীপ গুলোতে যাওয়া যায়। একটা দ্বীপে গিয়ে বসে ছিলাম কিছুক্ষণ। এত বেশি বাতাস আর ঢেউ, কি যে ভালো লাগছিল। দুপুরের দিকে সব জায়গায় গরম হলেও এখানে গাছের নিচে বসে থাকতে কি যে ভালো লাগছিল। বসে এরপর আবার গিয়ে ক্যাবল কারে উঠলাম। পুরো এরিয়া ঘুরে দেখলাম ক্যাবল কারে করে। এরপর সিঙ্গাপুর মূল আইল্যান্ড যাওয়ার জন্য ক্যাবল কারে উঠে পড়লাম। সব গুলো স্টপেজ ঘুরে সেন্টোসাতে আবার নামলাম। সেন্টোসার Palawan Green পার্কের দিকে গেলাম। ঐ দিকে হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে দেখলাম একজন নিরিবিলি বসে বসে বসি দিয়ে মাছ ধরছে। ঐদিকে সাগরের ঢেউ অনেক বেশি। কিছুক্ষণ বসে থাকার পর বৃষ্টি আসল। একটা ছাউনিতে গিয়ে বসলাম। দেখলাম আমার মত আরো কয়েক জন এসেছে ছাউনিতে। যারা সবাই ছিল বাংলাদেশী।
হাঁটতে হাঁটতে বিকেল হলো। সন্ধ্যার দিকে একটা শো রয়েছে। Wings of Time নামে। ঐটা দেখার জন্য অপেক্ষা করলাম। ক্যাবল কারের টিকেটের সাথে এটার টিকেটও ফ্রি দিল। শো এর জন্য ওপেন করে দিলে আমরা ঢুকি। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। Wings of Time শো দেখাবে বীচে। গ্যালারি করা। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হওয়ার কারণে সমস্যা হচ্ছিল না। আস্তে আস্তে সবাই শো দেখার জন্য আসতে লাগত। শেষ মুহুর্তে এত বেশি বৃষ্টি শুরু হলো যে আর বসে থাকা যাচ্ছিল না। গ্যালারি থেকে বের হয়ে একটা ফুড স্টলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। বৃষ্টি একটু কমলে শো দেখতে গেলাম আবার। ততক্ষণে শো শুরু হয়ে গিয়েছে। এই পর্যন্ত এমন কোন শো দেখিনি। পানির ফোয়ারাতে আলো ফেলে মূলত ছোট একটা কার্টুন দেখাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল সত্যি সত্যি। এছাড়া আগুণ এবং পানির ঝাপটা দিচ্ছিল সত্যিকারের। দারুণ একটা এক্সপেরিয়েন্স ছিল এটি। শো দেখে সেন্টোসা থেকে সিঙ্গাপুর মূল দ্বীপে ফিরে গেলাম। এরপর বাস স্টেশনে করে বাসে উঠে হোস্টেলে ফিরলাম।
![](https://jakir.me/wp-content/uploads/2018/11/IMG_1221.jpg)
Wings of Time এর শেষের দিক থেকে একটা ছবি
৫ এ নভেম্বর
৫ তারিখ সারাদিন ছিলাম ইউনিভার্সাল স্টুডিওতে। ইউনিভার্সাল স্টুডিওতে অনেক গুলো রাইড রয়েছে। সব কিছু যেন কভার করতে পারি, তাই সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে চলে গেলাম ইউনিভার্সাল স্টুডিওতে। ইউনিভার্সাল স্টুডিও হচ্ছে সেন্টোসাতে। যা একটা দ্বীপ। গতকাল সারাদিনই ছিলাম এখানে। অনেক ভাবেই যাওয়া যায়। মেট্রো আছে, বাস বা প্রাইভেট কার অথবা ক্যাবল কার। গত কাল ক্যাবল কাড়ে উঠার কারণে ভাবলাম আজ মেট্রোতে করে যাই। সেন্টোসাতে মেট্রোতে করে যেতে হলে প্রথমে যেতে হয় ভিভো সিটিতে। ভিভো সিটি থেকে সম্ভবত হেঁটেও যাওয়া যায়। কারণ অনেক কাছে। আমি ট্রাই করিনি। মেট্রোতে উঠে কিছুক্ষণ পরই সেন্টোসা নেমে গেলাম। সকাল সকাল যাওয়াতে খুব কম মানুষ। পুরা দ্বীপ অনেক নিরিবিলি। অল্প কয়েকজন ট্যুরিস্ট রয়েছে। নয়টার মধ্যে আমি পৌঁছে গিয়েছি সেন্টোসাতে। পার্ক ওপেনিং টাইম হচ্ছে ১০টা। টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে ৯.৩০ এর দিকে। অনলাইনেও টিকেট কাটা যায় যদিও। আমি ঐখানে গিয়ে টিকেট কেটে নেই। বাকি সময় কাটানোর জন্য স্টারবাক্সে গিয়ে কফি খেয়ে নেই।
কফি খেয়ে এসে দেখি বিশাল লাইন। আমিও লাইনে দাঁড়িয়ে গেলাম। ১০টার একটু আগে একজন হোস্ট এসে ওয়েলকাম স্পিচ দিল। সাথে ছিল বিড়ালের কস্টিউম পরা একটা বিড়াল। এরপর ইউনিভার্সাল স্টুডিওতে ঢুকার পর প্রথমে কোথায় গিয়েছি বলে মনে করেন? ঠিক ধরেছেন। রোলার কোস্টার! রোলার কোস্টারের দুইটা রাইড রয়েছে। একটা হচ্ছে হিউম্যান, একটা হচ্ছে সাইক্লোন। হিউম্যানে দুইবার আপসাইড ডাউন হয়। আর সাইক্লোনে ৫ বার। প্রথমে শুরু করেছি হিউম্যান দিয়ে।
রোলার কোস্টারে পকেট খালি করতে হয়। কোন কিছুই সাথে রাখা যায় না। পাশেই লকার রয়েছে। লকার নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ফ্রি। হিউম্যান রাইডের জন্য ৪৫ মিনিট, সাইক্লোনের জন্য ৮৫ মিনিট। এরপর টাকা গুনতে হবে। লকার ছোট। মোবাইল, মানিব্যাগ এসব আঁটবে। ব্যাকপ্যাক আঁটবে না। ঐখানে যাওয়ার আগে তাই এসব চিন্তা করে গেলেই ভালো হবে। লকারে রেখে রোলার কোস্টারে উঠার লাইনে দাঁড়ালাম। এত সকাল সকাল এলাম। এরপর ও বিশাল লাইন। লাইন ধরে আস্তে আস্তে কাছা কাছি যাওয়ার পর বলল সিঙ্গেল কেউ থাকলে যেন সামনে যাই। গেলাম। আমি সামনের সিটে বসতে পারলাম। রেডি হওয়ার পর আস্তে আস্তে সামনে যেতে লাগল। একটু ভয় ভয় পাচ্ছিলাম। প্রথমে উপরের দিকে উঠল। উপরের দিকে উঠতে একটুও ভয় নেই। যখনি উপর থেকে নিচের দিকে নামা শুরু করল, কি রকম একটা থ্রিলিং অনুভূতি হলো। একবারই এরকম হয়েছে। এরপরের গুলো সবই মজা লেগেছে। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই শেষ।
এরপর নেমেই গেলাম লকার চেঞ্জ করতে। হিউম্যান ভার্সনে লাইন কম হয়। তাই ফ্রি লকারের সময়ও কম। সাইক্লোন ভার্সনে লাইন অনেক বড় হয়, তাই লকারের সময়ও একটু বেশি দেওয়া। লকার চেঞ্জ করে এরপর সাইক্লোন ভার্সনের লাইনে দাঁড়ালাম। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর জানালো কোন একটা সমস্যার কারণে দেরি হচ্ছে। ঠিক হলে জানাবে। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর ও যখন দেখলাম কোন আপডেট নেই, তখন বের হয়ে অন্য দিকে গেলাম।
এরপর গেলাম প্রাচীন ইজিপ্ট এরিয়ায়। এখানে রয়েছে Revenge of the Mummy রাইড। এখানেও বিশাল লাইন। মজার ব্যপার হচ্ছে এখানে সিঙ্গেলদের জন্য আলাদা লাইন রয়েছে। যা এক্সপ্রেস টিকেটের মত। ঢুকার পর থেকেই মমি সহ অনেক ভাস্কোর্য দেখা যাবে। শুনা যাব অনেক ভৈতিক শব্দ। লাইন ধরে সামনে যাওয়ার পরই দেখলাম সিঙ্গেল একটা সিট খালি আছে। আমাকে ঢাকল ঐটাতে উঠার জন্য। একেবারে সামনের সিটে। রাইডটা শুরু হয়েছে খুব সাধারণ ভাবে। দুই পাশে মমি, কংকাল ইত্যাদি। একটু পরেই শুরু হলো সত্যিকারের থ্রিল। মনে হচ্ছিল যেন আমরা কোন মমি মুভির ভেতর। গরম বাতাস, পানির ঝাঁপটা, অনেক গতিতে আমাদের গাড়ি এক দিক থেকে আরেক দিকে যাওয়া, সামনে পেছনে যাওয়া, উপরে নিচে যাওয়া, সাথে ভৈতিক শব্দ এবং ভৈতিক পরিবেশ। কি দারুণই না লাগল। ভাবলাম সময় পেলে আবার এই রাইডটা দিব।
প্রাচীন ইজিপ্ট থেকে গেলাম The Lost World এ। বলা যায় জুরাসিক পার্ক মুভির একটা অংশ। এখানে গিয়ে উঠলাম ওয়াটার ওয়ার্ল্ড রাইডে। বিশাল লাইন। সিঙ্গেলদের জন্য আলাদা লাইন রয়েছে। যদিও এখানে সিঙ্গেলদের লাইনেও ভিড়। এটা মূলত পানির উপর দিয়ে বোটে করে যাওয়া। দুই পাশে বিভিন্ন ডাইনোসর ও অন্যান্য প্রাণী। শেষ মুহুর্তে ছিল একটা চমক। আমাদের বোট লিফটে অনেক উপরে উঠিয়ে এরপর ছেড়ে দিল। থ্রিলিং এক্সপেরিয়েন্স।
লস্ট ওয়ার্ল্ডে আরো কিছু রাইড রয়েছে। আমি এরপর উঠলাম Canopy Flyer এ। এটা কিছুটা রোলার কোস্টারের মত। তবে আপসাইড ডাউন হয় না। ঝুলন্ত একটা রাউন্ড রাইড। ঐটা শেষ করে গেলাম Far Far Away সিটিতে। এখানে The Dance For The Magic Beans লাইভ শো হয়েছে একটা, ঐটা দেখলাম। এরপর গেলাম Donkey LIVE শোতে। এখানে গাধা আমাদের গাধা বানিয়েছে! কমেডি এবং মজার একটা শো। তারপর দেখতে গিয়েছি Shrek 4-D Adventure শোতে। 4D শো। চেয়ার যেখানে বসে দেখেছি, তা মুভ করা, গল্প অনুযায়ী পানির জাপটা লাগা ইত্যাদি। খারাপ লাগেনি। আরো কিছু রাইড ছিল এই এরিয়াতে। বিশাল লাইন থাকায় আর রাইড গুলো দিতে ইচ্ছে করেনি।
![](https://jakir.me/wp-content/uploads/2018/11/IMG_1422.jpg)
ইউনিভার্সাল স্টুডিও এর ভেতর
এরপর গিয়েছি Madagascar এরিয়াতে। Madagascar: A Crate Adventure রাইডটি দিয়েছি। নৌকায় করে ঘুরায়। Madagascar মুভির বিভিন্ন ক্যারেক্টার রয়েছে দুই পাশে। মজাই লাগে। বয়স কম থাকলে আরো বেশি মজা লাগত। মূলত ছোটদের রাইড এটা। এরপর ফিরে এলাম সাই-ফাই সিটিতে। এখানে লাইভ ট্রান্সফরমার দেখা যায়। নির্দিষ্ট সময়ে। আমি শেষ মুহুর্তে এসে দেখতে পেরেছি একটু। এরপর লাইনে দাঁড়ালাম রোলার কোস্টার সাইক্লোন রাইডের জন্য এক ঘণ্টার মত লাইনে থাকতে হয়েছে। এরপর সুযোগ হয়েছে রাইড দেওয়ার। প্রথমে একটু ভয় লেগেছে। এরপর বাকি সময় খুব ভালো লেগেছে। লাইন না থাকলে আবার ট্রাই করতাম।
লকার থেকে আমার জিনিস পত্র নিতে আসলে দুইটা মেয়ে বলল ৪ ডলার হবে কিনা। ওরা ফ্রি টাইম থেকে বেশি সময় লকার ব্যবহার করেছে, তাই ৪ ডলার লাগবে জিনিস পত্র ফেরত নিতে। আমি বললাম হবে। ৪ ডলার দিলাম। এরপর যখন ওরা ওদের জিনিস পত্র পেলো, দেখল ওদের কাছে শুধু ২ ডলার আছে চেঞ্জ। আর আছে ১০ ডলার। পরে ২ ডলারই নিলাম। ওরা জিজ্ঞেস করল সমস্যা হবে না তো? আমি মুখে বললাম নাহ। মনে মনে বললাম, আমার দুই ডলার! অনেকটা শ্রীকান্তের মত, আমার এক পাটি জুতো!
খাওয়া দাওয়া করতে হবে। এখানে অনেক গুলো ফুড কোর্ট রয়েছে। অনেক গুলো হালাল ফুড স্টল ও রয়েছে। খাওয়া দাওয়া করে নিলাম। পাশেই ছিল New York এরিয়া। এখানে অনেক গুলো শো দেখায়। লাইভ। কখন কোনটা দেখাবে, তার সময় দেওয়া থাকে। একটা রাইড ছিল Sesame Street Spaghetti Space Chase। মনে হবে যেন স্পেসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। খুবি সিম্পল একটা রাইড। লাইন অনেক বড় ছিল এখানে যদিও। খুব একটা ভালো লাগেনি। বাকি শো গুলো আমাকে বেশি আকর্ষন না করায় আমি চলে গেলাম সাই-ফাই সিটিতে। আমি লাইনে দাঁড়ালাম TRANSFORMERS The Ride : The Ultimate 3D Battle রাইডের জন্য। সিঙ্গেলদের জন্য আলাদা লাইন। তাই বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। উঠে পড়লাম গাড়িতে। এটা হচ্ছে একটা রিয়েল এক্সপেরিয়েন্সের মত মজা। মনে হচ্ছিল যেন আমি ট্রান্সফরমার মুভির ভেতরে। অন্য কোন রাইডে এত মজা পাইনি। বের হয়ে আবার লাইনে দাঁড়ালাম। এত বেশি ভালো লেগেছে যে দুইবার এই রাইডটি দিলাম।
এসব করতে করতে বিকেল হয়ে গেলো। পার্ক টাইম ছিল ১০টা থেকে ৬টা পর্যন্ত। পুরা এরিয়ায় আবার একবার হেঁটে ঘুরে বের হয়ে গেলাম। সেন্টোসা এক্সপ্রেস মেট্রোতে উঠে যেখানে যেখানে থামে, সব গুলো স্টপেজ ঘুরে দেখলাম। তারপর ভিভো সিটিতে নেমে মেট্রোতে উঠে চলে গেলাম ম্যারিনা এরিয়াতে।
বলা যায় সিঙ্গাপুরের অর্ধেক পর্যটন স্পট গুলো হচ্ছে ম্যারিনা এরিয়া, বাকি অর্ধেক হচ্ছে সেন্টোসাতে। ম্যারিনা বে স্যান্ডস এ আসার কারণ হচ্ছে Spectra – A Light & Water Show দেখার জন্য। প্রতি রাতে দুইবার দেখায়। একটা হচ্ছে 8.15 তে। আরেকবার 9.15 তে। খুবি সুন্দর একটা শো। অনেক বেশি পর্যটক। সবাই বসে ছিল দেখার জন্য। আমি একেবারে সামনে গিয়ে বসেছি। পানির ছিটকে গায়ে এসে লাগছিল। কি যে ভালো লাগছিল।
এখানে অনেক কিছুই আছে দেখার মত। হেলিক্স ব্রিজ, আর্ট-সাইন্স মিউজিয়াম, সমুদ্রের অপর পাশে বিশাল বিশাল বিল্ডিং গুলোও দেখার মত। পুরা এরিয়া খুব সুন্দর করে সাজানো। হাঁটতেও ভালো লাগবে। অনেকেই জগিং করছিল। পারফেক্ট যায়গা জগিং করার জন্য। পাশেই রয়েছে The Shoppes at Marina Bay Sands। এই শপিং মলটাও দেখার মত। রয়েছে অনেক ফুডকোর্ট ও। হাঁটতে হাঁটতে স্পেক্ট্রা এর পরবর্তী শো এর সময় হয়ে গিয়েছে। এবার সবার পেছনেই বসলাম। পুরা ভিউ দেখার জন্য। ভালো লাগছিল দেখতে। প্রায় ১২ মিনিটের শো।
![](https://jakir.me/wp-content/uploads/2018/11/IMG_2165.jpg)
The Shoppes at Marina Bay Sands এর ভেতর
![](https://jakir.me/wp-content/uploads/2018/11/IMG_2364.jpg)
Art-Science Museum
নাসির ভাই আসছিল সিঙ্গাপুর ঘুরতে। জানালো দেখা করবে। উনাকে জানালাম আমি এখানে থাকব। উনি আসল। কথা বলে জানতে পারলাম আমরা একই হোস্টেলে উঠেছি। শো দেখে আমরা চলে গেলাম আরব স্ট্রিটে। মেট্রোতে করে। ঐখানে গিয়ে খাওয়া দাওয়া করলাম। পাশেই ছিল আমাদের হোস্টেল। হেঁটে হেঁটে হোস্টেলে ফিরে ঘুমালাম।
৬ নভেম্বর
সকালে এক সাথে বের হলাম দুইজনে। গত রাতে খেতে গিয়ে আমার সেলফি স্টিক ফেলে এসেছি। ভাবলাম একবার গিয়ে দেখি পাওয়া যায় কিনা। গিয়ে জানানোর পর উনারা বের করে দিল। কি যে খুশি হয়েছি আমি! এরপর আমরা স্টারবাক্স খুঁজে ঐখানে গিয়ে কফি খেলাম। উনি চলে গেলো অন্য কারো সাথে দেখা করার জন্য। আমি গেলাম ইস্ট কোস্ট পার্ক এবং সমুদ্র সৈকতে। এটা এয়ারপোর্টের কাছা কাছি। বিশাল এরিয়া জুড়ে পার্ক। এক পাশে পার্ক, এক পাশে সমুদ্র সৈকত। সমুদ্রের পাড়ে রয়েছে ক্যাম্প করার জায়গা। রয়েছে বার-বি-কিউ করার জায়গা। ঐ দিন হলিডে ছিল। সবাই দেখি কি সুন্দর করে ক্যাম্প করে আড্ডা দিচ্ছে। অনেকে জগিং করছিল। অনেকে সাইক্লিং করছিল। হেঁটে হেঁটে দেখলাম অনেকক্ষণ।
![](https://jakir.me/wp-content/uploads/2018/11/IMG_2691.jpg)
ইস্ট কোস্ট পার্ক
অনেক গরম। হাঁটা কষ্টকর বলা যায়। বাস স্ট্যান্ডে এসে বাসে করে এরপর চলে গেলাম ভিভো সিটিতে মুভি দেখার জন্য। গোল্ডেন ভিলেজ থিয়েটারে। সেলফ টিকেটিং। টিকেট কেনার পর দেখলাম দুইটা রিসিপ্ট। একটা হচ্ছে মুভি দেখার জন্য। আরেকটা হচ্ছে BFF Combo! এটা কখন সিলেক্ট করলাম? ভাবতে ভাবতে ফুডকোর্টে গিয়ে BFF Combo এর রিসিপ্টটা দিলাম। আমাকে দুইটা বড় সাইজের কোক আর বিশাল একটা পপকর্ণ ধরিয়ে দিল। কেমন বিশাল বলি, সাধারণত আমরা পপ কর্ণ কেনার পর মুভি শুরু হওয়ার আগেই ঐ পপকর্ণ শেষ হয়ে যায়। এই পপকর্ণটা খাওয়া শেষ হলো, মুভি দেখাও শেষ হলো। আমি একটুক্ষণের জন্যও খাওয়া থামাইনি!
মুভি দেখেছি The Girl in the Spider’s Web: A New Dragon Tattoo Story! ভাবছি সুন্দর একটা মুভি হবে। কিন্তু খুব একটা সুন্দর না। গোল্ডেন ভিলেজ থিয়েটারের কথা বলি। আমি দেখেছি সাধারণ একটা স্ক্রিনে। ওদের ঐখানে Dolby Atmos থিয়েটার রয়েছে। যার স্ক্রিন সম্ভবত এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড়। যদিও ঐখানে নির্দিষ্ট কিছু মুভি দেখাচ্ছিল। না হলে ঐখানেই দেখতাম। মুভি দেখে ভিভো সিটি শপিং মল ঘুরে দেখলাম। সুন্দর একটা শপিং মল। বলা যায় সব ভালো ব্র্যান্ডেরই আইটেম পাওয়া যাবে। ভিভো সিটি থেকে চলে গেলাম Gardens by the Bay তে। Light Show: Garden Rhapsody শো দেখার জন্য। এখানে এর আগে এসেছি একবার দিনে। একবার শো এর পর। শোটা দেখার জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। সাথে ছিল নাসির ভাই। পাশেই ছিল টেক্সাস চিকেন। আমরা দুইজন চিকেন অর্ডার দিলাম। দুইটা বিশাল সাইজের চিকেন দিল আমাদের। প্রাইস ও রিজনেবল। খাওয়া দাওয়া করতে করতেই শো শুরু হলো। বের হয়ে দেখলাম। বৃষ্টি হচ্ছিল গুড়ি গুড়ি। একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে শো দেখলাম।
![](https://jakir.me/wp-content/uploads/2018/11/DSC_8155.jpg)
Garden Rhapsody শো দেখার সময় Supertree lighting
শো দেখে ঐ এলাকায় কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করলাম। এরিয়াটা এত সুন্দর যে যেতে ইচ্ছে করছে না। যেতে তো হবে। কিছুক্ষণ থেকে চলে গেলাম হোস্টেলের দিকে। আজ নতুন হোস্টেলে উঠব। এটলান্টিস পড নামক একটা হোস্টেল। এখানে বেড গুলো পডের মত। এক্সপেরিয়েন্স নেওয়ার জন্যই এখানে থাকা। যাওয়ার পর আমার পড দেখিয়ে দিল। আমি ফ্রেশ হলাম। দেখলাম বাহিরে আতশ বাজি ফুঁটছে। বের হয়ে দেখলাম পুরা রোড কি সুন্দর করেই না সাজানো। দীপাবলি উপলক্ষে। আমি যে যায়গায় আছি এখন, তা হচ্ছে লিটল ইন্ডিয়াতে। সিঙ্গাপুরে ময়লা ফেলা নিষেধ। কিন্তু আতশ বাজি ফুটানোর কারণে অনেক কাগজ পড়ে রয়েছে। সারাদিন হাঁটা হাঁটি করায় অনেক টায়ার্ড। পডে ঢুকে ঘুমিয়ে পড়লাম।
৭ নভেম্বর
সকালে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নিলাম। এরপর রুম চেক আউট করে বের হয়ে পড়লাম। আজ আমার ফ্লাইট। বিকেল ৫.৫৫ তে। সকালে কিছুক্ষণ ঘুরা যাবে। প্রথমে চলে গেলাম ক্যাট ক্যাফেতে। আমি ভাবলাম যাবো, কফি খাবো আর বিল্লির সাথে ছবি তুলব। কিন্তু গিয়ে দেখি এন্ট্রি ফি রয়েছে। ১৫ ডলার। কফি পাওয়া যায়। আলাদা কিনতে হয়। এন্ট্রি ফি এবং কফি কিনে ঢুকতে যাবো, তখন বলল হাতে স্যানিটাইজার মাখতে। মাখলাম। এরপর কি কি করা যাবে, কি করা যাবে না, তার ব্রিফিং দিল। ঢুকার পর আমার ব্যাগ রাখার জন্য আরেকটা ব্যাগ দিল। যেন বেড়াল গুলো নষ্ট না করে।
বিড়াল গুলোর জন্য কি সুন্দর সিস্টেম। ওদেরকে দেখলেই আদর করতে ইচ্ছে করে। এত নাদুস নুদুস। এক একটা এক একটার মত করে ঘুমুচ্ছে, খেলছে। ইচ্ছে হলে আপনার কাছেও আসতে পারে। অনেকক্ষণ ছিলাম ঐখানে। ভালো লাগল।
![](https://jakir.me/wp-content/uploads/2018/11/IMG_3066.jpg)
ক্যাট ক্যাফে থেকে গেলাম Marlion Park এ। এটাও ম্যারিনা এরিয়ায়। যেখানে সিংহ এর মুখ থেকে পানি বের হয়। সিংগাপুরের যত গুলো ট্যুর প্যাকেজ রয়েছে, সব গুলোতে এই পিকটা থাকবেই! আমি এসেছি একেবারে শেষ দিন। এরিয়াটা পুরাটাই পর্যটক ফ্রেন্ডলি। বসার জন্য জায়গা রয়েছে, রয়েছে রেস্টুরেন্ট। এরপরই হচ্ছে Esplanade। বলা যায় পাবলিক থিয়েটার। প্রায় সময়ই বিভিন্ন শো থাকে। ওয়েব সাইটে দেখা যাবে কোন দিন কোন শো থাকবে। তখন নিজের পছন্দেরটা দেখে নেওয়া যাবে। এর একটু পরই হচ্ছে হেলিক্স ব্রিজ। যার পরে হচ্ছে The Shoppes at Marina Bay Sands শপিং মল সহ অন্যান্য স্থাপনা গুলো। সব কিছুই কাছা কাছি।
![](https://jakir.me/wp-content/uploads/2018/11/IMG_3555.jpg)
মারলায়ন
আমি গেলাম Marina Square শপিং মলে এ। খাওয়া দাওয়া করার জন্য। এখানে এত বেশি শপিং মল। ডানে, বামে, সামনে, পেছনে। সব জায়গায়! খাওয়া দাওয়া করে বের হচ্ছি তখনি একটা ছেলে আমাকে ডাকল দেশি ভাই বলে। জিজ্ঞেস করল বলল একটা কল করা যাবে? আমি ফোন দিলাম। এরপর কিছুক্ষণ বসে গল্প করলাম। সে কি করে জানালো। জানালো কাঠের কাজ করে। ফোন বের করে ছবি দেখালো। এক সময় আমাকে বলল আমার নাম্বার দিতে। দিলাম। বলল দেশে আসলে দেখা করবে। আমার বিকেলে ফ্লাইট। এয়ারপোর্টে যেতে হবে। আমি বিদায় নিয়ে চলে গেলাম। একটা বাসে উঠে পড়লাম।
এয়ারপোর্টে এসে বোর্ডিং পাস নিয়ে নিলাম। এরপর ইমিগ্রেশন শেষ করে গেলাম আইফোনের GST রিটার্ণ নিতে। এসব করতে করতে সময় হয়ে গেলো। আস্তে আস্তে বোর্ডিং গেটের দিকে গেলাম। একজন বাংলায় জিজ্ঞেস করল স্কুটের গেট কোন দিকে। আমি জানালাম। বললাম আমিও যাচ্ছি। আমার সাথে আসেন।
আমার সিট দুই সিটের মাঝে। দুই পাশে দুইজন বসেছে। দুইজনই ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছে। একজন যাচ্ছে ৬ বছর পর। একজন ৩ বছর পর। তাদের গল্প শুনলাম। কে কি করে, বাড়িতে কে থাকে, ইত্যাদি। সবাইকে ছেড়ে দূরে থাকা কত কষ্টের। এই কষ্ট লক্ষ লক্ষ প্রবাসীরা করে যাচ্ছে। শুধু প্রিয় মানুষ গুলোর একটু সুখের জন্য। জানি না। এসব নিয়ে ভাবতে ভাল লাগে না। একটু একটু ব্যথা লাগে।
৪ ঘণ্টার ফ্লাইট। গান শুনতে শুনতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়লাম। এরপর ঢাকায় এসে নেমেছি রাত আটটার দিকে। এরপর ইমিগ্রেশন শেষ করে বের হলাম। জ্যামের শহর ঢাকারে। আহারে। এরপরও আপন। এই শহরে এত বছর থেকেছি যে সব কিছুই আপন হয়ে উঠেছে।
সিঙ্গাপুর অনেকেই ২-৩ দিনের জন্য যায়। যারা কম সময় নিয়ে যায়, তারা এক দিন ম্যারিনা এরিয়াতে ঘুরতে পারে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। ঠিক মত সময় ম্যানেজ করতে ম্যারিনা এরিয়ার সব ঘুরে দেখা যাবে। দেখা যাবে Specture এবং Garden Rhapsody শো। দুইটা দুই যায়গায়, কিন্তু কাছা কাছি। একটা দেখে আরেকটা দেখার জন্য চলে যাওয়া যাবে। গুগলে সার্চ করলেই সময় জানা যাবে। সেন্টোসা আসলে একদিনে ঘুরে শেষ করা যাবে না। আমি দুইদিন ঘুরেছি, এরপর ও অনেক কিছুই ঘুরা হয়নি। ঐখানে একুরিয়াম রয়েছে, রয়েছে ওয়াটারল্যান্ড। এরপর ও যারা কম সময় নিয়ে ঘুরতে যান, তারা একদিন পুরোটা সেন্টোসার জন্য রাখতে পারেন।
খরচ নির্ভর করে নিজের উপর। ভালো জায়গায় থাকলে বেশি টাকা লাগবে। হোস্টেলে থাকলে কম টাকা লাগবে। আমি দেশে থাকতেই Airbnb তে রুম বুক করে যাই। এভারেজ ২০ ডলার প্রতি রাতের জন্য। হোটেলে আসলে থাকা হয় না। সারাদিন বাহিরে বাহিরেই ঘুরা হয়। রাতে এসে ঘুম। তাই এখানে খরচ বেশি করারও কোন মানে হয় না। খাওয়া দাওয়া কোথায় করবেন, তার উপর খাওয়া দাওয়ার খরচ নির্ভর করে। ফুড চেইন গুলতে খুব কম টাকায় খাওয়া যায়। ম্যাকডোনাল্ড সব জায়গায় পাবেন। প্রতি গলিতেই পাওয়া যায় বলতে গেলে। কম টাকায় খাওয়া যায়। ম্যাগডোনাল্ড, কেএফসি, টেক্সাস সিকেন সহ এসব হালাল ফুড সার্ভ করে। ওদের ওয়েব সাইটে তাই লেখা। এছাড়া সিঙ্গাপুর প্রায় সব জায়গায়ই হালাল ফুড পেয়ে যাবেন একটু খুঁজলেই। ফল খেতে পারেন। প্রায় জায়গায় মিক্স ফল বিক্রি করে। খেতে দারুণ লাগে। সিঙ্গাপুরের তুলনায় দামও কম। দেশের সাথে তুলনা না করলেই হলো! টিকেট এবং ভিসার কথা তো আগেই লিখছি। ঘুরার জন্য সিঙ্গাপুর আসলেই সুন্দর একটি যায়গা। সময় এবং সুযোগ করে ঘুরে আসতে পারেন।