![](https://dainikajkermeghna.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
আপওয়ার্কের টপ রেটেড কিছু ফ্রিল্যান্সারদের নিয়ে আমাদের একটা গ্রুপ রয়েছে আপওয়ার্ক প্রিমিয়ার ক্লাব নামে। ঐ গ্রুপ থেকে আমরা ফ্রিল্যান্সাররা মাঝে মধ্যে ট্যুর দেওয়ার চেষ্টা করি। তো এবার প্ল্যন হলো নাপিত্তাছড়া ও খৈয়াছড়া যাওয়ার। আমরা প্রায় ১৪ জন রওনা দিলাম ফেনির উদ্দেশ্যে। ট্রেনে করে। দুইটা ঝর্ণাই চট্রগ্রাম এবং ফেনির মাঝা মাঝি। যে কোন এক পাশ থেকে গেলে প্রায় একই সময় লাগবে।
আমরা রওনা দিয়েছি ২১ তারিখ রাতের তুর্ণা এক্সপ্রেসে করে। আমি উঠেছি এয়ারপোর্ট স্টেশন থেকে। তখন প্রায় ১২টা সময় ঘড়িতে। ট্রেনে উঠে সবার সাথে দেখা। আমাদের সিট পড়ছে ট্রেনের মাঝখানে। ঐখানে বসে আমরা কার্ড খেললাম কিছুক্ষণ। এরপর গল্প করতে করতেই ফেনি স্টেশনে পৌছে গেলাম। ঘড়িতে সম্ভবত সকাল পাঁচটা তখন। রেল স্টেশন থেকে চলে গেলাম মহিপালের দিকে। একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে আমরা নাস্তা করে নিলাম। এরপর যারা নামাজ পড়ার, তারা পাশের মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ে নিলাম।
প্রায় ৬টা পর্যন্ত রেস্টুরেন্টে থেকে আমরা এরপর রওনা দিলাম নাপিত্তাছড়ার দিকে। ফেনি থেকে চট্রগ্রাম যাওয়ার যে কোন লোকাল বাসে উঠলেই নাপিত্তাছড়ার সামনে নামিয়ে দিবে। বাস থেকে নেমে গাইড ঠিক করে নিলাম। যে আমাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে। এরপর আস্তে আস্তে রওনা দিলাম আমরা। কিছুদূর পর একটা ঘর/হোটেলে আমাদের ব্যাগ রেখে ট্রেকিং করার জন্য রেডি হয়ে নিলাম। এখানেই আমরা দুপুরের খাবার খাবো। আমরা কি কি খাবো, তার অর্ডার দিয়ে গেলাম। রেডি হওয়ার পর ঝিরি পথ ধরে হাঁটা শুরু করলাম। ঝর্ণার পানি নেমে যে পথ তৈরি করেছে, ঐ পথ ধরেই হাঁটতে লাগলাম আমরা।
নাপিত্তাছড়ার এখানে প্রায় ৪টা ঝর্ণা দেখা যাবে। প্রায় ৩০ মিনিট হাঁটার পর প্রথম ঝর্ণা চোখে পড়বে। সুন্দর ঝর্ণা। প্রথমটি দেখে একটু উপরে উঠলেই দ্বিতীয়টা। এরপর আবার হাঁটা শুরু। পরের ঝর্ণা দেখার জন্য। এই পথ গুলোও সুন্দর লাগবে। কি সুন্দর পানি নামছে উপর থেকে। প্রথম দুইটা একটু ছোট ছোট ঝর্ণা। কিন্তু পরের দুইটা একটু বড়। অনেক উপর থেকে পানি পড়ছে। দেখতে কি ভালো লাগে।
![](https://jakir.me/wp-content/uploads/2017/10/DSC_0205.jpg)
আমরা রবিবারে আসার কারণে পর্যটক অনেক কম। কারণ অন্যদের জন্য ওয়ার্কিং ডে। আর আমরা ছাড়া আর কেউ ছিল না। নিরিবিলি লেগেছিল সব কিছু। ঝর্ণার এখানে অনেক্ষণ বসে ছিলাম। হেলান দিয়ে বসলে ঘুম চলে আসত হয়তো। পানি পড়ার শব্দ। কেমন একটা অসাধারণ সুর। ভালো লাগে।
![](https://jakir.me/wp-content/uploads/2017/10/DSC_0343.jpg)
![](https://jakir.me/wp-content/uploads/2017/10/DSC_0361.jpg)
পরের দুইটা ঝর্ণা দেখে আমরা ফিরে এসেছি যেখানে ব্যাগ রেখেছি। ফ্রেশ হয়ে এরপর আমরা দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। খাওয়া দাওয়া শেষ করে রওনা দিলাম মহামায়া লেকের দিকে। তখন বিকেল হয়ে গিয়েছে। আমরা মহামায় লেক যেতে যেতে সূর্য ডুবে গেলো। তাই নৌকায় উঠা, কায়াকিং করা এসবের কিছুই হয়নি। তার উপর রাস্তা ঠিক করা হচ্ছিল, আমাদের মেইন রোড থেকে বলা যায় হেটে হেটেই যেতে হয়েছে আবার হেটেই মেইন রোড ফিরতে হয়েছে।
![](https://jakir.me/wp-content/uploads/2017/10/DSC_0404.jpg)
![](https://jakir.me/wp-content/uploads/2017/10/DSC_0384.jpg)
![](https://jakir.me/wp-content/uploads/2017/10/DSC_0571.jpg)
মহামায়া থেকে মেইন রোড এসে সন্ধ্যায় আমরা রওনা দিলাম চট্রগ্রামের দিকে। হোটেল টাউন ইনে আমাদের জন্য রুম বুক করা ছিল। রুমে এসে ফ্রেস হলাম, একটু রেস্ট নিলাম, এরপর চলে গেলাম রাতের খাবার খেতে। জুবিলী রোডের এখানের বাজারের ভেতর একটা রেস্টুরেন্ট রয়েছে, সেখানে রাতের খাবার খেয়ে নিলাম।
হোটেলে ফিরে পরের দিনের জন্য প্ল্যান করা, সবাই মিলে আড্ডা দেওয়া ইত্যাদি করতে করতে প্রায় রাত একটা হয়ে গেলো। আমি ঘুম থেকে উঠেছি সকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে। কেন জানি আর ঘুম আসছিল না। ফ্রেস হয়ে হোটেলের ছাদে চলে গেলাম। চট্রগ্রামের সব দিকে সুন্দর দেখা যাচ্ছিল। এরপর সেখান থেকে নেমে আরো দুইজনের সাথে চলে গেলাম ডিসি হিলে। একটু হাঁটা হাঁটি করে ফিরে এলাম আবার হোটেলে। হোটেল থেকে কমপ্লিমেন্টারি ব্যুফে ব্রেকফাস্ট ছিল। খেয়ে নিলাম। সবাই উঠতে উঠতে ১০টা বেজে গেলো। তারপর রেডি হওয়া, হোটেল থেকে বের হতে হতে সাড়ে এগারোটা বাজলো। আমরা রওনা দিলাম খৈয়াছড়ার দিকে। সেখান থেকে কেউ খৈয়াছড়া গেলাম, এরপর কেউ গেলো মহামায়া লেকে। দুইটা প্রায় কাছা কাছি জায়গায়।
![](https://jakir.me/wp-content/uploads/2017/10/DSC_0681.jpg)
মেইন রোড থেকে CNG নিয়ে আমরা খৈয়াছড়া ঝর্ণার কাছা কাছি গেলাম। এরপর একটা দোকানে আমাদের ব্যাগ রাখলাম এবং আমাদের জন্য দুপুরের খাবার তৈরি করতে বললাম। এরপর রওনা দিলাম ঝর্ণার উদ্দেশ্যে। এখানে গাইডের দরকার পড়ে না। অনেক পর্যটক খৈয়াছড়া দেখতে আসে। যাওয়ার রাস্তাও মোটামুটি সোজা। অনেক মানুষ হাঁটতে হাঁটতে পথ হয়ে গিয়েছে। পথ ধরে এগিয়ে গেলেই ঝর্ণা।
আমরা দেরি করে পৌছানোর কারনেই প্রথম ঝর্ণাটিই দেখেছি। খৈয়াছড়ায় প্রায় ৮টা ঝর্ণা রয়েছে নাকি। উপরে আর উঠা হয়নি। প্রথমটা দেখে, কেউ কেউ গোসল করে আমরা ফিরে এলাম আবার দোকানের এখানে। এখানে এসে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। এরপর আবার রওনা দিলাম চট্রগ্রামের দিকে।
চট্রগ্রাম টাওয়ার ইনে আমাদের ব্যাগ গুলো রেখে এসেছি। হোটেলের লাউঞ্জে বসে কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম। সবাই একত্র হয়ে বের হয়ে পড়লাম। আমাদের ট্রেন হচ্ছে ১১টায়। রাতের খাবার খেতে হবে। হোটেল থেকে বের হয়ে একটা লেগুনা নিয়ে আমরা চলে গেলাম হান্ডি রেস্টুরেন্টে। এখানের হায়দ্রাবাদি বিরিয়ানি নাকি অনেক বিখ্যাত। আমরা সবাই মিলে বিরিয়ানি খেয়ে নিলাম। আসলেই ভালো লেগেছে। এরপর রওনা দিলাম রেল স্টেশনের দিকে। যে যার নীড়ে ফেরার উদ্দেশ্যে।
খৈয়াছড়ার প্রথম স্টেপে যাওয়া সহজ। এরপরের গুলোতে যেতে হলে একটু প্রিফারেশন নিয়ে যেতে হতে পারে। নাপিত্তাছড়া খুব ভালো লেগেছে। আগের তিনদিন এক টানা বৃষ্টি হওয়াতে প্রচুর পানি ছিল। বলা যায় আমরা ভাগ্যবান। এছাড়া আবহাওয়াও দারুণ ছিল। রোদ ছিল না, বৃষ্টিও না। সুন্দর ভাবে আরেকটা ট্যুর শেষ করতে পারলাম।