ভোটার হচ্ছে রোহিঙ্গারা!

চট্টগ্রাম জাতীয় বাংলাদেশ

চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের পিতা-মাতা সাজিয়ে ভোটার হচ্ছে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা। টাকার বিনিময়ে এমনটা করছেন স্থানীয়রা। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশি এনআইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) বানিয়ে পাসপোর্ট করে মধ্যপ্রাচ্যসহ নানা দেশে চলেও যাচ্ছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, রোহিঙ্গারা তাদের নাম-পরিচয় গোপন করে স্থানীয় কোনো পরিবারের স্বামী-স্ত্রীকে পিতা-মাতা বানিয়ে জনপ্রতিনিধি এবং নির্বাচন অফিসের কতিপয় কর্মচারীকে ম্যানেজ করে ভোটার আইডি কার্ড বানাচ্ছে। একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট কিছু অসাধু জনপ্রতিনিধিকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে এনআইডি তৈরি করছে। পাসপোর্ট বানিয়ে বাংলাদেশি সেজে বিভিন্ন দেশে পাড়ি দিচ্ছেন রোহিঙ্গারা। একটি এনআইডি তৈরি করতে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে দালাল চক্র। সম্প্রতি লোহাগাড়ার চুনতি ইউনিয়নে ৪নং ওয়ার্ড রহমানিয়াপাড়ায় ওবাইদুল হক নামে এক রোহিঙ্গা ভুয়া পরিচয়ে এনআইডি তৈরি করে পাসপোর্ট বানাতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। ওবাইদুল হক ওই এলাকার আবুল কালামকে বাবা আর কালামের স্ত্রী রাবিয়া খাতুনকে মা সাজিয়ে বাংলাদেশি পাসপোর্ট করতে যান।

আবুল কালাম বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, টাকার লোভে তিনি এ কাজটি করেছেন। সৈয়দা খাতুন নামের আরেক রোহিঙ্গা নারীকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে কালাম দম্পতি পিতা-মাতা সেজে একই এলাকা থেকে বানিয়ে দিয়েছেন ভুয়া এনআইডি কার্ড। বিষয়টিও প্রতিবেদকের কাছে স্বীকার করেছেন সাজানো পিতা আবুল কালাম।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, আবুল কালামও রোহিঙ্গা নাগরিক, তবে তিনি বহু বছর আগেই এসেছেন। স্থানীয়রা আরও জানান, রোহিঙ্গারা নানা কৌশলে ভোটার হচ্ছেন। এ দায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নির্বাচন অফিস এড়াতে পারে না। টাকার বিনিময় ছাড়া এটি কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এছাড়া স্থানীয় বাসিন্দারা রোহিঙ্গাদের মেয়ে বিয়ে দিয়ে এনআইডি তৈরি করে দিচ্ছেন। আবার অনেকেই পাসপোর্ট করে বিদেশেও পালিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সোলতান মোহাম্মদ অহিদ বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) প্রাপ্তির প্রক্রিয়াটি খুব সহজ নয়। পাঁচটি ধাপ অতিক্রম করে এই কার্ড পাওয়া যায়। আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পর তথ্য সংগ্রহ, পরিচিতি যাচাই, উপজেলা সার্ভারে প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রভৃতি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর আবেদনকারীকে এনআইডি কার্ড দেওয়া হয়। এজন্য বেশ সময়ও লাগে। উল্লিখিত সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে যদি কার্ড পেয়ে থাকে, তাহলেও বলতে হবে এক্ষেত্রে গুরুতর অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে।

চুনতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নাল আবদীন জনু বলেন, এরা কিভাবে ভোটার হয়েছে জানি না। তবে ওবাইদুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ একটি প্রতিবেদন চেয়েছিল আমরা সেটা জমা দিয়েছি। লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ ইনামুল হাসান যুগান্তরকে বলেন, রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। তদন্ত করে বিষয়টির প্রমাণ পাওয়া গেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান। সূত্রঃ যুগান্তর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.