কুমিল্লা নগরের বেশির ভাগ বহুতল ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড মানা হয়নি। এসব স্থাপনার অধিকাংশেরই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। তা ছাড়া, ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে জায়গার মালিকেরা কোনো ধরনের জমি ছাড় দেননি। একটি ভবনের সঙ্গে আরেকটি ভবন প্রায় লেগে আছে। এ কারণে অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনায় এসব ভবনে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সহজে পৌঁছাতে পারবেন না। এ কারণে ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে কুমিল্লার ১৭টি উপজেলার মধ্যে ৭টি উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নেই।
জানতে চাইলে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. মনিরুল হক বলেন, ‘নগর ভবনে জায়গার মালিকেরা ভবন নির্মাণের সময় একধরনের নকশা অনুমোদন করতে আসেন। পরে দেখা যায়, তাঁরা ওই নকশার ধারেকাছেও নেই। কেউ ছয়তলার অনুমোদন নিয়ে আটতলা ভবন নির্মাণ করছেন। কেউ নয়তলার অনুমোদন নিয়ে তুলছেন ১১ তলা। কেউ একটি ভবনের সঙ্গে আরেকটি ভবনের মাঝখানে জায়গা ফাঁকা রাখতে চান না। তাঁরা বিল্ডিং কোড মানছেন না। এ কারণে তাঁরা অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে রয়েছেন। সিটি করপোরেশন অনুমোদিত নকশাবহির্ভূতভাবে নির্মিত ভবন শনাক্ত করেছে। এগুলোর মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে অভিযান শুরু হয়েছে। এ ছাড়া বহুতল ভবনগুলোতে অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা আছে কি না, তার তালিকা করা হবে।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, কুমিল্লা নগরের রানীর দিঘির উত্তর ও দক্ষিণ পাড়ে একেবারেই গা ঘেঁষে অন্তত ১০টি ভবন রয়েছে। বহুতল এই ভবনগুলোর কোনো একটিতে আগুন লাগলে পাশেরগুলোতে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কুমিল্লা নগরের বাগিচাগাঁও, পুলিশ লাইনস, ঝাউতলা, টমছমব্রিজ, রেসকোর্স এলাকায়ও বহুতল ভবন আছে।
নগর ভবনের প্রকৌশলীরা বলেন, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে গত ১০ বছরে ৪০০ থেকে ৪৫০টি বহুতল ভবন হয়েছে। ১৬ তলা পর্যন্ত ভবনের অনুমোদন দেওয়া আছে। কিন্তু ১৬ তলা পর্যন্ত আগুন নেভানোর কোনো ব্যবস্থা নেই।
কুমিল্লা অঞ্চলের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগের সহকারী পরিচালক রতন কুমার নাথ বলেন, ‘সাততলা থেকে ওপরের দিকের সব ভবনকে বহুতল ভবন বলা হয়। কুমিল্লা নগরে এ ধরনের বহু ভবন রয়েছে। এসব ভবনের বেশির ভাগের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা নেই। আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কুমিল্লা নগরে নয়তলা পর্যন্ত পানি ছিটাতে পারবেন। এর বেশি উঁচুতে পৌঁছানোর মতো মই তাঁদের নেই।
এদিকে কুমিল্লার ১৭টি উপজেলার মধ্যে ৭টি উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নেই। এগুলো হচ্ছে দেবীদ্বার, লালমাই, ব্রাহ্মণপাড়া, তিতাস, মেঘনা, মনোহরগঞ্জ ও বুড়িচং। এসব উপজেলায় আগুন লাগলে পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সদস্যরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এ প্রসঙ্গে রতন কুমার নাথ বলেন, লালমাই ছাড়া অপর ছয়টি উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন করার জন্য প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এগুলো তৃতীয় শ্রেণির স্টেশন হবে। জমি অধিগ্রহণ নিয়ে সমস্যা থাকায় একটু দেরি হচ্ছে। তবে বুড়িচং উপজেলায় ভবনের কাজ শেষ হওয়ার পথে।
জানতে চাইলে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কুমিল্লা জেলা শাখার সভাপতি চিকিত্সক মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, কুমিল্লা একটি আবাসিক শহর। গত কয়েক বছরে নগরে অনেক বহুতল ভবন হয়েছে। এগুলোতে আগুন লাগলে নেভানোর সক্ষমতা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। ফায়ার সার্ভিস বহুতল ভবনের অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। মেয়রকেও সেটি দেখতে হবে।সূত্রে: প্রথমআলো