কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে নব-যোগদানকৃত থানার অফিসার ইনচার্জ এ কে এম সুলতান মাহমুদ বলেন, বিনা পয়সায় জনগণের সেবা দিতে আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তিনি শনিবার (১৮জুলাই) বিকালে উপজেলার গোবরিয়া আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়ন পরিষদ হলরুমে ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক নব-যোগদানকৃত ওসি'র সাথে এলাকাবাসীর পরিচয় ও মতবিনিময় সভায় একথা বলেন। এ সময় তিনি আরো বলেন, আমি রোজা মুখে নিয়ে আপনাদের থানায় যোগদান করেছি। আবার রোজা মুখে নিয়েই যেন বিদায় নিতে পারি। পাচঁ ওয়াক্ত নামাজ পরে আমি আমার দায়িত্ব পালনে বের হই। আগেরকার মানুষ পুলিশ সদস্যের বাবা-মা, ভাই-বোন ও স্ত্রী-সন্তান পরিচয় দিতে লজ্জা পেতো। বাংলাদেশ পুলিশ এখন এদেশের অহংকার। চলমান কোভিড-১৯ করোনা দূর্যোগ মূহুর্তে তা প্রমান করে আসছে পুলিশ। এখন আর পুলিশ সদস্যের স্বজন পরিচয় দিতে কারোর লজ্জা লাগেনা। এখন গর্ববোধ করি আমি বাংলাদেশ পুলিশের একজন সদস্য হতে পেরে। সঠিক ভাবে জনগণের সেবা দেওয়াই আমার কর্তব্য। আমি এক পয়সাও খরচ করে এ থানায় বদলী হয়ে আসিনি। আমার যেহেতু কোন প্রকার টাকা খরচ করতে হয়নি সেহেতু আমারও কোন প্রকার খরচ উঠিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন হবেনা। থানায় সেবা নিতে আপনারা কেউ পুলিশকে এক পয়সাও ঘুষ দিবেননা। আমরা বিনা পয়সায় আপনাদের সেবা করে যাবো। অত্র এলাকার নির্যাতিত অসহায় মানুষ অভিযোগ নিয়ে থানায় আসলে আমাদের পুলিশ বিনা পয়সায় অভিযোগ লিখে দিবে। থানার কোন অফিসার কিংবা পুলিশ সদস্য ঘুষ দূর্নীতিসহ কোন প্রকার অপরাধ কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকলে আমাকে অবগত করবেন। আমি তাৎক্ষনিক ওই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যবস্থা করবো। এ উপজেলা থেকে মাদক, জুয়া, চুরি, ডাকাতি, ইভটিজিং, বাল্যবিবাহ, দালালচক্র ও টাউট-বাটপারসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড প্রতিরোধ করে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে উপজেলার সকল শ্রণিপেশার মানুষের সহযোগিতা কামনা করে তিনি আরো বলেন, আপনারা আমাকে সহযোগীতার এক হাত বাড়ালে আমি দু' হাত বারিয়ে দোবো। আপনারা হাটু পানিতে নামলে আমি গলা পানিতে নামবো। এখন থেকে কষ্টকরে আপনারা যাতে থানায় যেতে না হয় আমি সেই ব্যবস্থা করতে আপনাদের সহযোগীতা চাই। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে আমি একটি অফিস করে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো। প্রতিটি অফিসে একজন অফিসারসহ দুই পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করে আপনাদের সুখ, দুঃখ ও অভিযোগ শুনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবে। মাসে চার দিন আমি উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে গিয়ে আপনাদের খোজ খবর নিবো ও কথা শুনবো। এখন থেকে আপনারা যাতে টাকা খরচ করে থানায় না যেতে হয় এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ত্রিশ শতাংশ অপরাধ সংগঠিত হয় মাদক থেকে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা'র নির্দেশ বাংলাদেশকে মাদক মুক্ত করা। মাদক মুক্ত করতে আপনাদের সহযোগীতা খুবই প্রয়োজন। আপনারা সহযোগীতা করলে সমাজ থেকে মাদকসহ বেশীরভাগ অপরাধ নির্মূল করা সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ। এ সময় গোবরিয়া আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্বাস উদ্দিনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইলহাম গ্রুপের চেয়ারম্যান দানবীর আলহাজ্ব ইয়াছির মিয়া। তিনি তার বক্তব্যে নব-যোগদানকৃত অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ কে এম সুলতান মাহমুদকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনাকে এখনই ভালো বলবোনা। আপনার কর্মেই আপনার ভালো মন্দের বিচার করা হবে। মনে রাখবেন আপনি প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী মাত্র। জনগনের ট্যাক্সের টাকায় আপনাদের বেতন হয়। আর সেই টাকা দিয়ে আপনাদের সংসার চালানোসহ সন্তানদের লেখাপড়া করানো হয়। তাই জনগনের সেবা দেওয়াই আপনাদের কর্তব্য। এ উপজেলা থেকে অপরাধ নির্মূল করতে হলে প্রথমে থানাকে দালাল মুক্ত করতে হবে। কোন চাপের মুখে যেন নির্যাতিতরা আপনাদের সেবা থেকে বঞ্চিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মিথ্যা মামলায় যেন কেউ হয়রানীর শিকার না হয় সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। অর্থের লোভে কিংবা কারোর প্ররোচনায় ও চাপের মুখে যেন মামলার তদন্তে অপরাধীদের মুক্ত করে দিয়ে নিরঅপরাধ ব্যক্তিকে আসামী না করে যেন সঠিক ভাবে তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদন কিংবা চুড়ান্ত রিপোর্ট দেওয়া হয়। তিনি আরো বলেন, আমরা যারা আওয়ামী লীগের রজনীতি করি তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিলো এ দেশকে সোনার বাংলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়ন করতে হলে মাদক, জুয়া, চুরি, ডাকাতি, বাল্যবিবাহসহ ঘুষ-দূর্নীতি সমাজ থেকে বিতারিত করতে হবে। তাহলেই সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে। তাই উপজেলা প্রশাসনসহ পুলিশকে সহযোগীতা করার জন্য এলাকাবাসীর প্রতি আহবান জানান তিনি। এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আলহাজ্ব মো. এনামুল হক, ছয়সুতী ইউপি চেয়ারম্যান মীর মো. মিজবাহুল ইসলাম, গোবরিয়া আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. এনামুল হক আবুবকর, আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, মো. গিয়াস উদ্দিন, মো. সালাহ উদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা লায়ন মো. আলী আকবর খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী মো. আব্দুল আওয়াল, মো. সামসুদ্দোহা শাফি, মো. শফিকুল ইসলাম সাফি, থানার সেকেন্ড অফিসার এস আই মো. আজিজুল হক, সাংবাদিক মুহাম্মদ কাইসার হামিদ, ইউপি সদস্য সাইদুজ্জামান, দ্বীন ইসলাম, জাকির হোসেন সাইফুল, যুবলীগ নেতা মোবারক হোসেন, ছাত্রলীগ নেতা কামাল হোসেনসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন, গোবরিয়া আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নাজিরুল ইসলাম। উল্লেখ্য, গত ৯ জুলাই কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল হাই তালুকদার সরকারী আদেশে জরুরী ভিত্তিতে মাদারীপুর জেলায় বদলীর আদেশ পাওয়ার সাথে সাথেই ঢাকা রেঞ্জ অফিস থেকে ইন্সপেক্টর এ কে এম সুলতান মাহমুদ কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে যোগদান করে রাত ১১ টার দিকে ওসি আব্দুল হাই তালুকদারের নিকট থেকে দায়িত্ব বুঝে নিয়ে মাঠে কাজ করছেন।