করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু আরও বাড়ার আশঙ্কায় তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য খাতের ব্যবসায়ীদের কারখানা চালু করার আবেদন বাতিল করে দিয়েছে সরকার। এ ছাড়া, ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ৫ আগস্ট পর্যন্ত চলমান বিধিনিষেধ আরও কঠোর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
পাশাপাশি, সংক্রমণ আরও বাড়তে থাকলে ৫ আগস্টের পর লকডাউন বাড়ানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। তবে, সংক্রমণের হার কমতে শুরু করলে সরকার কয়েকটি খাতে বিধিনিষেধ শিথিল করবে।
গতকাল মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
গত ১ জুলাই থেকে ১৪ দিনের জন্য ‘কঠোর’ বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন করতে শুরু করে সরকার। তবে, ঈদ উদযাপনের জন্য আট দিনের জন্য বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়। পরে গত ২৩ জুলাই থেকে আবারও দুই সপ্তাহের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ ঘোষণা করা হয়।
সরকারের উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকটি এমন দিনে অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেদিন দেশে করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে। গতকাল করোনা আক্রান্ত হয়ে ২৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছে দেশে। নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ১৪ হাজার ৯২৫ জন।
বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘চলমান বিধিনিষেধ ৫ আগস্ট পর্যন্ত চলবে। ব্যবসায়ী ও অন্যরা আবেদন জানালেও (কারখানার কাজ চালানোর) আমরা তা গ্রহণ করিনি।’
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে যখন পোশাক কারখানা খুলে দেওয়ার বিষয়টি উত্থাপিত হয়, তখন এটি নিয়ে আপত্তি তোলা হয়। এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে অনেক মানুষ ঢাকায় চলে আসবে এবং পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে বলে যুক্তি দেওয়া হয়।
সরকার এ ঝুঁকি নিতে চায় না’, বৈঠকে অংশগ্রহণকারী এক কর্মকর্তা বলেন।
বিধিনিষেধ চলমান থাকলেও, রাজধানীর রাস্তায় ব্যক্তিগত যানবাহনের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়তে দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া, গাড়ি, মাইক্রোবাস ও মোটরবাইকসহ অন্যান্য যানবাহনে করে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে পদ্মা পেরিয়ে ঢাকার দিকে আসতে দেখা যাচ্ছে যাত্রীদের।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, কোভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া রোধ করতে কঠোর লকডাউন কার্যকর করার বিকল্প নেই।
সোমবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, হাসপাতালের ৯০ শতাংশ শয্যাই রোগী দিয়ে পূর্ণ।
সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, ‘এভাবে সংক্রমণ চলতে থাকলে হাসপাতালে কোনো শয্যাই ফাঁকা থাকবে না।
জরুরি প্রয়োজনে কেউ বাড়ির বাইরে গেলে তার মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় গতকালের বৈঠকে। এ ছাড়া, বিধিনিষেধ সঠিকভাবে কার্যকর করার জন্য স্থানীয়ভাবে সচেতনতা গড়ে তোলারও চেষ্টা করবে সরকার।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আক্রান্তদের আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জনগণকে সচেতন করতে দেশজুড়ে জোরদার প্রচার চালানো হবে। এ ছাড়া, সম্মুখ সারির কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের (১৮ বছরের বেশি বয়সী) জরুরি ভিত্তিতে টিকা দেওয়া হবে।
পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণের জন্য ৫ আগস্টের আগে আরও একটি বৈঠক করারও সিদ্ধান্ত হয় গতকালের বৈঠকে।
গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আগামী ৭ আগস্ট থেকে সরকার ব্যাপকহারে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করবে। জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেখিয়ে যে কেউ টিকা নিতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দেখেছি যেসব দেশ গণটিকাদান কার্যক্রম চালিয়েছে, তারা সংক্রমণ কমাতে পেরেছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ এর উদাহরণ। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী টিকাদান অভিযানকে জোরদার করার নির্দেশনা দিয়েছেন। জাতীয় পরিচয়পত্রধারী যে কাউকে টিকা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
যাদের এনআইডি কার্ড নেই তারাও টিকাকেন্দ্রে নিবন্ধন করে টিকা নিতে পারবেন উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘শুধুমাত্র আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সদস্য বা সরকারি কর্মকর্তাই নয়, টিকাদান কর্মসূচিকে সফল করতে হলে জনপ্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় নেতাদেরও এতে অংশ নিতে হবে। তা না হলে আমরা এ পরিস্থিতি থেকে বের হতে পারব না।
বৈঠকের পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা টিকার ওপর জোর দিচ্ছি। ইউনিয়নগুলোতে টিকা কেন্দ্র স্থাপন করছি। স্থানীয়রা এনআইডি কার্ড দেখিয়ে সেখান থেকে টিকা নিতে পারবেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন, ‘হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের প্রায় ৭৫ শতাংশ বয়স্ক এবং তাদের ৯০ শতাংশ টিকা নেননি। তাদের মৃত্যু ঝুঁকি বেশি। আমরা সব বয়স্ক মানুষকে টিকা নিতে অনুরোধ করছি।
জাহিদ মালেক জানান, যাদের বয়স ৫০ বছরের বেশি, তারা টিকার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। এ ছাড়া, আরও টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিত হওয়ার পর ওয়ার্ড পর্যায়ে টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।