গোপালগঞ্জে মাছের শুঁটকি তৈরির ধুম

বাংলাদেশ

দুলাল বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি:

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে ঐতিহ্যবাহী চান্দার বিলসহ বিভিন্ন বিলগুলোর আশপাশের এলাকায় প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও শুরু হয়েছে মিঠাপানির মাছের শুঁটকি তৈরির কাজ। আর এ কারণেই উপজেলার বানিয়ারচর, জলিরপাড়,কলিগ্রাম, রাহুথর, সাতপাড়, রঘুনাথপুর, অন্ধারকোঠা, গোপালপুর জোয়ারিয়া, পাথরঘাটা,রাখিলাবাড়ী গড়ে উঠেছে শুঁটকি কেনা বেচার কেন্দ্র ও আড়ৎ। আর কয়েক দিন পরেই এসব কেন্দ্রে লাখ লাখ টাকার শুঁটকি কেনাবেচা শুরু হবে।

সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, সিলেট, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, সৈয়দপুর, রংপুর, কিশোরগঞ্জ ও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা এসে এখানকার মানসম্পন্ন শুঁটকি কিনে নিয়ে যায়। এ অঞ্চলের বৃহত্তম চান্দার বিলসহ অন্যান্য বিলের সুস্বাদু শোল, টাকি, পুটি, ভেদা, টেংরা, বাইন, কাকিলাসহ ছোট বিভিন্ন জাতের চিংড়ির শুঁটকির ব্যাপক চাহিদার জন্যই মৌসুমের প্রথমেই এখানে প্রচুর শুঁটকি তৈরি হয়। আর বিভিন্ন জেলার পাইকাররাও তা কেনার জন্য ভিড় জমায় এ আড়ত গুলোতে।

আশ্বিন-ফাল্গুন এই ছয় মাস গোপালগঞ্জ জেলার চান্দার বিলসহ অন্যান্য বিলের শুঁটকি তৈরির মৌসুম। আশ্বিন থেকে অগ্রহায়ণ পর্যন্ত বিলে জেলেদের জাল, বড়শি, আলোধারায় প্রচুর মাছ ধরা পড়ে ও পৌষ থেকে ফাল্গুন পর্যন্ত বিলের কুয়া বা পুকুর গুলোতে সেচ দিয়ে মাছ ধরা হয়। আর এই মাছের সিংহ ভাগই ব্যবহৃত হয় এখানকার শুঁটকি তৈরিতে। বাকি মাছ চলে যায় ঢাকার বিভিন্ন পাইকারি বাজারে। আর কিছু মাছ বিক্রি হয় স্থানীয় হাট-বাজারে।

শুঁটকি তৈরির মৌসুমে পুরুষদের পাশাপাশি এখানকার মহিলারাও হয়ে পড়ে কর্মব্যস্ত। মাছ বাছাই, মাছ কাটা-ধোঁয়া, শুকানো এবং ঘরে তোলার কাজ মহিলারাই করে থাকেন। শুঁটকি মৌসুমে এলাকার টেকেরহাট বন্দর, রাজৈর, জলিরপাড়, বানিয়ারচর ও সাতপাড়ের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোরও কর্মতৎপরতা অনেকগুণ বেড়ে যায়। শুঁটকি মাছের উচ্চমান, নিরাপদ ব্যবসার সুযোগ থাকার জন্যই বহিরাগত পাইকাররা প্রতিবছরই এই এলাকায় আসে। শুঁটকি ব্যবসার জন্য ডিডি বা টিটির মাধ্যমে পাইকারদের আনা টাকা এখানকার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো দ্রæত সরবরাহ করতে না পারায় সময় মতো শুঁটকি ক্রয়ে বিঘœ ঘটে বলে অনেকেই অভিযোগ করেন।
মাছ বাছাই করতে আসা মহিলারা জানান, আমরা এখানে মাছ কাটা, ধোঁয়া, বাছাইয়ের কাজ করে অনেকেই স্বাবলম্বী। প্রতিদিন কাজ করে আমরা ৬০ থেকে ৭০ টাকা মজুরি পাই। অনেকেই মাছের পেটা বা তেলের বিনিময়ে কাজ করে।

শুঁটকি প্রস্তুতকারী দীনবন্ধু দাস জানান, তারা ছোট ব্যবসায়ী, মূলধন অল্প। তাও লগ্নির টাকা। নিজের ব্যবসা কোনো লাভ-লোকসান বুঝি না। আমাদের মতো অল্প মূলধনের ব্যবসায়ীদের পক্ষে ন্যায্য মজুরি দেয়া সম্ভব নয়।
বানিয়ারচরের অমল বাড়ৈ জানান, আমি অনেক বছর যাবত শুটকি তৈরি করে আসছি। প্রাকৃতিক মাছ ক্রমান্বয়ে কমে যাওয়ার কারণে আগের তুলনায় শুঁটকির উৎপাদনও কমে যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.