পরিক্ষায় অংশ নিচ্ছে না বশেমুরবিপ্রবির দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী

বাংলাদেশ

দুলাল বিশ্বাস,গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিক এন্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইটিই) বিভাগের শিক্ষার্থীরা ফরম পূরণ না করে বিভাগ পরিবর্তনের এক দফা দাবি জানিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। ২৭ নভেম্বর সেমিস্টার পরিক্ষা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। ১৪ নভেম্বর ছিল ফরম পূরণের শেষ দিন। এ পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থীই ফরম পূরণ করেননি। ক্ষতির মুখে পড়বেন জেনেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনরত ইটিই বিভাগের ১শ ৫৮ জন শিক্ষার্থী।

 

 

শিক্ষকদের সাথে এ বিষয়ে কথা হলে ইটিই বিভাগের চাকরির বাজারে বর্তমান অবস্থান এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইটিইর বিলুপ্তির বিষয়টি স্বীকার করে বিভাগ পরিবর্তন পূর্বক এই সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন শিক্ষকরা। কিন্তু টানা ২৪ দিন পার হয়ে গেলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি । কেন ইটিই বিভাগের রূপান্তর চান এসব যৌক্তিকতা তুলে ধরে শিক্ষার্থীরা বলেন, ইইই বিভাগের সিলেবাসের সাথে ইটিই বিভাগের সিলেবাসে ৮০-৯০ ভাগ মিল রয়েছে। তা সত্তে¡ও চাকুরিক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে ইটিই বিভাগেরশিক্ষার্থীদের। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) ও পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) কর্তৃক গৃহীত পরিক্ষায় ইটিই বিভাগের জন্য স্বতন্ত্র কোনো সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়নি। সেজন্য ইইই বিভাগের প্রণীত পাঠ্যসূচি অনুযায়ী পরিক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে হয়। ইটিই এর বিষয়ভিত্তিক অধিকাংশ চাকরিগুলোতে ইটিই এর গ্রাজুয়েটদের পরিবর্তে ইইই গ্রাজুয়েটদের থেকে আবেদন আহŸান করে। বিষয়ভিত্তিক বিকল্প হিসেবে ইইই বিভাগকে গুরুত্ব

দেয়া হয় কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ইটিই বিভাগের গুরুত্ব পাওয়ার কথা। এখানেও বৈষম্যের শিকার হচ্ছি আমরা। বিসিএস পরীক্ষায় ইটিই বিভাগের নির্দিষ্ট কোনো বিষয় কোড নেই। যার ফলে টেকনিক্যাল ক্যাডার পদে ইটিই গ্রাজুয়েটদের অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ থাকছে না। বাধ্য হয়েই শুধুমাত্র সাধারণ ক্যাডারে অংশ নিতে হয়। ইইই এর সিলেবাসের সাথে ইটিই এর সিলেবাসের সংগতি ও সরকারি বেসরকারি সকল চাকরিতে ইটিই গ্রাজুয়েটদের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে ইতিমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান, ইলেকট্রনিক্স ও কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (এপিইসিই) বিভাগকে ইইই বিভাগে রূপান্তরিত করা হয়েছে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইটিই ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসিই বিভাগকে ইইই তে রূপান্তরিত করা হয়।

অথচ বশেমুরবিপ্রবিতে ২০১৭ সালে এপিইসিই বিভাগকে ইটিই বিভাগে রূপান্তরিত করা হলেও পাঠ্যসূচিতে এপিইসিই এর সিলেবাস অনেকটাই অনুরূপ রয়েছে। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (পিএসসি) থেকে টেলিকমিউনিকেশন ক্যাডারটি সরিয়ে নেয়া হয় ২০১০ সালে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী
বিশ্ববিদ্যালয় তাদের এপিইসিই বিভাগ কে ইইই বিভাগে রূপান্তরিত করেছে। তখন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ইটিই বিভাগে রূপান্তরিত করা হয়। যা ছিল তৎকালিন প্রশাসনের একটি অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইটিই বিভাগ বিলুপ্ত প্রায়। ফলে চাকরি ক্ষেত্রে বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছে ইটিই বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইটিই বিভাগের চেয়ারম্যান ও ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শাহজাহান বলেন, ইটিই বিভাগের শিক্ষার্থীরা এক দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন করে আসছে। আমি তাদেরকে ক্লাসে ফেরাতে চেষ্টা করেছি। সারাদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও ইটিই বিভাগ চলমান রয়েছে। ওই সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের

শিক্ষার্থীরা যদি পাশ করে চাকরি পায় তাহলে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষার্থীরা পাবে না কেন। উল্লেখ্য ২৭ অক্টোবর থেকে একাডেমিক ভবনের শ্রেণিকক্ষের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছেন ইলেকট্রনিক এন্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইটিই) বিভাগের শিক্ষার্থীরা। ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের সঙ্গে যুক্ত হতে এক দফা দাবি নিয়ে প্রায় ১ মাস ধরে এ আন্দোলন করে আসছেন ইটিই বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.