ভৈরবে মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে ভূল চিকিৎসায় প্রসূতি মায়ের মৃত্যু।

বাংলাদেশ

 

শাহীন সুলতান, দৈনিক আজকের মেঘনা কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :

কিশোরগঞ্জের বন্দরনগরী ভৈরবে মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার (১২ অক্টোবর) বেলা ১১টায় ভুল চিকিৎসায় রানু বেগম (৩২) নামে এক প্রসূতি মায়ের মৃত্যু হয়েছে বলে স্বজনরা দাবী করছেন।

নিহত রানু বেগম পার্শবর্তী নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার আলগী মানিকনগর গ্রামের শাহজাহান মিয়ার স্ত্রী।

স্বজনরা সাংবাদিকদের জানান, গত বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) রানু বেগমের প্রসব ব্যাথা শুরুতে হলে তাকে ভৈরব পৌর শহরের মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে ভর্তি করার পর বৃহস্পতিবার সিজারিয়ান অপারেশনে মাধ্যমে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। তখন মা ও ছেলে সুস্থ ছিল বলে চিকিৎসকরা জানান।

এর ২ দিন পর শনিবার (১২অক্টোবর) সকাল বেলা প্রসূতি মা সুস্থ্যভাবে চলাফেরা করে সুস্থ্যতা বোধ করে। তখন সে ফোনে স্বজনদের জানান তাকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এর কিছুক্ষণ রানু বেগমের মা রানুকে হাসপাতালে দেখতে আসলে হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা রানুর মাকে রুম থেকে বের করে দিয়ে রানুর চেকআপ করে। এ সময় রানুর সামান্য শ্বাসকষ্ঠ দেখা দিলে নার্সের মাধ্যমে তাকে ইনজেকশন পুশ করা হয়। এর পরেই রানুর অতিরিক্ত মাত্রায় খিচুনি দেখা দিলে তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেয় কর্তব্যরত চিকিৎসক।

রানুর পরিবারের লোকজনদের ঢাকা যাওয়ার প্রস্তুতির সময় না দিয়ে হাসপাতালের লোকবল নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ডেকে প্রসূতি মাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়। স্বজনরা জানেও না কোন হাসপাতালে নিবে। কোন প্রকার রেফার্ড কাগজও তাদের হাতে দেওয়া হয়নি। তবে স্বজনদের দাবী প্রসূতি মায়ের মৃত্যু হওয়ার পর তাকে তাড়াহুড়ো করে অ্যাম্বুলেন্সে ঢুকিয়ে দিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

এ সময় হাসপতাল থেকে নারায়ণপুর যাওয়ার পর অ্যাম্বুলেন্সের চালক তেল নেওয়ার জন্য পাম্পে গাড়ীটি দাঁড় করান। স্বজনরা দেখতে পায় রোগী রানু বেগম নড়াচড়া নেই তখন তারা বুঝতে পারে সে মৃত্যুবরণ করেছে।

এ বিষয়ে রোগীর ভাসুর সবুজ মিয়া সাংবাদিকদের জানান, সকাল বেলা আমি খবর পাই মা ও ছেলে সুস্থ আছে। হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে যেতে হবে। পরক্ষণে খবর পাই রানু বেগমের অবস্থা খুব খারাপ তাকে ঢাকায় নিয়ে যেতে হবে। কিছু বুঝে উঠার আগেই আমাদের না জানিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অ্যাম্বুলেন্স ডেকে রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সে ঢুকিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দেয়।

খবর পেয়ে নারায়ণপুর পাম্পে গেলে দেখতে পায় রোগী মৃত অবস্থায় শুয়ে আছে। তখন চালককে বলি মৃত মানুষ ঢাকায় নিয়ে লাভ কি। হাসপাতালে নিয়ে যাও। তখন চালক তাকে হাসপাতালে আনতে রাজি হয়নি। গাড়ি রেখে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। এ সময় এলাকাবাসীর সহায়তায় তাকে পুনরায় হাসপাতালে নিয়ে আসি। ভাসুর সবুজ মিয়ার দাবী ভৈরবের মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের ভুল চিকিৎসায় তার ভাইয়ের স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। সকালেও সে চলাফেরা করেছে এবং সুস্থ ছিল।

এ বিষয়ে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার (ওটি) ইনচার্জ সিনিয়র নার্স মোছাঃ মোমেনা সাংবাদিকদের বলেন, ডাক্তারের নির্দেশে তিনি ওই প্রসূতি মাকে ইনজেকশন দিয়েছেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে মোমেনা বলেন, তিনি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন তবে ডাক্তারী বা নার্সের কোন প্রশিক্ষন নেয়নি তিনি। এমন কি এ ধরনের কোন কাগজপত্রও নেই তার। এছাড়া অষ্টম শ্রেণী পাশের কোন কাগজও দেখাতে পারেননি তিনি।

জানা যায়, নাম দস্তখত জানা মোমেনা প্রথমে মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের বর্তমান চেয়ারম্যান ডাঃ বুলবুল আহম্মদ এর হাত ধরে ভৈরব সেন্ট্রাল হাসপাতলে আয়া হিসেবে যোগদান করে দীর্ঘ দিন কাজ করার পর তিনি মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে এইড্ নার্স হিসেবে যোগদান করেন। এর পর থেকে ডাঃ বুলবুল আহম্মদ এর মন জয় করে মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের অপরেশন থিয়েটার (ওটি) ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ হাসপাতালের দ্বিতীয় মালিক ভাব নিয়ে কাজ করে আসছে। তার কথার বাইরে কেউ চললে খেসারত দিতে হয় চাকুরী হারিয়ে।

মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে ইতিপূর্বেও বেশ কয়েকজন রোগী মারা গিয়েছে বলে জানা যায়। হাসপাতালের মালিক ডাঃ বুলবুল আহম্মদ মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ এর এলাকার লোক হওয়ায় তিনি দাপট খাটিয়ে ও ক্ষমতাশীল দলের স্থানীয় কয়েকজন নেতাকে ম্যানেজ করে অদক্ষ ও কম শিক্ষিত ছেলে মেয়েদের কম বেতনে হাসপাতালে নিয়োগ দিয়ে গ্রামের সহজ সরল রোগীদের চিকিৎসা করে দেদাসে হাসপাতাল ব্যবসা চালিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা কামিয়ে নিচ্ছে।

এ বিষয়ে সাংবাদিকরা হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডাঃ বুলবুল আহমেদকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি ।

ভৈরব থানার সেকেন্ড অফিসার রাসেল মিয়া সাংবাদিকদের জানান, খবর পেয়ে আমরা হাসপাতালে গিয়ে অ্যাম্বুলেন্স সহ নিহত প্রসূতি মাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। স্বজনদের অভিযোগ পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.