করোনা ভাইরাস নিয়ে যা বললেন শাহাদত কবির।

বাংলাদেশ

শাহীন সুলতানা, কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য ও সেবা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মোঃ শাহাদত হোসেন কবির বলেন, আমি ডাক্তার বা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ কোনোটাই নই। এই সীমাবদ্ধতা মেনে নিয়েও গত কয়েকদিনের অভিজ্ঞতায় বিশেষ করে গ্রামেগঞ্জে বসবাসকারী বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষের সচেতনতার জন্য কিছু কথা না বলে পারছি না।

করোনা ভাইরাস খুবই ছোঁয়াচে। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি বা শারীরিক সংস্পর্শের মাধ্যমে এটি অতি সহজেই এটি আরেকজনের শরীরে সংক্রমিত হতে পারে। মাত্র একজন আক্রান্ত হলে তা পুরো পরিবার বা সমাজে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

(ক) যারা বিদেশ থেকে ফিরে এসেছেন, তাঁদের জন্য করণীয়ঃ

১। বিদেশফেরত ব্যক্তিকে বাধ্যতামূলকভাবে দুই সপ্তাহ বা ১৪ দিন সময় কোয়ারেন্টিনে (সঙ্গনিরোধ) থাকতে হবে। কোয়ারেন্টিন মানে হচ্ছে, আপনি সার্বক্ষণিক নির্দিষ্ট একটি ঘরে অবস্থান করবেন। এর বাইরে যাবেন না এবং বাইরে থেকে কেউ আপনার কাছে আসবে না। বিদেশ থেকে এসেছেন শুনে কেউ যেন আপনাকে দেখতে না আসে, তা নিশ্চিত করতে হবে।

২। বাড়িতে থেকে কারো সাথে আড্ডা দেয়া যাবে না। পরিবার বা পরিবারের বাইরের কারো সঙ্গে কোনো ধরনের মেলামেশা বা শারীরিক সংস্পর্শ ইত্যাদি করা যাবে না। এমনকি বউবাচ্চাকেও স্পর্শ করে আদর করা যাবে না। আপনি যত কম মেলামেশা করবেন, আপনার আত্মীয়স্বজন তত বেশি নিরাপদ থাকবেন।

৩। আলাদা টয়লেট ব্যবহার করতে হবে। সেটি সম্ভব না হলে টয়লেট ব্যবহারের আগে ও পরে ভালভাবে পরিষ্কার করতে হবে।

৪। খাবারদাবার সবকিছুই আলাদা করে খেতে হবে। বাসনপত্র আলাদা হবে। পরিবারের সদস্যদের সাথে একত্রে বসে খাওয়া যাবে না।

৫। জরুরী প্রয়োজনে কারো সাথে কথা বলতে হলে অবশ্যই ৪-৫ ফুট দুরত্ব বজায় রেখে কথা বলতে হবে এবং মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।

৬। বিদেশফেরত ব্যক্তি কোয়ারেন্টিনে না থাকলে তার বিরুদ্ধে প্রশাসন ও পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে তাকে জেল বা জরিমানা করা হবে।

১৪ দিন কোয়ারেন্টিন বা সঙ্গনিরোধে থাকার পর যদি করোনার কোনো লক্ষণ না দেখা যায়, তাহলে বুঝতে হবে তার শরীরে ভাইরাসটি নেই, অর্থাৎ তিনি ঝুঁকিমুক্ত।

আর যদি কোনো লক্ষণ দেখা যায়, তবে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। আইইডিসিআর বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হটলাইনে ফোন করে তাদের সাহায্য নিতে হবে।

করোনার লক্ষণঃ জ্বর, কাশি, গায়ে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি।

প্রতিরোধই হচ্ছে করোনা ভাইরাস মোকাবেলার সর্বোত্তম উপায়। সতর্ক না হলে আমাদের সবাইকেই এই রোগ গ্রাস করতে পারে। শুধু বিদেশফেরত ব্যক্তি নন, সবাইকেই সাবধান থাকতে হবে।

(খ) এই মুহূর্তে সবার যা করণীয়:

১। বারবার বেশি বেশি করে সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ধুয়ে পরিষ্কার করুন। বাইরে থেকে ঘরে ফেরামাত্র সাবান দিয়ে ভাল করে হাত ধুয়ে নিন।

২। পরিবারের অন্য সদস্যদেরকেও বারবার হাত ধুয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করুন। বাড়ির বয়স্ক লোকজন ও বাচ্চাকাচ্চাদের প্রতি বিশেষ নজর দিন।

৩। হাত দিয়ে চোখ-মুখ-নাক ইত্যাদি স্পর্শ করা যাবে না। জরুরী প্রয়োজন হলে স্পর্শ করার আগে ও পরে সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করে নিতে হবে।

৪। হাঁচি আসলে টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহারের পর ঐ টিস্যু ফেলে দিতে হবে। অথবা হাতের কনুইয়ের ভাঁজ দিয়ে নাক চেপে ধরতে হবে। রুমাল বা অন্য কোনো কাপড়ও ব্যবহার করা যায় এবং এটা অবশ্যই পরে সাবান ও গরম পানি দিয়ে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।

৫। কোনোভাবেই যেখানে সেখানে থুতু-কাশি ইত্যাদি ফেলা যাবে না। নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলে সঙ্গে সঙ্গে মাটিচাপা দিতে হবে অথবা পরিষ্কারভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।

৬। কারো সঙ্গে হ্যান্ডশেক বা কোলাকুলি করা যাবে না। জরুরী কথা বলতে হলে ৪-৫ ফুট দূর থেকে অথবা মোবাইলে কথা বলে শেষ করতে হবে।

৭। সব ধরনের পারিবারিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠান, সমাবেশ বা মেলামেশা বর্জন করুন। নিচের কাজগুলো একেবারেই করা যাবে নাঃ

 বাজারে বসে আড্ডা দেয়া,
 গল্পগুজব করা,
 বাচ্চাদের কোচিং ও প্রাইভেট,
 মাঠে বা অন্য কোথাও দলবেঁধে খেলাধুলা,
 আত্মীয় বা বন্ধুবান্ধবের বাড়িতে বেড়ানো,
 কোথাও ঘুরতে যাওয়া,
 গ্রাম্য বিচার-আচার বা সালিশ-দরবার,
 রাজনৈতিক নেতা বা অন্য কোনো ব্যক্তির জন্য মোটরসাইকেল বহর বা জমায়েত করা,
 সামাজিক অনুষ্ঠান যেমনঃ পাত্র-পাত্রী দেখা, বিয়ে-শাদি, দাওয়াত ইত্যাদি

৮। মসজিদের পরিবর্তে বাড়িতে নামাজ আদায় করুন। ওয়াজ-মাহফিলের মত ধর্মীয় জমায়েত এখন আয়োজন করবেন না।

৯। এ সময় কোনো ধরনের গ্রাম্য মেলা, বাউল গান, উৎসব বা আচার-অনুষ্ঠান আয়োজন করা যাবে না।

১০। বাজার-সদাই করার মত জরুরী কাজে দোকানে বা বাজারে গেলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেগুলো শেষ করে ঘরে ফিরে আসুন। চায়ের স্টলে বসে আড্ডা দেয়া পুরোপুরি বর্জন করুন।

১১। একান্ত জরুরী প্রয়োজন ছাড়া জেলা বা উপজেলা শহরে, অফিস-আদালতে যাতায়াত করবেন না।

১২। হাতের মত করে নিজের মোবাইল ফোনটিও পরিচ্ছন্ন রাখুন।

১৩। বাস-ট্রেন ইত্যাদি পাবলিক পরিবহন এড়িয়ে চলুন। দলবেঁধে ঘুরতে যাওয়ার সময় এটি নয়। ঘোরাঘুরি বাদ দিয়ে বাড়িতে অবস্থান করুন।

মনে রাখবেন, আপনার আমার সবার শত্রু এখন একটাই। নাম তার করোনাভাইরাস। এই শত্রুর বিরুদ্ধে কঠিনতম লড়াইয়ে জিততে হবে আমাদের। সবাই মহান সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করি। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও সবচেয়ে বড় সাহায্যকারী।
উল্লেখ্য, এই লেখার স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শগুলো বেশিরভাগই সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য থেকে সংকলিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.