কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) উপাচার্য গত ২৮ এপ্রিল বহিরগতদের নিয়ে শিক্ষকদের উপর হামলার পর প্রায় দুই মাস বন্ধ থাকার পর গত ২৩ জুন ক্লাসে ফিরেছে শিক্ষকরা। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত শিক্ষকদের পেনশন-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারসহ তিন দাবিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের কর্মবিরতির ঘোষণায় আবারও বন্ধ হচ্ছে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। এর ফলে তীব্র সেশনজটের দিকে আগাচ্ছেন কুবি শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, শিক্ষক-প্রশাসন দ্বন্ধের পর এবার পেনশন স্কীম সংক্রান্ত দাবি আদায়ে ক্লাস বন্ধ হওয়ায় হুমকিতে পড়ছে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের জীবন।
গত ২৪ জুন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো.আখতারুল ইসলাম ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ২৫, ২৬ ও ২৭ জুন অর্ধদিবস এবং ৩০ জুন পূর্ণ দিবস কর্মবিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে দাবি আদায় না হলে শিক্ষকরা ১ জুলাই থেকে সর্বাতœক কর্মবিরতির যাবেন বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। ৩০ তারিখ পর্যন্ত প্রথম দফার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা কর্মবিরতির আওতামুক্ত রাখা হলেও ১ জুলাই থেকে সকল প্রকার পরীক্ষা ও দাপ্তরিক কার্যক্রমও বন্ধ রাখা হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয় বিজ্ঞপ্তিতে। শিক্ষক ফেডারেশনের এ ঘোষণার সাথে একাত্মতা পোষণ করে কুবি শিক্ষকরাও ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে দুই মাস পর আবারও ব্যাহত হতে যাচ্ছে শিক্ষাজীবন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মহামারী করোনা, শিক্ষক-প্রশাসন দ্বন্দ্ব, বিভাগের শিক্ষক রাজনীতির কারণে ধ্বংস হচ্ছে জীবন। নতুন করে আবার যোগ হয়েছে শিক্ষক ফেডারেশনের আন্দোলন। পরিবারের স্বপ্ন পূরণের আশা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসলেও সে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন পার করতেই তাদের ছয় থেকে সাত বছর সময় লেগে যাচ্ছে। সবাই নিজেদের স্বার্থ আদায়ে আন্দোলন করলেও শিক্ষার্থীদের স্বার্থ দেখার কেউ নেই।
২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের জান্নাতুন নাইম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, করোনায় সৃষ্ট সেশন জট কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই শুরু হয় শিক্ষক-প্রশাসন দ্বন্দ্ব। এতে ক্লাস বন্ধ থাকে প্রায় তিন মাস। ২৩ তারিখ থেকে অল্প পরিসরে ক্লাস শুরু হলেও ১জুলাই থেকে সারা বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা শুধুই একাডেমিক ভাবে পিছিয়ে পড়বে না, সাথে মানসিকভাবেও ভেঙে পড়বে। যেসময় পড়াশোনা করে পেশাগত জীবন গড়ার কথা, সেসময় ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের হতাশায় দিন কাটাচ্ছি আমরা।
এ বিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবু তাহের বলেন, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সিদ্ধান্তে আমরা একমত পোষণ করছি। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের শিক্ষার্থীদের একটু বেশি ক্ষতি হবে। আমাদের প্রশাসনের কারণে এতদিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল। তবে দাবি আদায় হলে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে দেব।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, শিক্ষকদের অস্তিত্ব নিয়ে টানাটানিতে কোনো আপোষ হবে না। যতদিন আমাদের দাবি আদায় হবে না, ততদিন আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। আন্দোলন চলাকালীন শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসের কোনো নির্দেশনা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপাতত আমরা কোনো অনলাইন ক্লাসে যাব না। দাবি আদায় হওয়ার পরে শিক্ষকরা অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে দিবে।