ফেনীতে ভুল চিকিৎসায় নারী চিকিৎসকের মৃত্যু তদন্ত প্রতিবেদন দিতে আরও ৪ দিন সময় চেয়েছে কমিটি

ফেনী

ফেনীতে ভুল চিকিৎসায় ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক আকিফা সুলতানা টুম্পার (৩৯) মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন দিতে আরও চার দিন সময় চেয়েছে তদন্ত কমিটি। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে এ সময় চাওয়া হয়েছে বলে কমিটির পক্ষ থেক দাবি করা হয়েছে। শনিবার (২৯ জুন) রাতে ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন ফেনীর সিভিল সার্জন ডা. শিহাব উদ্দিন।

সিভিল সার্জন ডা. শিহাব উদ্দিন বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালকের নির্দেশনা মোতাবেক সার্জারি করার সময় জটিলতার পরিপ্রেক্ষিতে রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় গত ২৩ জুন (রোববার) পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে পাঁচ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছিল। কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দিতে আরও চারদিন সময় চেয়ে আবেদন করেছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে চার কার্যদিবসের আগেই তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে যারা ঘটনার সঙ্গে দায়ী থাকবেন, সে অনুযায়ী স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই তদন্ত কমিটিতে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. জালাল হোসেনকে সভাপতি করা হয়েছে। এতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি) ডা. মো. কামরুজ্জামান, দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুল ইসলাম, ফেনী জেনারেল হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি) ডা. তাহিরা খাতুন এবং জুনিয়র কনসালটেন্ট (অ্যানেসথেসিয়া) ডা. মো. ইলিয়াছ ভূঞা।

এ ব্যাপারে কমিটির সদস্য দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনার মূল কারণ উদঘাটনে তদন্ত কমিটির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আরও তদন্তের স্বার্থে চারদিন সময় চাওয়া হয়েছে। তারপর বিস্তারিত বলা যাবে।

কমিটির আরেক সদস্য ও ফেনী জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি) ডা. মো. কামরুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ফেনী প্রাইভেট হাসপাতালে গিয়ে এই ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি। পুনরায় আবার সেই হাসপাতাল পরিদর্শন করা হবে। তবে এখনো অ্যানেসথেসিওলজিস্ট চিকিৎসক আবদুর রহমানের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। যোগাযোগ করা হলে তিনি অসুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন। সবকিছু মিলিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে সুষ্ঠু ও বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রস্তুতের জন্য আরও সময় চাওয়া হয়েছে।

এর আগে গত ২১ জুন রাতে ল্যাপারোস্কোপিক সার্জন হিসেবে পরিচিত প্রফেসর ডা. কাইয়্যুমের ব্যক্তি মালিকানাধীন ফেনী প্রাইভেট হাসপাতালে ডা. আকিফা সুলতানার ল্যাপারোস্কোপি সার্জারি করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। সার্জারির আগে তাকে অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া হয়। অ্যানেসথেসিয়া প্রয়োগ করেন ডা. আবদুর রহমান নামে ফেনীর বাইরে থেকে আসা এক চিকিৎসক। এর পর থেকেই আকিফার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। পরিস্থিতি ভালো নয় দেখে সেখান থেকে তাকে প্রথমে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। কোনো উন্নতি না হওয়ায় পরদিন ২২ জুন ভোরে চট্টগ্রাম এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে ঢাকায় নেওয়ার পথে মারা যান ডা. আকিফা। ডা. আকিফার স্বজনদের অভিযোগ, ফেনী প্রাইভেট হাসপাতাল নামে ওই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিক ডা. কাইয়্যুমের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে আকিফার মৃত্যু হয়েছে। আকিফার চাচা ইকরাম উল্ল্যাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ভাতিজির এক সময়ের রুমমেট ফেনীতে কর্মরত ডা. নিলুফা পলির কথায় সে ফেনীতে ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি করাতে যায়। আকিফা একজন অভিজ্ঞ ও সিনিয়র অ্যানেসথেসিওলজিস্ট চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের মালিক ডা. কাইয়্যুম বৃদ্ধ একজনকে নিয়ে আসেন। বয়সের ভারে ওই ব্যক্তি নিজেই অসুস্থ। অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার পরই আমার ভাতিজির শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে।

তিনি বলেন, ভুল অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার পর শুক্রবার (২১ জুন) রাত ১০টার দিকে ফেনী প্রাইভেট হাসপাতাল থেকে আমাদের ফোন করে বলা হয় ঢাকা থেকে যেন আইসিইউ সম্বলিত অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ফেনীতে যাই। রাত ৩টায় আমরা ফেনী জেনারেল হাসপাতালে পৌঁছাই। সেখানে গিয়ে ডা. আকিফাকে আইসিইউতে সংকটাপন্ন অবস্থায় দেখতে পাই। তখন সেখানে অবস্থান করা হাসপাতালের চারজন চিকিৎসক ডা. আকিফাকে দ্রুত ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। কিন্তু শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার স্বার্থে চিকিৎসকদের পরামর্শে দুইজন চিকিৎসকসহ চট্টগ্রাম এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু এভারকেয়ারের মেডিকেল বোর্ড থেকে আমাদের জানায়, ফেনী প্রাইভেট হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার পর তার শারীরিক অবস্থার আর অবশিষ্ট কিছু নেই। ওই অবস্থায় তাকে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফেরত আনার কোনো সুযোগ নেই। তারা আশা ছেড়ে দেন। এরপর আমরা তাকে ঢাকায় নেওয়ার জন্য রওনা হই। কিন্তু পথেই সে মারা যায়।

উল্লেখ্য, ডা. আকিফা সুলতানা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের মো. গোলাম মোস্তফার দ্বিতীয় সন্তান। তিনি পরিবারের সঙ্গে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাবার ফ্ল্যাটে থাকতেন। ব্যক্তি জীবনে তিনি অবিবাহিত ছিলেন। ডা. আরিফা সুলতানা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে ৩৩তম বিসিএসের মাধ্যমে চিকিৎসা পেশায় যোগদান করেন। সর্বশেষ তিনি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিনিয়র ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন।  সূত্র: ঢাকা পোষ্ট

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.