প্রশ্ন ব্যবস্থাপনায় থাকছেন না পিএসসির কর্মকর্তারা

জাতীয়

নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এর অংশ হিসেবে পিএসসি কর্মকর্তাদের মডারেশন কক্ষে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা, পাসওয়ার্ড-সংবলিত অত্যাধুনিক ট্রাঙ্ক ব্যবহার, ডিজিটালি রুম বন্ধ করা ইত্যাদি পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। 

গত সোমবার আজকের পত্রিকাকে এসব তথ্য জানান পিএসসির চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন। তিনি বলেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে বিদ্যমান ব্যবস্থা যথাযথ কি না এবং তা আরও কীভাবে সুরক্ষিত করা যায়, এসব বিষয়ে পর্যালোচনা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যাঁরা প্রশ্নপত্র মডারেশন করবেন, তাঁরাও কক্ষে মোবাইল ফোন নিয়ে ঢুকতে পারবেন না। একই সঙ্গে পিএসসির কোনো কর্মকর্তাও প্রশ্ন মডারেশনের সময় কক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন না।’

৫ জুলাই অনুষ্ঠিত রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী পদের নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পিএসসির দুই উপপরিচালক, একজন সহকারী পরিচালকসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত এবং তাঁদের অবৈধ অর্থের উৎস অনুসন্ধানে তদন্ত করতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে নির্দেশনাও দিয়েছে পিএসসি।

পিএসসির চেয়ারম্যান বলেন, এ ঘটনার পর থেকে প্রতিদিনই বিকেল ৪টায় কমিশন সভা করে পুরো প্রক্রিয়ার চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন এবং সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।

এ ছাড়া প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগের ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে পিএসসি। এই কমিটির আহ্বায়ক পিএসসির যুগ্ম সচিব আব্দুল আলীম খান। এ ছাড়া পিএসসির পরিচালক মোহাম্মদ আজিজুল হককে কমিটির সদস্যসচিব এবং আরেক পরিচালক দিলাওয়েজ দুরদানাকে তদন্ত কমিটির সদস্য করা হয়েছে। কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

পিএসসির চেয়ারম্যান জানান, প্রশ্নপত্র মডারেশন শেষে মডারেটরই তা সিলগালা করবেন। এরপর মডারেটররাই তা সরাসরি দায়িত্বপ্রাপ্ত পিএসসির সদস্যের হাতে তুলে দেবেন। পিএসসির দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যসহ সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতিতে তা ট্রাঙ্কে রেখে সিলগালা করা হবে। এরপর ট্রাঙ্কটি সরাসরি চলে যাবে সুরক্ষিত ভল্ট কক্ষে। সেখানে সার্বক্ষণিক পুলিশি পাহারা ও সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। ফলে পিএসসির কোনো সদস্যের কক্ষে প্রশ্নপত্র রাখার প্রয়োজন হবে না।

পিএসসির চেয়ারম্যান আরও বলেন, যে ট্রাঙ্কগুলো এখন ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলো পরিবর্তন করা হবে। এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে অত্যাধুনিক ট্রাঙ্ক, যা হবে ডিজিটালি পাসওয়ার্ড-নির্ভর। আর পাসওয়ার্ড দিয়ে যাবেন মডারেটরই। এরপর তাঁরা আলাদা কাগজে পাসওয়ার্ড লিখে তা সরাসরি পিএসসির দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যের হাতে তুলে দেবেন। পাসওয়ার্ডের কাগজটিও থাকবে সিলগালা। এর ফলে প্রশ্ন ব্যবস্থাপনায় পিএসসির কোনো কর্মকর্তার সরাসরি সংশ্লিষ্টতা থাকবে না। দায়িত্বপ্রাপ্ত পিএসসির সদস্যরা একেবারে শেষ মুহূর্তে অনুমোদন সাপেক্ষে পাসওয়ার্ডের খামটি খুলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন। এ ছাড়া ডিজিটালি রুম বন্ধ করার মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর বাইরে আরও কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সেসব বিষয়েও চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

অভিযুক্তদের বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে সোহরাব হোসাইন বলেন, ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এবং তাঁদের অবৈধ অর্থ অনুসন্ধানে দুর্নীতি দমন কমিশনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কোচিং ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে চার কর্মকর্তা-কর্মচারী শোকজ করা হয়েছে। আরও কয়েকজন আছেন সন্দেহের তালিকায়। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে বা কাউকে সন্দেহ হলে তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অসাধু কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।

রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী পদের নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করা হবে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তাধীন কোনো বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।

সূত্রঃ আজকের পত্রিকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.