পদ্মা সেতুর অন্যতম চ্যালেঞ্জিং কাজ ছিল প্রমত্তা পদ্মা নদীতে পিয়ার তৈরি করা। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই চলছে পদ্মা সেতুর কাজ।সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নির্ধারিত সময়ের আগেই ৪২টি পিয়ারের মধ্যে সর্বশেষটির কাজ শেষ হচ্ছে মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) রাত ১০টায়। পদ্মা সেতুর একাধিক প্রকৌশলী এ খবর নিশ্চিত করেছেন।
পদ্মা সেতুর সহকারী প্রকৌশলী আহসান উল্লাহ মজুমদার শাওন বলেন, মঙ্গলবার সর্বশেষ পিয়ারের কাজ শেষ হতে যাচ্ছে দেখে অসম্ভব ভালো লাগছে। কারণ সাব-স্ট্রাকচার অংশের এই কাজটা অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। একসময় পদ্মা সেতুর পিয়ার তৈরিতে নদীর মাটির জটিলতার কারণে কিছু সমস্যা হয়েছিল। পরে নকশায় কিছু পরিবর্তন এনে সেই সমস্যা দূর করা হয়। তবে, আমি সবসময় বিশ্বাস করেছি সমস্যার কোনও না কোনও সমাধান পাওয়া যাবেই।
তিনি আরও বলেন, পিয়ারে বেইজড গ্রাউটিং, স্কিন গ্রাউটিং ও ফুললেন্থ স্টিল পাইলিং করা হয়েছে। আমাদের দেশে সাধারণত যেমন ব্যবহৃত হয় তার থেকে পদ্মা সেতুর বিয়ারিং প্যাডে ভিন্নতা আছে।পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক (মূল সেতু) দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের বলেন, পদ্মা সেতুর সর্বশেষ ৪২তম পিয়ার, যার আইডি নম্বর পি-২৬, এর কংক্রিটিংয়ের কাজ দুপুর ১২টায় শুরু হয়েছে। কংক্রিটিংয়ের কাজ শেষ হতে ১০ ঘণ্টার মতো সময় লাগবে। আজ রাত ১০টার দিকে শেষ হয়ে যাবে সেতুর সব পিয়ারের কাজ।
তিনি আরও বলেন, মূল সেতুর ৪২টি পিয়ার ছাড়াও মাওয়াপ্রান্তের ভায়াডাক্টে ৪৪টি পিয়ার ও জাজিরা প্রান্তের ভায়াডাক্টে ৪৭টি পিয়ার আছে। সব মিলিয়ে ১৩৩টি পিয়ারের কাজ শেষ হতে যাচ্ছে আজ। সংশোধিত প্রোগাম অনুযায়ী সেতুর শেষ পিয়ার করার লক্ষ্য ছিল ২০২০ সালের ৩০ এপ্রিল। তার আগেই কাজ শেষ হয়ে গেল আমাদের।
দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের বলেন, এসব পিয়ার সম্পূর্ণ করতে বেশ কিছু নতুন টেকনোলজি ব্যবহৃত হয়েছে, যা আগে কখনও বাংলাদেশে হয়নি। সার কথা, পদ্মা সেতু একটি মজবুত সেতু হবে এবং কমপক্ষে ১০০ বছর টিকবে।এর আগে গত শনিবার (২৮ মার্চ) সকালে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতুর ২৭তম স্প্যান বসানো হয়। ফলে দৃশ্যমান হয় সেতুর ৪০৫০ মিটার। বর্তমানে ৩৯টি স্প্যান আছে প্রকল্প এলাকায়।২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। মূল সেতু নির্মাণের কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে চীনের আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন।স্থানীয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশের অন্য সব চলমান প্রকল্পের মতো পদ্মা সেতুতেও করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে। বর্তমানে সেতুতে কাজ করছেন দেশি-বিদেশি প্রায় ১৫০০ কর্মী। যদিও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের আগে সেতুতে কর্মরত ছিলেন প্রায় সাড়ে চার হাজার কর্মী।প্রায় সাড়ে চার হাজার কর্মীর মধ্যে তিন হাজার কর্মী কাজে আসতে পারছেন না। বর্তমানে কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে রয়েছেন দেড় হাজারের মতো কর্মী।