অভাবের কারণে সব সময় বই কেনার সামর্থ্য হতো না ঢাকার কেরানীগঞ্জের নাসরিন আক্তারের। সহপাঠীদের কাছ থেকে বই ধার নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে গেছে সে। এর ফলও পেয়েছে। এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
নাসরিনের বাবা মান্নান মৃধা দিনমজুর। নাসরিনেরা দুই বোন, এক ভাই। স্বল্প আয়ে সংসার চালাতে মান্নানকে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হয়। তাই বাধ্য হয়ে প্রায় তিন বছর আগে তিনি মেয়েকে বলেন, ‘আমার পক্ষে সংসারের খরচ জোগানো কঠিন হয়ে পড়েছে। টিউশনি করে লেখাপড়ার খরচ জোগাতে পারলে পড়ো, নইলে নয়।’ এরপর থেকে নাসরিন দুই বেলা টিউশনি শুরু করে। নিজের টাকায় নিজের পড়াশোনার খরচ চালায়। কেরানীগঞ্জের জিনজিরা পীর মোহাম্মদ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
নাসরিন আক্তার বলেন, ‘আমার স্বপ্ন আমি ভালোভাবে লেখাপড়া করে চিকিৎসক হব। আমার স্বপ্নকে বাস্তবায়নে আমি পড়ালেখার পাশাপাশি টিউশনি করে আমার খরচ চালিয়েছি। টাকার অভাবে বই কিনতে পারিনি। সহপাঠীদের কাছ থেকে বই ধার নিয়ে পড়ালেখা চালিয়ে গেছি। আমার বাবা দিনমজুর। তাই বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা আমাকে বিনা বেতন পড়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। ক্লাস শেষে আমাকে আলাদাভাবে পড়িয়েছেন। আমি ভালো ফলাফল করেছি, কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হতে যে টাকার প্রয়োজন সেই টাকা দেওয়ার সামর্থ্য আমার পরিবারের নেই।’
জিনজিরা পীর মোহাম্মদ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু রায়হান বলেন, ‘নাসরিন আক্তার ২০১৭ সালে জেএসসি পরীক্ষায় সাধারণ বৃত্তি পাওয়ার পর সে আমাদের নজরে আসে। এরপর থেকে তার লেখাপড়ার প্রতি আমরা মনোযোগ দিই। দরিদ্র তহবিল থেকে বিনা বেতনে লেখাপড়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছিল। সে ভালো ফলাফল করেছে। অর্থের অভাবে যেন নাসরিনের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে না যায়।’