গলায় ঝোলানো সংবাদপত্রের আইডি কার্ড। সঙ্গে একটি ডিএসএলআর ক্যামেরা। দেখলে মনে হবে সে একজন সংবাদকর্মী। আসলে সে একজন ডাকাত সর্দার। বাড়ি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের বরপা আটিপাড়া। তার নাম মো. হোসেন আলী। সে ঢাকা থেকে প্রকাশিত ‘দেশ’ পত্রিকার ফটোসাংবাদিক পরিচয় দেয়। যে বাড়িতে ডাকাতি করবে সে বাড়িতে সাংবাদিক পরিচয়ে দিনের বেলায় র্যাকি করে আসত। কারও যাতে সন্দেহ না হয় তাই এমন পেশা বেছে নিয়েছে। এমন একজন ডাকাতকে গ্রেফতার করেছে সোনারগাঁ থানা পুলিশ। গ্রেফতারের পর পুলিশের চোখ ফাঁকি দেওয়ার জন্য কার্ডও দেখিয়েছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। সোনারগাঁয়ের শম্ভুপুরা ইউনিয়নের ভিটিকান্দি এলাকায় ডাকাতির ঘটনায় বারদি এলাকা থেকে গ্রেফতার হয় মো. হোসেন আলী। হোসেন একজন পেশাদার ডাকাত। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সে ডাকাতির কথা স্বীকার করেছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. কাউসার আহম্মেদের আদালতে হাজির করা হলে ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে সে অভিনব কৌশলে ডাকাতির কথা স্বীকার করে।
সোনারগাঁ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল কালাম আজাদ জানান, গ্রেফতার ডাকাত সর্দার মো. হোসেন আলী চালাক প্রকৃতির। সে ডাকাতির পাশাপাশি এমন একটি পেশা বেছে নিয়েছে, যে পেশায় কাজ করলে কেউ যেন তাকে অপরাধী হিসেবে বুঝতে না পারে। সে সাংবাদিকতার আড়ালে ডাকাত। ডাকাতি করার নতুন কৌশল হিসেবে টাকার বিনিময় দৈনিক দেশ পত্রিকার একটি আইডি কার্ড নিয়েছে। ডাকাত হোসেন আলী ডাকাতি করার আগে অভিনব কৌশল হিসেবে পত্রিকার আইডি কার্ড গলায় ঝুলিয়ে, হাতে ক্যামেরা নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে কোথায়, কোন বাড়িতে ডাকাতি করলে অনেক টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া যাবে সে সন্ধান করত। পরে ডাকাত সর্দার হোসেন আলী রাতের বেলায় ডাকাত দল নিয়ে ডাকাতি করার উদ্দেশে বের হতো। তখনও তার গলায় আইডি কার্ড ঝোলানো থাকত। রাস্তায় কোনো পুলিশ গতিরোধ করলে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ডাকাতদের বাঁচিয়ে নিত। ডাকাতি শেষে ফেরার পথেও গাড়ির সামনে গলায় সাংবাদিক লেখা আইডি কার্ডটি ঝুলিয়ে বসে থাকত ডাকাত সর্দার মো. হোসেন আলী।
এসআই আজাদ আরও জানান, সোনারগাঁয়ের শম্ভুপুরা ইউনিয়নের ভিটিকান্দি গ্রামে গত ১৫ জুন রাতে মনজুর হাজির বাড়িতে ডাকাতি সংঘটিত হয়। এ সময় গেট ও দরজার তালা কেটে সবার হাত-পা বেঁধে টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় সোনারগাঁ থানায় মামলা হয়। পরে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করে বুধবার রাতে পাঁচ ডাকাতকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় ডাকাতদের কাছ থেকে ওই বাড়ি থেকে খোয়া যাওয়া মালপত্র উদ্ধার করা হয়। ডাকাতদের তথ্যের ভিত্তিতে বারদি এলাকা থেকে ডাকাত সর্দার হোসেন আলীকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এ সময় তার কাছ থেকে দেশ পত্রিকার সরবরাহকৃত একটি আইডি কার্ড উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারের পর এসব চাঞ্চল্যকার তথ্য বেরিয়ে আসে তার কাছ থেকে।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ডাকাত সর্দার হোসেন আলী জানায়, তার বিরুদ্ধে আরও তিনটি ডাকাতি মামলা রয়েছে। মামলাগুলো আদালতে বিচারাধীন। তার ডান পায়ে একটু সমস্যা রয়েছে। ডাকাতির সময় তার কোনো অসুবিধা হয় না। ডাকাত দল যখন ডাকাতি করে তখন সে বাইরে অবস্থান করে। ডাকাতি শেষে সব মালপত্র তার কাছে হস্তান্তর করে ডাকাতরা। পরে স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি করে টাকা ভাগবাটোয়ারা করে দেয় সে। তবে লুট করা মালপত্রের অর্ধেক সে একাই ভোগ করত। ডাকাত হোসেন আলী আরও জানায়, সাংবাদিক পরিচয় দিলে লোকজন তাকে অপরাধী হিসেবে সন্দেহ করে না। এ জন্য দৈনিক দেশ পত্রিকা থেকে বিশ হাজার টাকার বিনিময়ে একটি আইডি কার্ড কেনে। পরে কার্ড নবায়নের জন্য ছয় মাস পরপর পাঁচ হাজার টাকা দিত সে।
সোনারগাঁ থানার ওসি মনিরুজ্জামান জানান, অপরাধ ঢাকার জন্য ডাকাত সর্দার হোসেন আলী অভিনব কৌশল ব্যবহার করেছে। ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে সে ডাকাতির কথা স্বীকার করেছে।সূত্র সমকাল