প্রিন্ট এর তারিখঃ ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪, ১:১৫ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ অক্টোবর ১৪, ২০২০, ৯:৫৮ এ.এম
কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২ জন। ভাইস-চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪ জন। মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২ জন।
নবীন-প্রবীণের এ ভোট যুদ্ধে বিজয়ের শেষ হাসিটা কার মুখে শোভিত? প্রায় ২৭৬০০০ হাজার ভোটের বিপরীতে মুখোমুখি মোট ৯ প্রার্থী। ১৫ টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এ উপজেলায়, ২০ অক্টোবর ভোটের দিনক্ষণের এরই মধ্য কাউন্টডাউন শুরু হয়েছে।
৪ অক্টোবর কুমিল্লা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মেজর মোহাম্মদ আলী (অব.) সুমন নৌকা প্রতীক ও বিএনপি'র প্রার্থী মোঃ সাইফুল আলম ভূঁইয়া ধানের শীষ প্রতীক পেয়েছেন।
ভাইস-চেয়ারম্যান প্রার্থী আমানউল্লাহ এসডু পেয়েছেন (চশমা), মোঃ তারিকুল ইসলাম নয়ন (তালা) এবং মোঃ বিল্লালুর রশিদ দোলন পেয়েছেন (টিয়া পাখি) প্রতীক, মো.রহুল আমীন পেয়েছেন (ধানের শীষ) প্রতীক।মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান প্রার্থী মোসাম্মৎ রোজিনা আক্তার (প্রজাপতি) এবং ফরিদা ইয়াসিন (ধানের শীষ) প্রতীক পেয়েছেন।
ভোটের মাঠে প্রচারণায় কোমর বেঁধে নেমেছেন ৮ প্রার্থী, বিভিন্ন কলা-কৌশলে ভোটারদের মন জয় করতে সবিনয়ে ভোট প্রার্থনায় দিন-রাত কাটছে প্রার্থীদের।
মেজর মোহাম্মদ আলী(অব.) সুমন তিনি বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি -মেঘনা) আসনের সাংসদ মেজর জেনারেল (অব.) মোঃ সুবিদ আলী ভূঁইয়ার জৈষ্ঠ্য সন্তান তিনি, তারুণ্যের প্রতীকখ্যাত জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে দীর্ঘ ৫ বছর ৬ মাস উপজেলার চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে দলকে সুসংগঠিত করণে তার রয়েছে বলিষ্ঠ ভূমিকা, বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের উন্নয়নে তার ভূমিকা প্রশংসনীয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিনবারের শাসনামলে তার বাবা এখানকার তিনবারের নির্বাচিত সাংসদ।এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নে তাদের পিতা-পুত্রের উন্নয়ন চিত্রের সফলতা ভোটের হিসেবে পজিটিভ বলে মনে করেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। তাই তার কর্মী সমর্থকরা মনে করেন আওয়ালীগের মনোনয়ন বোর্ড যোগ্যতা ও সফলতার নিরিখে মেজর মোহাম্মদ আলী (অব.) সুমনকেই নৌকা প্রতীক দিয়ে মূল্যায়িত করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আর তাকেই একাট্টা হয়ে ভোট দিবেন এ উপজেলাবাসি।
তাছাড়া তিনি বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালীন বিপদের সময়ে এ উপজেলাবাসির পাশে থেকে পরম সেবা দিয়ে, অসহায় মানুষদের খাদ্য সহায়তা দিয়ে এলাকার জনগণের ভূয়সী প্রসংশা কুঁড়িয়েছেন। ভোট ও জনপ্রিয়তা মিলে তিনি খুব শক্তিশালী ও জননন্দিত হেভিওয়েট প্রার্থী, আস্থা ও ভরসায় বিশ্বাসী আসন্ন উপজেলার চেয়ারম্যান হিসেবে মেজর মোহাম্মদ আলী (অব.) সুমন নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি সময়ের ব্যাপার মাত্র বলে মনে করছেন স্থানীয় আওয়ালীগের নেতা-কর্মীরা।
নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মেজর মোহাম্মদ আলী(অব.) সুমন বলেন," একটি গ্রহণযোগ্য ও অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনরায় আমার পক্ষে আসবে এতে আমি শতোভাগ আশাবাদী -ইনশাল্লা।"
বিএনপি'র মনোনীত প্রার্থী মোঃ সাইফুল আলম ভূঁইয়া, দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে বিএনপি'র মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকে একক প্রার্থী হিসেবে সাইফুল আলম ভূঁইয়াকে মনোনীত করছেন দলটির কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড। এক সময়ে দাউদকান্দি বিএনপি'র দুর্গ হলেও এখন দলীয় কর্মকাণ্ডে ঝিমিয়ে পরছে দলটির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।
বিএনপি'র ধানের শীষের প্রার্থী মোঃ সাইফুল আলম ভূঁইয়া জানান,"ভোটাররা যদি ভোট দেয়ার সুযোগ থাকে, নিরপেক্ষ ও অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাহলে ফলাফল আমার নির্বাচনী প্রতীক ধানের শীষের পক্ষে যাওয়াটাও অলৌকিক ঘটনার মতো কিছু ঘটে যেতে পারে বলে আমার বিশ্বাস।" তবে স্থানীয় বিএনপি'র নেতা-কর্মীরা এ নির্বাচনে কতোটুকু কোমর বেঁধে মাঠে নামবেন সেটিই দেখার বিষয়।বিএনপি'র, কর্মী-সমর্থকরা মনে করেন -যদি অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়। সাধারণ ভোটাররা যদি কেন্দ্রে গিয়ে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন বিএনপি'র প্রার্থী সাইফুল আলম ভূঁইয়া ধানের শীষ প্রতীকে বিজয়ী হবেন।
ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী সাইফুল আলম ভূঁইয়া বলেন,নির্বাচন সুষ্ঠু হয় কি-না তা নিয়ে চিন্তিত তবে যদি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় তাহলে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে আমি জয়ী হবো।"
বর্তমান ভাইস-চেয়ারম্যান আমানউল্লাহ এসডু বিগত সাড়ে ৫ বছরের সুবিধা নিয়ে অনেকটা অগ্রগামী। তিনি দু:সময়ে মানুষের পাশে থাকেন, করোনাকালীন সময়ে কর্মহীনদের সাহায্যার্থে তিনি ও তার একান্নবর্তী পরিবার ভালো ভূমিকা রেখেছেন তার বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মীরা মনে করেন আমানউল্লাহ এসডু ভাইস-চেয়ারম্যান পদে একজন হেভিওয়েট প্রার্থী তাই তারা মনে করেন জনরায় চশমা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষেই আসবে।
তবে বিগত দিনের সফলতা তার জন্য পজিটিভ। তিনি দায়িত্ব্যে থাকাকালীন সম্পূর্ণরুপে দুর্নীতিমুক্ত ছিলেন, বাড়তি কোনো সুবিধার মোহে কখনো আকৃষ্ট হন নি।তার সাফ কথা,আমি জনগণের জন্য রাজনীতি করি,নিজের আখের গোছাতে তিনি বিশ্বাসী নয়, তার আমৃত্যু জনসেবামূলক কাজ করে যাওয়াই ইচ্ছে তিনি যেকোনো মানুষের মন সহজেই জয় করতে পারেন।
পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ডও ভালো, সমাজ ও এলাকায় তার সুনাম রয়েছে, বিভিন্ন বিষয়ের আলোকে বুঝা যায়,তার বিজয়ের পথ সহজতর হতে পারে, সর্বশ্রেণীর মানুষের কমবেশি তার ইতিবাচক দিক।
তারিকুল ইসলাম নয়ন বর্তমান উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, তার রয়েছে উপজেলার প্রতিটি ওয়ার্ডেই নেতা-কর্মী। সুসংগঠিত ছাত্রলীগের কর্মীরা মাঠেঘাটে নয়নের জন্য ভোট প্রার্থনায় একাট্টা।উপজেলার প্রতিটি ওয়ার্ডেই তার কম-বেশি ভোট রয়েছে। উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নয়নের নেতৃত্বে করোনাকালীন সময়ে সাধারণ কৃষককের ধান কেটে মাড়াই করে ঘোলায় ধান ভরে দিয়েছিলো উপজেলা ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা, কর্মহীনদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার পৌঁছে দিয়ে বেশ সুনাম কুঁড়িয়েছেন নয়ন। তাই তার নেতা-কর্মীরা ও এলাকার মানুষ মনে করে উপজেলাবাসি একজন তরুণ হিসেবে নয়নের তালা প্রতীকে
ভোট দিবেন। সে হিসেবে নয়নের বিজয়ের পথ অনেকটা সুগম।
সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মোঃ বিল্লালুর রশিদ দোলনেরও রয়েছে বেশ জনপ্রিয়তা, তিনি এর আগে এ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস-চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, উপজেলার পূর্বে অবস্থিত ইলিয়টগঞ্জ উত্তর ও দক্ষিণ ইউনিয়নে তিনি একক প্রার্থী। এ দু' ইউনিয়নের সাধারণ ভোটাররা দোলনের প্রতিই বেশি আস্থা, তার এলাকাবাসী চায়,টিয়াপাখি প্রতীকের প্রার্থী বিল্লালুর রশিদ দোলনই ভাইস-চেয়ারম্যান হোক। এ জন্য দোলনকেও এগিয়ে রাখতে হয়। হয়তো তালা প্রতীকের প্রার্থী দোলনের পক্ষে বিজয়ের বন্দরে পৌঁছানো এসব কারণেই সম্ভব।
এদিকে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থীর সুবিধা নিতে চায় বিএনপি সমর্থিত ধানের শীষের প্রার্থী মো. রহুল আমিন। আওয়ামী লীগে ভাইস-চেয়ারম্যান পদে তিন প্রার্থী থাকাতে বড় সুবিধাজনক অবস্থানে আছে বিএনপি'র প্রার্থী। তবে এ নির্বাচনে বিএনপি'র প্রার্থী মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন, গণসংযোগে জোরালে ভূমিকায় কতোটুক অবতীর্ণ হতে পারবেন -সেটাই দেখার বিষয়।শেষ অবধি ভোটে মাঠে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী নির্বাচনে মাঠে থাকলে সাধারণ ভোটাররা কেন্দ্রে ভোট দিতে পারলে ভোটের ফলাফল ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে আসাটাও অস্বাভাবিক তেমন কিছু না।
অপরদিকে মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন দুই জন প্রার্থী। আওয়ামী লীগে ২ জন, রোজিনা আক্তার ও জেবুন নেছা জেবুন, জেবুন নেছা জেবুনের মামলা জটিলতার কারনে আটকে আছেন আর বিএনপিতে একক প্রার্থী।
বর্তমান উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান (সংরক্ষিত) মোসাম্মৎ রোজিনা আক্তার বিগত সাড়ে ৫ বছর দায়িত্ব্যে থাকাকালীন অত্যান্ত দক্ষতা ও সফলতার সাথে কাজ করেছেন।এলাকার উন্নয়নের ছোঁয়ায়ও তার রয়েছে ইতিবাচক ভূমিকা।বাল্যবিবাহ রোধ, নারীদের ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে কর্মসংস্থান এর ব্যবস্থা করেছেন, সেলাই মেশিন দিয়ে অসহায় নারীদের সাহায্য করেছেন। বিধবাভাতা ও বয়স্কাভাতার মাধ্যমে স্বজনপ্রীতিহীনভাবে সেবা দিয়ে অসহায় মানুষদের মনমনিকোঠায় স্থান নিয়েছেন। করোনাকালীন সময়ে নিজস্ব অর্থায়নে কর্মহীনদের সহযোগীতা করেছেন খাদ্যসামগ্রী বিতরণসহ তার অসংখ্য নেতা-কর্মী রোজিনার প্রজাপতি প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করছেন।তিনি যেখানেই যান সাধারণ ভোটারদের সাড়া পাচ্ছেন।সব পরিস্থিতি তার অনুকূলে থাকায় বলা যায়,প্রজাপতি প্রতীকের প্রার্থী রোজিনা আক্তার পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
বিএনপি'র ধানের শীষের প্রার্থী ফরিদা ইয়াসমিন (ডলি) মাঠে ভোট প্রার্থনা করছেন ভোটারদের দ্বারেদ্বারে গিয়ে,তবে মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান দু'প্রার্থীর মধ্য তিনিই একমাত্র উচ্চ শিক্ষিত।পরিচ্ছন্ন রাজনীতির ধারাবাহিকতা বজায় রেখে তিনি কাজ করেন, তবে তার কর্মী-সমর্থকরা মনে করছেন ভোটাররা যদি ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারে, নির্বাচন যদি সুষ্ঠু হয় তবে ধানের শীষের প্রার্থী ফরিদা ইয়াসমিনকেই সাধারণ ভোটাররা বেছে নিবে।
উল্লেখ্য, গত ১৫ সেপ্টেম্বর দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়। ২০ অক্টোবর এ উপজেলার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।