রাজশাহীর পবা উপজেলার দর্শনপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান রাজ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার হাসানের বিরেুদ্ধে এক যুবককে পেটানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। যুবকরে নাম বোরহানুল ইসলাম মিলন। বাড়ী পবার দর্শনপাড়ায়।
ফেসবুকে ত্রাণ না পাওয়ার স্ট্যাটাস দেয়ার অভিযোগে তাকে পেটানো হয় বলে জানান মিলনের মেজ ভাই বাবু মুন্না। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রণের কারণে সরকার ঘোষিত লকডাইনে মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এতে করে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ পড়েছেন বিড়ম্বনায়। অনেকের বড়িতে এখন এক বেলা খাবারের মত চাল ও ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য নাই। অথচ সরকার থেকে বার বার অসহায়, দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষের বাড়িতে বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও নেতৃবৃন্দদের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
কিন্তু দর্শনপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান রাজ তার পছন্দের লোকজনদের বার বার করে খাদ্য সামগ্রী প্রদান করছেন। প্রকৃত অসহায় ও দরিদ্র মানুষগুলো ত্রাণ সেবার বাইরে থেকে যাচ্ছে। এ বিষয়ে তার ছোট ভাই মিলন ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন বলে জানান তিনি।
তিনি জানান, ফেসবুক স্ট্যাটাসের জেরে গতকাল বেলা ১১টার দিকে চেয়ারম্যান মিলনকে ইউনিয়ন পরিষেদে ডেকে নিয়ে যান। সেখানে তিনি ও মেম্বার হাসান মিলনকে বেধড়ক মারধর করেন। এতে করে মিলনের হাতের আঙ্গুল ভেঙ্গে যায়। এছাড়াও শরীরে বিভিন্ন স্থানে জখম হয়েছে বলে জানান বাবু।
শুধু শারীরিক নির্যাতন করেই ক্ষান্ত হননি চেয়ারম্যান রাজ। তিনি ও মেম্বার মিলনকে কর্ণহার থানায় নিয়ে আসেন। এরপর থেকে মিলন থানা হাজতে রয়েছে। মিলনকে নির্যাতনের ঘটনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। এতে ক্ষোভে ফুঁসছেন জনগন। এ ঘটনার প্রতিবাদে দুপুর ১২টা থেকে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের শতাধিক নারী-পুরুষ থানায় এসে মিলনকে মারধর ও গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানান।
এসময়ে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আনোয়ারা, মেলজান, অজিফা, চম্পা ও সনিয়া বেগমসহ উপস্থিত অনান্য নারী পুরুষ বলেন, তারা এখন পর্যন্ত কোন প্রকার সরকারী ও বেসরকারী কোন সুযোগ সুবিধা বা খাদ্য সামগ্রী পাননি। অনেক কষ্টে তারা দিনানিপাত করছেন। তাদের এই সত্য কথা ফেসবুকে তুলে ধরার জন্য চেয়ারম্যান ও মেম্বার মিলনকে অমানবিকভাবে নির্যাতন করেছেন। সেই সাথে থানায় আটকে রেখেছেন।
এছাড়াও চেয়ারম্যান মেম্বার মিলে থানায় বসে থেকে তাদের কোন প্রকার কথা পুলিশকে বলতে দিচ্ছে না বলে জানান তারা। তারা বলেন, থানা বাউন্ডারীর মধ্যে গিয়ে আটকের প্রতিবাদ এবং মিলনকে ছেড়ে দেয়ার কথা বলতে গেলে মিলনের মেজ ভাই বাবু মুন্নাকে পুলিশ তাৎক্ষণিক আটক করে থানা হাজতে পুরে দেন। উপস্থিত সকলেই মিলন ও বাবুর নিঃশর্ত মুক্তি, নির্যাতনকারী চেয়ারম্যান এবং ইউপি সদস্য হাসানসহ দোষী সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে ত্রাণপ্রাপ্তির দাবী জানান।
এদিকে, মিলনকে মারধরে বিষয়ে থানায় বসা চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার ইউনিয়নের যতগুলো ত্রাণ-সামগ্রী এসেছিলো তা সুষ্ঠুভাবে বন্টন করা হয়েছে। আ্েরা অনেকে পাবেন। তবে মিলনকে মারধরের অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।
তিনি আরো বলেন, মিলন মিথ্যাগুজব ছড়িয়ে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছে। এ কারনে মিলনকে ধরে থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা করা হবে বলে জানান চেয়ারম্যান।
কর্ণহার থানার ওসি আনোয়ার আলী তুহিন বলেন, ত্রাণ নিয়ে মিথ্যা গুজব ছড়ানোর অপরাধে চেয়ারম্যানের মাধ্যমে বোরহানুল ইসলাম মিলনকে এবং এই ধরনের ভিডিও ধারণ করে মিথ্যা অপপ্রচার চালানোর মদদে মিলনের ভাই বাবু মুন্নাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে মিলনের পরিবারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কেউ থানায় এসে কোন অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান তিনি। সেই সাথে চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। এটা নিয়ে এখন মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান ওসি।