ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিতে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের কয়েকটি উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এসব জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বৃষ্টিও অব্যাহত আছে। আবহাওয়া অফিস আরও ৪৮ ঘণ্টা বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের ওয়েবসাইটের সকাল ১০টার তথ্য অনুযায়ী, কুশিয়ারা, মনু, ধলাই, খোয়াই, মুহুরি, ফেনী ও হালদা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। এর মধ্যে ফেনীর মুহুরি নদীর পানি গত ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে।
এই ৮ জেলা থেকে প্রথম আলোর সাংবাদিকদের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, পানির তোড়ে ভেঙে গেছে অনেকগুলো রাস্তা, বাঁধ ও ব্রিজের অংশ। ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে, পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কয়েক লাখ মানুষ। অনেকে পরিবার নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র আজকের বুলেটিনে জানিয়েছে, ভারতের ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী অঞ্চল এবং ত্রিপুরার ভেতরের অববাহিকায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলের বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হয়েছে।
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার কামারখাড়া অংশে গোমতী নদীর আইলে ফাটল ধরেছে। ফাটল অংশ দিয়ে পানি আসছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিয়েছে পাঁচ শতাধিক পরিবারের সদস্য। আজ সকাল ১০টায় সরেজমিনে দেখা যায়, আলেখারচর ব্রিজের উত্তর অংশে কামাড়খাড়া। এ অংশের বাঁধে পানি উত্তোলন লাইন ফেটে পানি বের হয়। এ সময় স্থানীয়রা বস্তায় মাটি ভরে বাঁধ শক্ত করে।
স্থানীয় বাসিন্দা এনামুল হক বলেন, গত দুই দিন ধরে বেড়িবাঁধের অবস্থা খারাপ। সকালে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। এ সময় কামাড়খাড়া অংশে ফাটল দেখা দেয়। আনিসুর রহমান নামের এক বাসিন্দা বলেন, তাঁর মাছের ঘের আছে। টানা তিন রাত নির্ঘুম কাটছে তাঁর।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, আজ সকাল ৭টায় পানি বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি আরও বাড়তে পারে। আর আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা সৈয়দ আরিফুর রহমান জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় কুমিল্লায় ২২০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আরও ৪৮ ঘণ্টা বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে।
নোয়াখালীর ৮ উপজেলাতেই পানি বেড়েছে। এখানে গত চার দিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির পানি আটকে থেকে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। জেলার সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ, সোনাইমুড়ী, চাটখিল ও নোয়াখালী সদরের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। কবিরহাট ও সুবর্ণচরে পরিস্থিতি বাকি উপজেলাগুলোর চেয়ে কিছুটা ভালো। নোয়াখালী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় নোয়াখালীতে ১৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি আরও ৪৮ ঘণ্টা হওয়ার পূর্বাভাস দেন তিনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বাঁধ ভেঙে গেছে। এই জেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ৩৪টি গ্রামের ৫ শতাধিক পরিবার বন্যাকবলিত অবস্থায় আছে।
হবিগঞ্জে খোয়াই নদীর পানি বিপৎসীমার ১৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হাবিব রেজা। জেলায় এখনো বৃষ্টি হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এই জেলায় ১৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
সূত্রঃ প্রথম আলো