কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের শীর্ষ ইয়াবা ডন ও তালিকাভূক্ত ইয়াবা কারবারি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদের লেঙ্গুরবিলস্থ প্রাসাদপ্রমো বাড়িতে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার ভোররাতের দিকে ঘটনাটি ঘটেছে বলে স্থানীয়রা জানায়। তবে কে বা কারা এ হামলা ও ভাঙচুরের সাথে জড়িত এ ব্যাপারে কেউ মুখ খুলেননি। এমনকি প্রশাসনও জানে না কারা এঘটনা ঘটিয়েছে। টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি ) প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের বাড়িতে ভাঙচুরের খবর শুনেছি, তবে কে বা কারা ভাঙচুর করেছে তা এখনো জানা যায়নি। এছাড়া তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো থানায় কোন অভিযোগ জানানো হয়নি, অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে পুলিশের ধারণা, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ ও গোয়েন্দা সংস্থা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকাভূক্ত ইয়াবা গডফাদার হওয়ায় টেকনাফ সীমান্তে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাদক বিরোধী তৎপরতায় জনগণের মাঝে মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে একধরনের ঘৃণার জন্ম নিয়েছে। হয়তো এই কারণে বিক্ষুদ্ধ জনতা ইয়াবা গডফাদারের বাড়িতে ভাঙচুর করেছে। তবে তাদের প্রতিপক্ষ বা দুর্বৃত্তরাও এধরনের কান্ড ঘটাতে পারে, সবকিছু খতিয়ে দেখা দরকার। সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, জাফরের বাড়ির সীমানা প্রাচীর, প্রধান ফটক, ঘরের দরজা, জানালা ও কক্ষের আসবাপত্র ভেঙে ঝাঝরা করে ফেলা হয়েছে। হামলার সময় ও পরবর্তী সময়ে এ বাড়ির কোন সদস্য ছিলনা বলে জানা যায়। লেঙ্গুরবিল গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, টেকনাফে ইয়াবা বিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকে তালিকাভূক্ত ইয়াবা ডন জাফর আহমদ ও তার ছেলে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়াসহ পরিবারের সব সদস্য পালিয়ে আত্মগোপন করেছে। বর্তমানে তার দুই তলা প্রাসাদপ্রমো বাড়িতে কেউ থাকেনা। এই অবস্থায় রাতের আধারে বুলডোজার দিয়ে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনাটি ঘটেছে, আমরা সকালে দেখেছি। প্রসঙ্গত, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ তালিকাভূক্ত ইয়াবা গডফাদার। ইয়াবা গডফাদারের তালিকায় তার তিন ছেলে সদর ইউপির চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়া, দিদার মিয়া ও মোঃ ইলিয়াছের নাম রয়েছে। এরমধ্যে, দিদার মিয়া গত ১৬ ফেব্রুয়ারী টেকনাফ হাইস্কুল মাঠে ১০২ জন ইয়াবা কারবারির আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে আত্মসমর্পন করেছেন। সাবেক এই উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর একসময় বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি পৌর বিএনপির সহ সভাপতি ছিলেন। পরবর্তী আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে তৎকালীন সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এরপর তিনি এমপি বদির বদন্যতায় উপজেলা চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হন। তিনি প্রতিবারই ক্ষমতাসীন দলের নেতার ভূমিকায় থাকায় ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে দেদারছে ইয়াবা কারবারে জড়িয়ে পড়েন। তার ছেলেরাও সীমান্তে ইয়াবার বড় বড় সিন্ডিকেট করে ইয়াবা কারবারের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেছে। সীমান্তে বর্তমানে ইয়াবা বিরোধী অভিযানের কারণে বর্তমানে তার পরিবারের সব সদস্যই এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। এছাড়াও সম্প্রতি দেশের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী হাজী সাইফুল করিম বন্দুক যুদ্ধে নিহত হওয়ার আগে এই জাফর আহমদ সহ ৩৩ জন ইয়াবা কারবারীর নাম প্রকাশ করে গেছেন।