স্যার আমারে বাচান, আমার শেষ হয়ে গেছে। কষ্ট করে সুদে টাকা এনে সাড়ে ৫
বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছিলাম কিন্তু গরম বাতাসে আমার সব শেষ হয়ে
গেলো। বৃহস্পতিবার কৃষি কর্মকর্তারা ধান ক্ষেত পরিদর্শনে গেলে কান্না জড়িত
কন্ঠে কথাগুলো বলেছিলেন গোপালপুর গ্রামের কৃষক অরুন বিশ্বাস। শুধু এই একজন
কৃষকই নয়, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভার
প্রায় ১৫ হাজার কৃষক গরম, শুস্ক ও বৃষ্টিবিহিন ঝড়ো বাতাসে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা রাকিবুল ইসলাম জানান, গত রবিবার রাতে
আধাঘন্টার গরম, শুস্ক ও বৃষ্টিবিহিন ঝড়ো বাতাসে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ১৫ হাজার
কৃষকের ১৮ হাজার বিঘা জমির বোরো ধান ঝলছে গেছে। এতে ৯২ কোটি টাকার
ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিরুপন করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়ন এক ফসলি জমি। এখানে ধানের
আবাদ বেশি। এ ইউনিয়নে ৮৮০ হেক্টর জমির ধান ঝলছে গেছে। এছাড়া ডুমুরিয়া
ইউনিয়নে ১৪’শ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। বাকি ৩ টি ইউনিয়ন ও ১ টি
পৌরসভায় আংশিক ক্ষতি হয়েছে। কষ্টের ফসল মুহুর্তের মধ্যে নষ্ট হওয়ায় কৃষক চোখে
মুখে অন্ধকার দেখছেন।
পাটগাতী ইউনিয়নের চিংগড়ী গ্রামের কৃষক কৃষ্ণ চৌধুরি বলেন, রবিবার রাতে
খুব গরম বাতাস অনুভব হয়। সকালে দেখি জমির সব ধানের শীষ ঝলসে গেছে।
পুরোক্ষেত সাদা বর্ন ধারণ করেছে। এবার ১৩ বিঘা জমিতে ধানের চাষ করেছিলাম
তার মধ্যে ৭ বিঘা জমির ধান ঝলসে গেছে।কুশলী গ্রামের কৃষানী মিনি বেগম
বলেন, গরম বাতাসে আমার সাড়ে ৪ বিঘা জমির হাইব্রিড ধান গরম বাতাসে ঝলসে
গিয়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। পরিবার পরিজন নিয়ে কিভাবে বাঁচব তা নিয়ে
দুঃশ্চিন্তায় আছি। এখন সরকার থেকে যদি সাহায্য সহযোগিতা পাই তাহলে
পূনারায় চাষাবাদ শুরু করতে পারবো।টুঙ্গিপাড়া কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জামাল
উদ্দিন বলেন, অনাকাঙ্খিত গরম, শুষ্ক ও বৃষ্টিবিহীন ঝড়ো হাওয়ায় প্রায় তিন হাজার
হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের অবশিষ্ট জমিতে পানি ধরে রাখা ও
সালফার স্প্রে করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তাতে জমির ধান ভালো থাকলে
কৃষকেরা ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবে।
এছাড়া ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে পাঠানো
হয়েছে। কৃষি অফিসের কর্মকর্তা ও মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা প্রতিনিয়ত কৃষকদের
দিকে নজর রাখছে ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করছে বলেও জানান ঐ কর্মকর্তা।