ব্যবসায়ী বন্দর হিসেবে ঝালকাঠিকে বলা হয় দ্বিতীয় কোলকাতা। এই অঞ্চলে দেরীতে হলেও ২০১৪ সনে শুরু হয় বিসিক শিল্প নগরীর নির্মান কাজ। ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪ বছরে সমাপ্ত হয়ে ২০১৮ সনের ২০ অক্টোবর আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্ধোধন করা হয়। এতে স্থানীয় উৎপাদনমুখী ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসার পরিসর বৃদ্ধির জন্য বুকে আশার দানা বাঁধলেও তা ভেস্তে যায় সরকার কর্তৃক এখানকার জমির অতিরিক্ত মুল্য নির্ধারনের জন্য। ১১.৮ একর জমির এই শিল্প নগরীটি উদ্ধোধনের দু’বছর পেরিয়ে গেলেও মাত্র ২৪ হাজার বর্গফুটের একটি প্লট বরাদ্দ হয়েছে। ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের অভিযোগ প্লটের মূল্য অতিরিক্ত বেশি হওয়ায় আগ্রহ হারান তারা। এ অবস্থায় কর্তৃপক্ষ প্লটের মূল্য কমিয়ে পুনরায় আবেদন আহ্বান করার জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছে বিসিক প্রধান কার্যালয়ে। এদিকে প্লট বরাদ্দ কমিটির সভাপতি ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক মোঃ জোহর আলী প্লটের মূল্য কমাতে বিসিক চেয়ারম্যান বরাবরে লিখিত আবেদন করলেও তা কোন কাজে আসেনি। এমনটাই জানিয়েছে ঝালকাঠি বিসিক কর্তৃপক্ষ। তারা আরো জানান, ৪টি ক্যাটাগরির ৭৯টি প্লটের অনুকূলে বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করেছিলেন ১১ জনে। প্লট বাছাই কমিটি যাচাই-বাছাই শেষে ৬ জনের আবেদন ত্রুটিমুক্ত ঘোষণা করেন। যার মধ্য থেকে সারেং ফার্নিচার কোম্পানী ২৪ হাজার বর্গ ফুটের একটি প্লট ১কোটি ৪৪লাখ টাকায় বরাদ্ধ নিয়েছে। বাকিরা অতিরিক্ত বরাদ্দ মূল্যের কারণে আর অগ্রসর হননি। বিসিক কতৃপক্ষ বলছে, এ.বি.সি এবং এস এই তিন ক্যাটাগরীর প্লটের প্রতি বর্গফুট নির্ধারণ করা হয়েছে ৬শ টাকা। তাতে ৬ হাজার বর্গ ফুটের এ ক্যাটাগরী ১টি প্লটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৬ লাখ টাকা, বি ক্যাটাগরীর ৪ হাজার ৫শ বর্গফুট প্লটের মূল্য ২৭ লাখ টাকা, সি ক্যাটাগরীর ৩হাজার ২শ বর্গফুট প্লটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ লাখ টাকা। এবং এস (বিশেষ) ক্যাটাগরীর প্লটের মূল্য (আনুপাতিকহারে) ১৮ লক্ষাধিক টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণের কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষ বলছে, জমির পরিমাণ কম হওয়ায় শিল্পনগরীর উন্নয়ন খরচ বেশি হয়েছে। সব মিলিয়ে এ প্লটের প্রতি বর্গফুটে খরচ পড়েছে ৫৯২ টাকা। কিন্তু ব্যবসায়ী এবং উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, অন্য জমির তুলনায় বিসিকের প্লটের মুল্য ৫ গুন বেশি। এমনটাই জানিয়েছে স্থানীয় ব্যবসায়ী জানে আলম জনি এবং উদ্যোক্তা জামাল শরীফ। এখানে প্লট গ্রহনকারী উদ্যোক্তা সারেং ফার্নিচারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহআলম জানান, বিসিক শিল্পনগরীটি তৈরি করা হয়েছে আমাদের পার্শবর্তী উপজেলা নলছিটি সিমারেখার মধ্যে এ এলাকায় জমির দাম খুবই কম। বিসিকের দর অনুযায়ী তাদের প্লটের কাঠা পড়েছে ১০ লাখ টাকার ওপরে। যা একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর পক্ষে কষ্টকর। ব্যবসার মূলধন দিয়ে বিসিকে প্লট কিনলে সেই ব্যবসায়ীর প্রতিষ্ঠান করতে আবার লোন নিতে হবে। প্রয়োজনে সরকারকে ভর্তুকি দিয়ে হলেও এখানে প্লটের মূল্য কমাতে হবে। বিসিক উপ-ব্যবস্থাপক মোঃ শাফাউল করীম নিউজবাংলা টুয়েন্টিফোর’কে বলেন, ছোট জমিতে শিল্পনগরীর গড়তে গিয়ে সরকারের উন্নয়ন খরচ বেশি হয়েছে। তাই প্লটের দামে তার প্রভাব পড়েছে। এ কারণে মূল্য বেশি হওয়ায় প্লট বরাদ্দের আবেদনে তেমন সাড়া পাইনি। তাই আমরা এ বিষয়ে পরবর্তী করণীয় ও সিদ্ধান্ত জানতে বিসিক প্রধান কার্যালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। প্লট বরাদ্দ কমিটির সভাপতি ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক মোঃ জোহর আলী প্লটের মূল্য কমাতে ইতিমধ্যে বিসিক চেয়ারম্যান বরাবরে লিখিত আবেদন করেছেন। এখনো কোন সিদ্ধান্ত আসেনি।