জ্বালানি তেল ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ইরি-বোরো চাষাবাদে ব্যায় বেড়েছে কৃষকদের, এতে উৎপাদন খরচ নিয়ে চরম দৃশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। শস্য ভান্ডার খ্যাত উত্তরের জেলা দিনাজপুরের ফুলবাড়ী সহ আশপাশ এলাকার বেশির ভাগ মানুষ কৃষি নির্ভরশীল। দেশের খাদ্য উৎপাদনে একটি বড় অংশের যোগানদাতা এই এলাকার কৃষকেরা। কৃষি উৎপাদনের এই এলাকায় শুধু মানুষই নয় বরং অধিকাংশ জীব জন্তুর জীবনচক্র আবর্তিত হয় কৃষিকে কেন্দ্র করেই। ভোগ্য পণ্যের মূল্যও অনেকটা নির্ভর করে কৃষির উৎপাদন খরচের উপর। উৎপাদন ব্যয় যত বেশি হয়, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যও ততোই বাড়ে। একদিকে তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষক যেমন তার উৎপাদন ব্যয় নিয়ে দুশ্চিন্তায়, অন্যদিকে সাধারণ মানুষ নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে শঙ্কিত।
বর্তমানে কৃষি উৎপাদন অনেকটা যন্ত্র নির্ভরশীল। জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে ব্যাপক হারে বেড়েছে এই অঞ্চলের কৃষি উৎপাদনের খরচ। জমি চাষ, পানি সেচ, ধান কাটা, মাড়াই, পরিবহনসহ সব কিছুতেই ব্যবহৃত হয় তেল চালিত যন্ত্র। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির ফলে প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যয় বৃদ্ধি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা। এতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। কৃষকরা জানান, প্রতি হেক্টর বোরো ধানের জমি প্রতিবার চাষে ট্রাক্টর ভাড়া পূর্বে ছিল ৮০০-৯০০টাকা। বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ১১০০-১২০০টাকা। উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় আঠারো হাজার ৯ শত ২৯ হেক্টর আবাদী জমি রয়েছে। এর মধ্যে এবছর বোরো ধান চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে। পুরো উপজেলায় কার্ডধারী কৃষক রয়েছে বোত্রিশ হাজার ৫শত ৫০জন, এদের বেশির ভাগ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল।
পৌর এলাকার কৃষক মন্টু মিঞ্চা এবং তমাল হোসেন বলেন, বোরো ধান রোপণের ক্ষেত্রে প্রতিটি জমি ভেদে ৪ থেকে ৬ বার চাষ করতে হয়। এক হেক্টর জমি চাষ করতে আগে খরচ হত ৪৮০০-৫৪০০টাকা। কিন্তু বর্তমানে একই জমি চাষ করতে ৬৬০০-৭২০০টাকা লাগছে। একই ভাবে পানি সেচের মূল্যও বাড়েছে। জ্বালানী তেল (ডিজেলের) দাম বৃদ্ধি পাওয়ায়, ধান কাটা, মাড়াই সহ পরিবহন খরচও বাড়বে। তবে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর থেকে বিনামূল্যে বীজ সহায়তা পাওয়ায়, কিছুটা উপকার হয়েছে। একই কথা বলেন উপজেলার খয়েরবাড়ী গ্রামের শাহিনুর ইসলামসহ অন্যন্য কৃষকরা।
পাওয়ার টিলার (জমি চাষ যন্ত্র) চালক সাইফুল বলেন,পূর্বে ডিজেলের দাম প্রতিলিটার ৬৫ টাকা ছিল যা বর্তমানে একলাফে বেড়ে হয়েছে ৮০টাকা। জালানী তেলের দাম বৃদ্ধি হওয়ার কারণে চাষের মূল্যও বেশি নিতে বাধ্য হচ্ছি। সরকার পানি সেচ কাজে বিদ্যুতে যেমন ভর্তুকি দিয়েছেন, তেমনি কৃষি কাজে ব্যবহৃত জ্বালানী তেলে ভর্তুকি দিলে উৎপাদন ব্যয় কম হত বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোছা: রুম্মান আক্তার জানান, উপজেলায় এবছর বোরো ধান চাষবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে সরকারীভাবে বিভিন্ন প্রণোদনার আওতায় উপজেলার প্রায় ৬ হাজার কৃষকের মাঝে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। সরকারি সহায়তায় কিছুটা হলেও উৎপাদন ব্যয় কমবে বলে আশা করেন।