করোনাকালে ডিআইজি হাবিবের অবদান অবিস্মরণীয়

জাতীয়

 

করোনার এই মহাবিপদময় দুর্যোগের সময় সবাই যখন অসহায় অবস্থা পার করছে তখন হাতে গোনা কিছু মানুষ এই মহামারি থেকে যেন মানুষ নিরাপদে থাকে, কিছুটা হলেও মানুষকে যেন স্বস্তিতে রাখা যায় সেই চেষ্টা করছে সমাজের হাতে গোনা কয়েক শ্রেণীর মানুষ। তাদের মধ্যে অন্যতম ভূমিকা পালন করছে বাংলাদেশ পুলিশ। জনগণকে রক্ষায় বলতে গেলে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে এক প্রকার যুদ্ধই করছেন বাংলাদেশ পুলিশের দুই লক্ষাধিক সদস্য। জনসেবার পাশাপাশি পুলিশ সদস্যদের সঠিকভাবে পরিচালনা ও তাদের পরিচর্যার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন কিছু পুলিশ কর্মকর্তা। করোনায় আক্রান্ত সম্মুখ যোদ্ধাদের সুস্থ করার জন্য কোমর বেঁধে নেমেছেন তারা। তাদেরই এক নক্ষত্রসম কর্মকর্তা পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ডিআইজি হাবিবুর রহমান বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)। মানুষের পাশে দেবদূত হয়ে দাঁড়ান ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান ব্যক্তিগত প্রচার ও প্রকাশ পছন্দ করেন না বলেই তাঁর আত্মত্যাগ অনেকের অজানা। আজ তাই কিছু কথা লিখতে মন চাইছে। তুলে ধরতে ইচ্ছে হচ্ছে কিছু মহতি উদ্যোগ।

ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলা পুলিশের করোনা আক্রান্ত প্রতিটি সদস্যের খোঁজ নিচ্ছেন, হাসপাতালে যাচ্ছেন এবং তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করছেন ডিআইজি হাবিবুর রহমান। প্রায়ই ছুটে যাচ্ছেন আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের খোঁজ খবর নিতে। আর তা দেখে অনেক পুলিশ সদস্য আবেগে, আনন্দে আত্মহারা হয়ে অবিশ্বাস নিয়ে তাকিয়ে থাকেন। যারা দূরে তাদের সরাসরি মুঠোফোনে খোঁজখবর নিয়েছেন। তিনি নিজেও সশরীরে মাঠে নেমেছেন জনগণকে সাবধান করার লক্ষ্যে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে কথা বলছেন গাড়ির ড্রাইভারদের সাথে, যাত্রীদের সাথে, পথচারীদের সাথে। কিছুদিন আগে ডিএমপি কমিশনারের স্টাফ অফিসার এডিসি মাসুদ ভাইয়ের সাথে আলাপকালে জানতে পারলাম তিনি রাজারবাগে পুলিশদের জন্য নির্মিত করোনা হাসপাতালের দেখভালের দ্বায়িত্ব পেয়েছিলেন। তার কাছ থেকে জানতে পারলাম, সেখানে করোনা আক্রান্ত প্রায় প্রতিটি পুলিশ সদস্যকে হাবিবুর রহমান নিজে মুঠোফোনে কল দিয়েছেন, খোঁজ খবর নিয়েছেন, মনোবল বাড়ানোর জন্য অনুপ্রাণিত করেছেন। পাঠিয়েছেন উপহার সামগ্রীও।

এই যেমন কিছুদিন আগে একটি নিউজ বেশ ভাইরাল হয়েছিল। নারায়ণগঞ্জ পুলিশ কনস্টেবল সানোয়ার হোসেন আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হন রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে। এ তথ্য জানতে পেরে ডিআইজি হাবিবুর রহমান সঙ্গে সঙ্গে কল করলেন সানোয়ারকে। তার স্বাস্থ্যের খোঁজ নিলেন এবং কুশলাদি জানতে চাইলেন। এত বড় মাপের ও প্রিয় একজন পুলিশ অফিসারের ফোন পেয়ে সে যেন বিশ্বাসই করতে পারছিল না। আবেগে আপ্লুত সানোয়ার এক পর্যায়ে আর্জি জানালেন যে করোনায় তার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে তার পরিবারকে তিনি যেন দেখে রাখেন। এ কথা শুনে হাবিবুর রহমান নিজেও আবগে আপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি সানোয়ারকে সাহস দিয়ে ফোন রেখে দিলেন। সানোয়ারের বাড়ির নম্বর সংগ্রহ করে ফোন দিলেন। সন্তান নিয়ে মহা চিন্তিত পরিবারের সাথে কথা বলে বুঝে গেলেন যে লকডাউনের প্রভাবে অভাবে পড়েছে এই পরিবারটি। সাথে সাথে সেখানে পর্যাপ্ত খাবার পাঠানোর ব্যবস্থা করে দিলেন যেন তাদের অন্তত এই অধ্যায় নিয়ে আর চিন্তা করতে না হয়। এরপর এক নারী কনস্টেবল আক্রান্ত হওয়ার পর তাকেও সরাসরি ফোন দিয়ে খবর নিয়েছিলেন তিনি। অবাক-বিস্ময়ে আর আবেগে সেও কান্না রোধ করতে পারেনি, তার আইডল অফিসারের ফোন পেয়ে। এ সব খবরগুলো জানা গিয়েছিল সেই আবেগ আপ্লুত পুলিশ সদস্যদের দেওয়া স্ট্যাটাস থেকে।

এ তো গেল পুলিশ সদস্যদের জন্য তার প্রচেষ্টার কথা। কিন্তু এত কিছু করতে গিয়ে নিজের পরিবারকেও ত্যাগ করেছিলেন তাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে। তার আত্মত্যাগ যে কোনো বিবেকবান মানুষকে নাড়া দেবে তাই বলতেই হয়। জনগণের সেবার জন্য, চাকরির জন্য তাকে বাইরে যেতেই হবে। যে কোনো সময় সংক্রমণ হতে পারে। তার অফিস থেকে বাসার দূরত্ব হেঁটে গেলেও ১০ মিনিটের বেশি লাগার কথা নয়। অথচ রোজার ঈদের আগে ৩৮ দিন তিনি বাসায় যাননি। বাসায় ছোট্ট ৩-৪ বছরের শিশু আফতান বাবাকে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে অপেক্ষারত। ৩৮ দিন পরে শেষ রোজার (৩০ রোজা) দিন সন্ধ্যায় তিনি তার সরকারি বাসভবনে যান। ছেলেকে বুকের মধ্যে নিতে পারেননি আবার ছেলেও পারেনি বাবার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে আদর সোহাগ নিতে। শুধু দূর থেকেই দেখেছে কথা বলেছে। ঈদের পরে আবারও তিনি আলাদা থাকা শুরু করেন। আমার জানামতে, আজকে পর্যন্ত তিনি পরিবারের সঙ্গ ত্যাগ করে আলাদা ভাবে থাকছেন। তাছাড়া গরিব ও অসহায়দের মাঝে, বিশেষ করে বেদে, হিজড়া ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের মাঝে ত্রাণ নিয়ে ছুটে গেছেন বিভিন্ন এলাকায়। দেশের এই কঠিন দুঃসময়ে শত ব্যস্ততার মধ্যেও ভুলে যাননি বেদে সম্প্রদায় এবং হিজড়া সম্প্রদায়ের মানুষদের। যতটা সম্ভব চেষ্টা করেছেন খাদ্যসামগ্রী সংগ্রহ করে সুবিধা বঞ্চিতদের কাছে পৌঁছে দিতে। কিছুদিন আগে আমি শুধু বলেছিলাম, ‘ভাইয়া আমার এলাকায় কিছু মানুষ যারা খুবই অভাবে আছে, কিন্তু চক্ষু লজ্জার কারনে যেয়ে ত্রাণও চাইতে পারে না।’ কয়েক ঘণ্টা পরেই ফোন পেলাম উনার, ‘বোরহান ঠিকানা বলো। তোমার কাছে আজকে পৌঁছে যাবে তাদের জন্য উপহার সামগ্রী। মধ্যবিত্ত মানুষগুলোকে গোপনে গোপনে খাবার গুলো পৌঁছে দিবা।’ এখনো মনে পড়ে সেই দিনটির কথা। মানুষগুলো যখন এই উপহারগুলো পেয়েছিলো তাদের সে আবেগময় হাসি ভোলার মত নয়। তাছাড়া পুলিশের

পাশাপাশি মাঠে কাজ করা সাংবাদিকদের প্রতিও খেয়াল রাখার চেষ্টা করেছেন তিনি। তাদের সুরক্ষার জন্য ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলায় সাংবাদিকদের দিয়েছেন করোনা সুরক্ষা সরঞ্জাম। করোনার মত মহামারির মধ্যে ডিআইজি হাবিবুর রহমান যেনো এক টুকরো স্বস্তির আলো।

করোনার ভয়াল সংক্রমণ কেড়ে নিচ্ছে মন্ত্রী, এমপি থেকে শুরু করে কত শিল্পপতি। এই যেমন গতকাল চলে গেলেন যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুল। আইসিইউ সুবিধা কিংবা অক্সিজেন সিলিন্ডারের জন্য কত হাহাকার! চারিদিকে মৃত্যুর মিছিল দেখার পরেও তিনি যেভাবে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন তা ভাষায় প্রকাশ করার মত জ্ঞানী এখনো হয়ে উঠিনি। তবে উনাকে আদর্শ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.