দেশে আসছেন নিউ ইয়র্কের ‘‘করোনা যুদ্ধের হিরো’’কুমিল্লার কৃতি সন্তান ডা. ফেরদৌস খন্দকার

জাতীয়

দেশে আসছেন নিউ ইয়র্কের ‘‘করো

নিউ ইয়র্ক ছেড়ে এবার দেশে যাচ্ছেন ”করোনা যুদ্ধের হিরো” ডা. ফেরদৌস খন্দকার। করোনা মহামারীর এই দু:সময়ে এলাকা ও দেশের মানুষের পাশে থাকতে চান তিনি। শনিবার একটি বিশেষ ফ্লাইটে নিউ ইয়র্ক থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন তিনি।

খ্যাতিমান এই চিকিৎসক নিউ ইয়র্ক মেইলকে জানান, নিউ ইয়র্কের অবস্থা এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো। করোনা আক্রান্ত রোগির সংখ্যা কমে গেছে। এখানকার মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ঘরে থাকার কারণে বাঙালি কমিউনিটির মধ্যে করোনা আক্রান্ত নেই বললেও চলে। কিছুদিন আগেও বাসায় গিয়ে চিকিৎসা সেবা দিয়েছি। এখন পরিস্থিতি অনেক ভালো। অন্যদিকে বাংলাদেশে আস্তে আস্তে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এজন্য আমার মনে হচ্ছে মহামারির এই দু:সময়ে দেশের মানুষের পাশে থাকাটা খুব জরুরী।

তিনি আরো বলেন, দেশ আর দেশের মানুষের জন্য সবসময় মন কাঁদে। ফ্লাইট চালু থাকলে আরো আগেই যেতাম। আমার দ্বারা যদি কিছু মানুষের উপকার হয় তাহলে সেটাই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। নিউ ইয়র্কের বিখ্যাত মাউন সাইনাই হাসপাতালের এই মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বলেন, এলাকার সাধারণ মানুষের চিকিৎসার পাশাপাশি সচেতনতা এবং মানসিক শক্তি বৃদ্ধি এই মুহুর্তে খুব প্রয়োজন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এলাকায় গেলে আমি সেই কাজটি খুব সহজেই করতে পারবো।

ডা. ফেরদৌস খন্দকার জানান, ঢাকায় এবং কুমিল্লায় সাধারণ রোগিদের জন্য একটি “আরজেন্ট কেয়ার” ক্লিনিক করতে চাই দুই মাসের জন্য। করোনা আক্রান্ত রোগিদের জন্য সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা ব্যহত হচ্ছে। আবার করোনার ভয়ে বহু মানুষ হাসপাতালে যেতে ভয় পাচ্ছে। অথচ তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা খুব প্রয়োজন। এসব মানুষের জন্যই তিনি এই বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেবেন। আর করোনার জন্য কেউ পরামর্শ চাইলে সেব্যাপারে নিজের অভিজ্ঞতানুযায়ী সহযোগিতা করবেন বলেও জানান তিনি।

গত মার্চ মাসে নিউ ইয়র্কে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শুরু হলে অন্য সব চিকিৎসকরা যেখানে চেম্বার বন্ধ করে বাসায় চলে গিয়েছিলেন সেই দু:সময়ে একমাত্র ডা. ফেরদৌস খন্দকার সাহস নিয়ে মরণব্যাধী করোনা মোকাবেলায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। চেম্বার খোলা রেখে করোনা আক্রান্ত মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন গত তিনমাস ধরে।

শুধু নিউ ইয়র্কে নয় একইভাবে দেশেও তিনি অনেক ধরনের সহায়তা করছেন। বাংলাদেশের চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য ১৫হাজার কেএন-৯৫ মাস্ক ছাড়াও পুলিশ ও সেনাবহিনীর সদস্যদের জন্যে কয়েকহাজার মাস্ক ও হ্যান্ডগ্লাভস পাঠিয়েছেন।

তার ফেসবুক লাইভ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কোটি মানুষ সচেতন হয়েছে। করোনা ভাইরাস থেকে কিভাবে নিজেদেরকে রক্ষা করতে হবে বা কারোনা আক্রান্ত হলে পরিত্রাণের জন্য কি করতে হবে এমন বিষয় নিয়ে প্রতিদিন তিনি ফেসবুক লাইভে আসেন। তার ফেসবুক লাইভ শুরু হলে কয়েক মিনিটের মধ্যে তা ভাইরাল হয়ে যায়।

চিকিৎসা সেবা ছাড়াও হাজার হাজার মানুষের খাদ্য সহায়তাও দিয়েছেন তিনি। বিশেষ করে কাগজপত্রহীন প্রবাসীদের বাড়িতে বাড়িতে চাল-ডাল পৌঁছে দিয়েছেন।

ফেসবুকের মাধ্যমে জনসচেনতা এবং কমিউনিটির মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তাকে নিয়ে আমেরিকার মূলধারার সংবাদ মাধ্যম সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

প্রবাসী বাংলাদেশীদের দুর্দিনে পাশে দাঁড়ানোয় অনেকে তাকে বলেন “মানবতার দূত” কেউ বলেন “দেবদূত”। তবে সবকিছু ছাড়িয়ে তিনি মানবিক চিকিৎসক হিসেবে ব্যপক পরিচিত পেয়েছেন। প্রবাসীদের দু:সময়ে আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে “আপনজন” হয়ে উঠেছেন।

নিউ ইয়র্ক মেইল এর সাথে আলাপচারিতায় ডা. ফেরদৌস খন্দকার আরো জানান, নিউ ইয়র্কে থাকলেও আমার মন পড়ে থাকে দেশ আর দেশের মানুষের কাছে। এখানে আমার আর খুব বেশি প্রয়োজন নেই। এখন দেশ আর এলাকার মানুষের পাশে থাকার সময়। সেজন্যই এবার ”মিশন বাংলাদেশ।”

সংগ্রহ নিউইয়র্ক মেইল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.