মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীদের প্রত্যাবাসনে দীর্ঘদিন যাবত দ্বিপাক্ষিক আলোচনা মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজেছে বাংলাদেশ। তবে দেশটির সরকারের ঘনঘন মত পরিবর্তন ও ছলচাতুরীর কারণেই প্রত্যাবাসন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে বলে দাবি বিশ্লেষকদের।
তবে ধারণা করা হচ্ছে, আসন্ন জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের আগেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হতে পারে। অধিবেশনটিতে বিশ্বজুড়ে সমালোচনা থেকে বাচঁতেই মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়া শুরু করতে পারে। এদিকে, রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি দেখতে শনিবার (২৭ জুলাই) মিয়ানমার সরকারের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসছে।
শুক্রবার (২৬ জুলাই) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
সূত্র জানায়, জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ অধিবেশন আগামী ১৭ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে শুরু হবে। এই অধিবেশনে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিরা যোগ দেবেন। সেখানে রোহিঙ্গা ইস্যুর আলোচনা বিশেষ গুরুত্ব পাবে। গত বছর জাতিসংঘের ৭৩তম সাধারণ অধিবেশনেও রোহিঙ্গা ইস্যু বিশেষ আলোচনায় ছিল। সেখানে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল। আর সে কারণেই এবার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের আগেই মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে পারে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে আমরা কাজ করছি। খুব শিগগির রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে বলে আমি আশাবাদী। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের আগেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হতে পারে। তবে ফিরিয়ে নেওয়াটা নির্ভর করছে মিয়ানমার সরকারের ওপর।
সূত্র আরও জানায়, জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের আগেই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়া শুরু করার জন্য আভাস দিয়েছে মিয়ানমার। জাতিসংঘের চাপ থেকে বাচঁতেই তারা তড়িঘড়ি করে কিছু রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে পারে। বিশ্ব সম্প্রদায়কে দেখনোর জন্য সেটা স্রেফ আইওয়াশও হতে পারে। তবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন যেনো স্রেফ আইওয়াশ না হয়, সেদিক থেকে বাংলাদেশ সরকার সতর্ক রয়েছে।
এদিকে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে শনিবার মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসছে। এই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে। প্রতিনিধি দলটি ঢাকা এসেই কক্সবাজারে যাবে। সেখানে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলবে। রোহিঙ্গারা যেনো রাখাইনে ফেরত যায়, সেটা বোঝানোই মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলের প্রধান উদ্দেশ্য।
তবে রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার আগে নিরাপত্তা নিশ্চিত হতে চায়। রাখাইনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে তারা সেখানে ফিরে যাবে না। আবার তাদের কোনোভাবেই জোর করেও সেখানে পাঠানো সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও চায়, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ার পরেই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। একইসঙ্গে সেখানে গিয়ে যেনো মর্যাদার সঙ্গে জীবনযাপন করতে পারে, সেদিকটিও বিবেচনায় নিতে হবে।
গত বছরের ১৫ নভেম্বর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে চেয়েছিল উভয়পক্ষ। প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য সেদিন বেশ কিছু রোহিঙ্গাদের জড়োও করা হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে চায়নি। সে কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ভেস্তে যায়।