জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যায় সরাসরি জড়িত ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদের (৭২) ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। শনিবার রাত ১২টা ১ মিনিটে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে তার ফাঁসি সম্পন্ন হয়েছে।
এর আগে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিরাপত্তারক্ষী বাড়ানো, জল্লাদদের মহড়াসহ সব কার্যক্রমই শনিবার সম্পন্ন করা হয়।
মাজেদের রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন গত বুধবার নাকচ হওয়ার পর গত শুক্রবার পরিবারের ৫ সদস্য তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। কারাবিধি অনুসারে আইনি সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে শনিবার মধ্যরাতে ফাঁসি কার্যকর করার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে কারা কর্তৃপক্ষ। এটিই কেরানীগঞ্জে স্থাপিত নতুন কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রথম ফাঁসি।
এর আগে নাজিমুদ্দীন রোডস্থ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি কার্যকর হয় বঙ্গবন্ধুর পাঁচ খুনি ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা, মহিউদ্দিন আহমেদ ও একেএম মহিউদ্দিনের ফাঁসি।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একদল সেনাসদস্য ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে হানা দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সে সময় বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর ৬ জনের মধ্যে আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী, মোসলেমউদ্দিন ও রাশেদ চৌধুরী বিদেশে পালিয়ে আছেন। অপরজন আবদুল আজিজ পাশা পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা গেছেন বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
দণ্ড কার্যকরের সময় আইজিপি (প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তফা কামাল পাশা, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুবুর রহমান, জেল সুপার ইকবাল হোসেন, ঢাকা জেলা প্রশাসক আবুল সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান, পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার, ঢাকা জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবু হোসেন মো. মইনুল আহসান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের উপস্থিত থাকার কথা ছিল। লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সও কারাগারে নিয়ে রাখা হয়েছিল।
শনিবার রাত ৮টায় ঢাকার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, ‘আমি এখনো কারা কর্তৃপক্ষের ডাক পাইনি। আমি নিজ কার্যালয়েই আছি। ডাক পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে হাজির হব। তারা হয়তো ফাঁসি কার্যকর করার ঘণ্টাখানেক আগেও জানাতে পারে।’
কারাগারের এক কর্মকর্তা জানান, গত রাতে ফাঁসি কার্যকর করার লক্ষ্যে দিনের বেলাতেই কারাগারের ভেতরে ও বাইরে নিরাপত্তাকর্মীর সংখ্যা বাড়ানো হয়। ফাঁসির মঞ্চ ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হয়। একজন ডেপুটি জেলারকে সার্বক্ষণিক ফাঁসির মঞ্চের কাছে কর্মরত থাকতে বলা হয়। দিনের বেলাতেই ফাঁসির মঞ্চে ইট-বালির বস্তা ঝুলিয়ে জল্লাদরা মহড়া সম্পন্ন করেন। মহড়ার নেতৃত্বে ছিলেন জল্লাদ শাজাহান। তার সহকারী ছিলেন জল্লাদ মনির ও সিরাজ। রায় কার্যকরের আগে কারাগারের কনডেম সেলে মাজেদকে শেষ গোসল করানো হবে এবং তাকে তওবা পড়াবেন কারাগার মসজিদের ইমাম।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামি আবদুল মাজেদ দীর্ঘ দুই দশক বিদেশে আত্মগোপনে ছিলেন। গত ৬ এপ্রিল মধ্যরাতে মিরপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। পরদিন তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হয়। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। পরদিন বুধবার ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. হেলাল চৌধুরী তার মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন।
কারাবিধি অনুসরণ করে লাল সালু কাপড়ে ঢেকে আবদুল মাজেদের মৃত্যু পরোয়ানা পৌঁছে দেওয়া হয় কারাগারে। কারা কর্তৃপক্ষ দণ্ডিত আসামি আবদুল মাজেদকে পড়ে শোনায় মৃত্যু পরোয়ানা। তার কাছে জানতে চাওয়া হয় তিনি অপরাধ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না? মৃত্যুর পরোয়ানা পড়ে শোনানোর পর দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চান আবদুল মাজেদ। আইনি প্রক্রিয়া শেষে রাষ্ট্রপতি তার আবেদন নাকচ করে দেন।