চুরি দেখে ফেলায় গাজীপুরের শ্রীপুরে প্রবাসীর স্ত্রী ও তার তিন সন্তানকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়ে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পারভেজ নামে ১৭ বছরের এক কিশোর এ হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে বলেও জানায় তারা। সোমবার (২৭ এপ্রিল) সন্ধ্যায় গাজীপুরের অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই এ তথ্য জানায়।
পিবিআই জানায়, হত্যার ঘটনার পাঁচদিন পর ওই এলাকা থেকে পারভেজকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেয়া তথ্যে চুরি হওয়া দুইটি মোবাইল ফোন, তিনটি গলার চেন, কানের দুল ও রক্তমাখা জামা উদ্ধার করা হয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে কিশোর জানায়, কাজলের স্ত্রী ও বড় মেয়ের টাচ মোবাইল চুরির উদ্দেশ্যে পার্শ্ববর্তী বাবুলের বাড়ির পিছন দিক দিয়ে বাড়ির ছাদে উঠে সে। পরে নিজের কাছে থাকা ব্লেড দিয়ে ছাদে কাপড় শোকানো রশি কেটে ছাদের গ্রীলে বাঁধে। এরপর রশি বেয়ে একটু নীচেই দোতলার বাথরুমের ফাঁকা জায়গা দিয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকে। নিচে নেমে নুরা ও হাওয়ারিন এর রুমে প্রবেশ করে খাটের নীচে লুকিয়ে থাকে। নুরার তখন কানে হেডফোন ছিল ও ছোট বোন হাওয়ারিন ঘুমিয়ে ছিল। আনুমানিক ১ ঘণ্টা পর সকলে ঘুমিয়েছে ধারণা করলে নীচ তলায় নেমে রান্না ঘর হতে ধারালো বটি নিয়ে দোতলায় উঠে। মোবাইল নেয়ার জন্য নুরার মার কক্ষের দরজার লক খোলার চেষ্টা করলে শব্দে নুরার মা জেগে উঠে। বাথরুমের আশপাশ কেউ আছে কিনা খোঁজ করে ফাতেমা। এক পর্যায়ে ফাতেমা তাকে দেখে চিনে ফেললে চিৎকার দেয়। তখন সে তার হাতে থাকা বটি দিয়ে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ীভাবে কোপায়। নুরার মা অজ্ঞান হয়ে ফ্লোরে পড়ে যায়। নুরা শব্দ পেয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠলে তাকেও বটি দিয়ে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। অতঃপর নুরার ছোট ভাই ফাদিল জেগে উঠলে তার মাথায় কোপ মারে, সে ফ্লোরে পড়ে গেলে প্রথমে তাকে জবাই করে নুরার খাটের নীচে রাখে তারপর হাওয়ারিন ঘুম থেকে জেগে উঠে চিৎকার দিলে তাকেও কুপিয়ে জখম করে। পরবর্তীতে সে নুরাকে ধর্ষণ করে। নুরার মাকে ওড়না দিয়ে হাত পা বেঁধে অতঃপর অর্ধমৃত হাওয়ারিনকেও ধর্ষণ করে এবং মৃত নিশ্চিত করার জন্য সবাইকে গলা কেটে হত্যা করে।
এরপর নুরার মার গলায় স্বর্ণের চেন, কানের দুল ও কান ফুল ও নাক ফুল খুলে নেয় এবং হাওয়ারিন এর কান থেকে ২টি স্বর্ণের রিং খুলে নেয়। পরবর্তীতে আলমিরা খুলে ২টি স্বর্ণের চেন, ১টি আংটি, ১টি লাল রং এর ছোট ডাইরি, নুরার মায়ের রুম হতে ২টি বড় টাচ মোবাইল নেয়। মোবাইল ও স্বর্ণালংকার তার পরিহিত পায়জামার পকেটে রাখে। এরপর সে হাত মুখ ধুয়ে ফেলে পেছনের গেইট খুলে পালিয়ে যায়।
ঘটনার পর দিন নিহতের শ্বশুর আবুল হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি করে শ্রীপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
গাজীপুর পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগ্রেশনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ইউনিট ইনচার্জ) মো. নাসির আহমেদ সিকদার সময় সংবাদকে জানান, ঘটনার পর থেকেই আমরা দিনরাত চাঞ্চল্যকর এই হত্যার রহস্য উন্মোচনে কাজ শুরু করি। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পারভেজকে আটকের পর- সে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে। তার দেয়া তথ্যেই গলার চেন, মোবাইলফোন ও রক্তমাখা জামা উদ্ধার করা হয়। আজ আদালতে পারভেজ খুনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলেও এই কর্মকর্তা জানান।
তিনি আরো জানান, পারভেজ এর আগেও ধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল। সেই মামলায় জামিনে রয়েছে সে।