Site icon দৈনিক আজকের মেঘনা

প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় সবাই ফেল

প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় তিন প্রার্থীর কেউ পাস না করায় ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স ম আজহারুল ইসলাম। রোববার (২৩ জুন) রাতে অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে তিনি এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এর আগে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় উপজেলা মডেল স্কুলের (প্রাথমিক বিদ্যালয় সমমান) প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। স ম আজহারুল ইসলাম লিখেন, ‘অফিসিয়াল ফেসবুক প্রোফাইলে সাধারণত ব্যক্তিগত হতাশা/ক্ষোভের কথা শেয়ার করি না। কিন্তু একটা বিষয় শেয়ার না করে পারছিই না।’

‘উপজেলা পরিষদ মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদে একটি নিয়োগ পরীক্ষা আয়োজন করি। সেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতার সমান মাপকাঠি রাখা হয় (বয়সেরও)। ৯ আবেদনকারীর মধ্যে কাগজপত্র, বয়স বিবেচনায় আবেদন বাদ পড়ে ৩টা, বাকি ৬ জনকে লিখিত পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়। সেখানে উপস্থিত হন তিনজন। এই তিনজনকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে তাদের ৮০ মার্কসের লিখিত পরীক্ষা আর ২০ মার্কসের মৌখিক পরীক্ষা হবে। এই ৮০ মার্কস ছিল বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞানের ওপর।’

‘অংশ গ্রহণবারী তিনজনের মধ্যে দুজনের প্রাপ্ত নম্বর ২.৫ এবং ৯। ভুল পড়েননি, ৮০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ক্যান্ডিডেটদের প্রাপ্ত নম্বর এই ২.৫ আর ৯। বাকিজন এতোটা খারাপ না পেলেও পাস মার্ক পাননি… এটুকু পড়ে অনেকের চিন্তা আসতে পারে, প্রশ্ন নিশ্চয়ই অনেক কঠিন এসেছিল? তাদের জ্ঞাতার্থে-‘আকাশ কুসুম’ এই বাগধারার অর্থ পারেনি পরীক্ষার্থী কিংবা, ‘তার মা একজন গৃহিনী’ এই বাক্যের ইংরেজি বা ‘ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী’ এই বাক্যেরও ইংরেজি পারেনি। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে কয়েকটি শুদ্ধ বাক্য জানে না তারা।’

‘এই হচ্ছে আমাদের শিক্ষার মান ও অবস্থা। দেশে এতো শিক্ষিত বেকার কেন? এই উত্তরের পিঠে আমার প্রশ্ন – দেশে এতো ‘শিক্ষিত নামধারী’ লোক কেন? এতো গেল একটা প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিয়োগের অবস্থা।’

‘মাস খানেক আগে উপজেলার একটি স্বনামধন্য মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন করেছিলাম “Write about yourself in ten sentences’ (১০ নম্বর) সাত পরীক্ষার্থীর (যাদের শিক্ষক হিসেবে অভিজ্ঞতা ১০+ বছর) তাদের ছয়জন উত্তর ই করেনি, একজন করেছে, সে ৪-৫ টি বাক্য ইংরেজিতে শুদ্ধ লিখতে পেরেছেন। বলাই বাহুল্য সে পরীক্ষায় ও কেউ লিখিত পরীক্ষায় পাস করেনি। তার মানে এই অবস্থা নিয়ে তারা দশ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে শিক্ষকতাই করে যাচ্ছিল।’

 

‘আমার এজন্য হতাশ লাগে, ক্ষোভ লাগে- এই পড়াশোনা, এই সার্টিফিকেট, এই ডিগ্রি, এই শিক্ষিত নামের স্টিকারের প্রয়োজনীয়তা বা প্রযোজ্যতা কী? সমাজের সবার শিক্ষিত হবার দরকার নেই, সবাই সব জানবে না শিখবে না, এইই নিয়ম। কিন্তু যারা পড়াশোনা করবেই না, জানবেই না শিখবে ই না তারা কেন শিক্ষক হতে আসে? তারা ভেতরে কী নিয়ে এই মহান পেশায় আসতে চায়? এই প্রশ্নবোধক ক্ষোভ আর হতাশা আমার ব্যক্তিগত এবং পেশাগত উভয়ই।’ এ বিষয়ে ইউএনও স ম আজহারুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, সহজ সহজ প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারায় নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। শিগগিরই নতুন করে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা পরিষদ মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নতুন করে প্রকাশ করা হবে।

সূত্র: জাগোনিউজ

FacebookTwitterEmailShare
Exit mobile version