দুলাল বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) অফিসে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এখানে ঘুষ ছাড়া মোটরযান নিবন্ধন ও চালক অনুমতিপত্র এবং পুরাতন অনুমতিপত্র নবায়ন করা যায় না। শুধু তাই নয় জেলার বিভিন্ন রুটে চলাচল করা শতাধিক আনফিট গাড়িগুলোকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ফিটনেস সনদ প্রদান করা হয়ে থাকে বলেও অভিযোগ রয়েছে। ফলে প্রতিনিয়তই ঘটছে দূর্ঘটনা। বিভিন্ন নিয়মের বেড়াজালে ফেলে আবার কখনও কৃত্রিম সমস্যা তৈরি করে গাড়ির নিবন্ধন ও চালক অনুমতিপত্র নিতে আসা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে এ অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের বিরুদ্ধে। সেবা পেতে এমন ভোগান্তির শিকার হওয়ায় সেবা প্রত্যাশিদের মাঝে মধ্যেই অফিসে ধর্ণা দিতে হয়। ফলে প্রতিদিনই অফিসটিতে ভিড় লেগেই থাকে।
এ ধরনের হয়রানির কারনে অনেক সেবা প্রত্যাশিরা বিআরটিএ অফিসেআসতে চরম অনিহা প্রকাশ করছেন। এতে ব্যক্তি নিবন্ধন ও যানবাহনের নিবন্ধন ছাড়াই অবৈধভাবে সড়কে চলাচল করছে অনেকে। বড় অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। সদর উপজেলার পাইককান্দি গ্রামের মিজানুর রহমান শেখ বলেন, ২০১৫সালে আমার ১০০সিসি মটরসাইকেলের নিবন্ধন করানোর জন্য বিআরটিএ অফিসে ১৯ হাজার ৫শ টাকা জমা দেই। এর একবছর পরে আমাকে হ-সিরিয়ালের স্থলে ল- সিরিয়ালের একটি নিবন্ধন নম্বর দেয়। যা প্রকৃতপক্ষে ১০০সিসি মটরসাইকেলের জন্য নয়। নম্বরটি ভুল হওয়ায় সংশোধনের জন্য ৮শ টাকা জমা নেয়। এখন বলছে পুনঃরায় ভুল হয়েছে টাকা লাগবে ৩ হাজার ২শ। একটি গাড়ির লাইসেন্স পেতে যদি এতোদিন লাগে তাহলে কিভাবে চলবে। এভাবে দিনেরপর দিন বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের কাছে ঘুরেও কোনো প্রতিকার পাইনি। সদর উপজেলার চরমানিকদাহ গ্রামের মাইক্রো চালক মো. আনোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, আমি ৩০ এপ্রিল আমার ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করতে বিআরটিএ অফিসে কাগজপত্র জমা দিয়েছি। গত সপ্তাহে খোঁজ নিতে ওই অফিসে যাই। ওখানের অফিস স্টাফ বলে এ কাগজের খোঁজ আমি জানিনা। এটা সেলিম জানে। অথচ সেলিম ওই অফিসে
চাকুরীই করে না। এ বিষয়ে অফিসের কর্মকর্তার কাছে জানালেও কোনো সদ্যুত্তর মেলেনি। তিনি আরোও বলেন ঘুষ না দেওয়ায় কাজে এতো ঢিলেমি হচ্ছে। টাকা না দিলে প্রত্যেক সেবা প্রত্যাশিরাই এমন ভোগান্তির শিকার হন। জেলা সদরের ঘোষেরচর এলাকা বালু ব্যবসায়ী নাসু মোল্লা অভিযোগ করে বলেন, এক বছর আগে আমার ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্য গোপালগঞ্জ বিআরটিএ গিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেই। আমাকে একটি লার্নার কার্ড করে দেয়। পরে লাইসেন্স আনতে গেলে শুনি
যিনি কাগজ জমা নিয়েছিলেন তিনি এখানে চাকরি করেন না। এখন আমি কি করবো। আবারও নাকি টাকা ও কাগজপত্র জমা দিতে হবে। আমরা সহজে এবং তাড়াতাড়ি লাইসেন্স পাই সরকার যেনো সেই ব্যবস্থা করে।
গোপালগঞ্জ বিআরটিএ অফিসের একজন কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মোটরযান চালকদের পেশাদারিত্ব ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ ও ওরিয়েন্টেশন বাবদ প্রতি বছর ২ থেকে ৩ লাখ টাকা সরকারিভাবে বরাদ্দ দেয়া হলেও কোনো প্রশিক্ষণ ও ওরিয়েন্টেশন করা হয় না। ভুয়া বিল ভাউচার করে সহকারি পরিচালক সুবীর কুমার সাহা তা আত্মসাৎ করেন। এ নিয়ে অফিসার ও কর্মচারীদের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে। এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ বিআরটিএ অফিসের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি:) সুবীর কুমার সাহা বলেন, অফিসের ভিতরে একটি চক্র আমার বিরুদ্ধে এসব অপপ্রচার করছে। আমি এসব বিষয়ে কিছুই জানিনা। গোপালগঞ্জ জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মানিক বলেন, দেশের বিদ্যমান মোটরযান আইনের
পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে সকল প্রকার ভোগান্তি বন্ধ করে জনবান্ধব প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করতে হবে। তার জন্য নিয়মিত গণশুনানির ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলেই মোটরযান আইনের সুফল পাবে সাধারণ মানুষ।