কোটা আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, যা বলছে যুক্তরাষ্ট্র

জাতীয়

বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে চলমান আন্দোলনের বিষয়ে অবগত থাকার পাশাপাশি এই ইস্যুতে বাংলাদেশে কী ঘটছে সেটিও পর্যবেক্ষণ করছে দেশটি।

স্থানীয় সময় সোমবার (১৫ জুলাই) নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।

এদিনের ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন এবং তাদের ওপর হামলার বিষয়ে জানতে চান। তিনি বলেন, সরকারি চাকরিতে মেধাভিত্তিক নিয়োগের পক্ষে এবং কোটা বাতিলের দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছে। ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী প্রতিবাদকারীদের হুমকি দেওয়ার পরই ক্ষমতাসীন দলের শাখা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা করেছে এবং এতে প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। এমনকি যেসব আহত শিক্ষার্থী জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছিল হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে তাদের ওপরও হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। বাংলাদেশে চলমান ব্যাপক এই বিক্ষোভ নিয়ে আপনাদের অবস্থান কী?

জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র অবগত রয়েছে। হামলায় শত শত মানুষ আহত হয়েছেন ও দুজন নিহত হয়েছেন। আমরা এই বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি।

তিনি আরও বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশ যেকোনও বিকাশমান গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য ভিত্তি হিসাবে কাজ করে। আমরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে যেকোনও ধরনের সহিংসতার নিন্দা করি।

এছাড়া যারা এই সহিংসতার শিকার ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের প্রতি সমবেদনাও প্রকাশ করেন ম্যাথিউ মিলার।

উল্লেখ্য, রোববার চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কিছুই পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা সব পাবে?’

প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা বা নাতিপুতি’ বলা হয়েছে অভিযোগ করে রোববার রাত থেকে প্রতিবাদ শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রাতে প্রথমে রোকেয়া হলের মেয়ে শিক্ষার্থীরা হল থেকে মিছিল নিয়ে বের হয়ে আসেন। তারা স্লোগান দেওয়া শুরু করেন ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’। এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল থেকে ছেলে ও মেয়ে শিক্ষার্থীরা দলে দলে মিছিল নিয়ে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে বিক্ষোভ শুরু করেন। প্রায় দেড় ঘণ্টার বিক্ষোভ শেষে হলে ফিরে যান তারা।

একই সময়ে (রোববার মধ্যরাতে) চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন।

একই ইস্যুতে সোমবারও উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাবিসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। দুপুরের দিকে ঢাবির রাজু ভাস্কর্যে এসে অবস্থান নেন কয়েকশ আন্দোলনকারী। এসময় তারা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার চেয়ে নানা স্লোগান দেন। তবে তাদের ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’ স্লোগান নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আলাদা অনুষ্ঠানে তাদের স্লোগানের ভাষার তীব্র সমালোচনা করেন।

এরপর ক্যাম্পাসে সক্রিয় হয় ছাত্রলীগ। দুপুর ২টার দিকে তারা বিজয় ৭১ হলসহ বিভিন্ন হলে আন্দোলনকারীদের বাধা দেন। এ খবরে আন্দোলনকারীরা ছুটে গেলে ছাত্রলীগের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। উভয়পক্ষ ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এরপর থেকে গোটা ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

বিকেল ৪টার পর থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। এসময় ছাত্রলীগ আন্দোলনকারীদের ওপর লাঠি-সোটা নিয়ে আক্রমণ শুরু করে। বহু আন্দোলনকারীকে পিটিয়ে আহত করে তারা। তাদের অনেকের মাথা ফেটে যায়। আন্দোলনকারীরা কোথাও কোথাও প্রতিরোধের চেষ্টা করে। ফলে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়।

বিকেল ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত চলা সংঘর্ষে শতাধিক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আহত হন। তাদের অধিকাংশই ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া আশপাশের অন্যান্য হাসপাতালেও গেছেন কেউ কেউ।

এদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও বিকেল থেকে ছাত্রলীগ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেখানে অনেকে আহত হন। এছাড়া সোমবার বিকেলে আন্দোলনে নামেন রাজশাহী, কুমিল্লা, খুলনাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা বিভিন্ন স্থানে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.