কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে ৫ বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। হামলায় ৪ জন আহত হয়েছে বলে জানা যায়।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন যাবৎ উপজেলার রামদী ইউনিয়নের বড়চর গ্রামের মৃত হাসেন আলী মুন্সীর ছেলে আবু কাশেম এর সহিত একই বাড়ির শাহিদ মিয়ার মধ্যে জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বিরোধ ও মামলামোকদ্দমা চলিয়া আসছে। উক্ত বিরোধের জেরধরে গত ৪ এপ্রিল (শনিবার) সন্ধ্যায় আবু কাশেম (৫৫) ও তার ভাই মোঃ শহিদ মিয়া (৬৫), আব্দুল মান্নান ওরুফে মাইন উদ্দিন (৪৫), আব্দুল লতিফ (৪০) ও তার ভাতিজা মোঃ আমির উদ্দিন (৩৫) তাদের গ্রামের জামে মসজিদে মাগরিবের নামাজ আদায় করতে যায়। এ সুযোগে বাড়ীঘর প্রায় পুরুষ শূন্য থাকায় শাহিদ মিয়ার ছেলে আব্দুল আওয়াল (২২) এর নেতৃত্বে ৪/৫ জন লোক দেশীয় অস্ত্রাধী নিয়ে আাবু কাশেমের ভাতিজা রাসেল ও তার এক বন্ধুর উপর অতর্কিত হামলা করে মারধর করতে থাকে। এসময় রাসেল তাদের দেখে নেওয়ার হুমকী দিয়ে গালীগালজ করতে থাকলে হামলাকারীদের সাথে আরো ১৫/২০ জন লোক দেশীয় অস্ত্রাদী নিয়ে যুক্ত হয়ে আবু কাশেমের বাড়িতে হামলা করে তার বসতঘর সহ তার ভাই মোঃ শহিদ মিয়া (৬৫), আব্দুল মান্নানন ওরুফে মাইন উদ্দিন (৪৫), আব্দুল লতিফ (৪০) ও তার ভাতিজা মোঃ আমির উদ্দিন (৩৫) এর ৫টি বসত ঘরসহ বসত ঘরে থাকা আসবাবপত্র ও একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ভেঙ্গে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে।
এসময় হামলাকারীরা বসত ঘরে থাকা নগদ ৩ লক্ষ টাকা, ১২ ভরি স্বর্ণালংকার, ধান চাল শুকনা মরিচ সহ প্রায় ১০ লক্ষ টাকার মালমাল ও ৪ লক্ষ টাকা মূল্যের ৫ টি গরু লুট করে নিয়ে যায়। হামলায় আব্দুল লতিফ (৪০), আবু হানিফ (২৩) ও রাসেল (২২) সহ প্রতিপক্ষের আব্দুল আওয়াল (২৫) আহত হয়।
অপরদিকে ঘটনার সময় মোঃ মেরাজ মিয়া (৬৫) নামে এক বৃদ্ধ মাটিতে ঢলে পরলে স্থানীয়রা তাকে ধরাধরি করে ভাগলপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরীক্ষা – নিরীক্ষা শেষে প্রায় এক ঘন্টা পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
বাড়িঘর ভাংচুরের ঘটনায় কুলিয়ারচর থানায় মামলা না নিলেও বৃদ্ধ মৃত্যুর ঘটনায় ওইদিন রাতে মৃত মেরাজ মিয়ার স্ত্রী মোছা: হেলেনা বেগমকে বাদী করে কাশেম মিয়াকে প্রধান আসামী করে ৮ জনের নাম উল্লেখ সহ ৫/৬ জনের নামে থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু করে পুলিশ। মামলা নং – ০৪ (৪) ২০২০। মামলা রুজু হওয়ার পরদিন মামলার এজাহার নামীয় আসামী উপজেলার উছমানপুর পূর্বপাড়া গ্রামের মোঃ হাসান আলীর পুত্র মোঃ ছোটন মিয়া (২২) ও তার স্ত্রী মোছা: শাহানা বেগম (২০) কে তাদের ২ বছরের এক কোলের শিশু সন্তান সহ তাদের বাড়ী থেকে আটক করে কিশোরগঞ্জ আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করেন পুলিশ।
এব্যাপারে এলাকাবাসী ধারনা করছে ঘটনার সময় স্ট্রোক করে হয়তো মারা যেতে পারে ওই বৃদ্ধ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ওই বাড়িতে ঘরবাড়ি ভাংচুর হয়েছে এমটা দেখা গেছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মৃত মেরাজ মিয়ার শরীরে কোন প্রকার আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি। তবে এটা হত্যা না কি স্ট্রোক করে মারা গেছে তা ময়না তদন্ত রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত মৃত্যুর কারন বলা যাবেনা।
আবু কাশেম দাবী করেন ঘটনার সময়, তারা ৪ ভাই ও তার ভাতিজা একই গ্রামের একটি মসজিদে নামাজ আদায় করা অবস্থায় ঘটনাটি ঘটে। যার প্রমাণ মসজিদের মুসুল্লিগণ। মেরাজ মিয়া কি ভাবে মারা গেছে তা তারা বলতে পারছেনা।
এ ব্যাপারে কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল হাই তালুকদার বলেন, মামলার এজাহার নামীয় ২ আসামীকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলাটি তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে ঘটনা উদঘাটন করা যাবে।
হামলাকারীদের ভয়ে ও মামলায় গ্রেফতার হওয়ার ভয়ে করোনাভাইরাস আতংক নিয়ে আবু কাশেমের বাড়ির লোকজন পালিয়ে বেড়াচ্ছে। ৫ বাড়ি শূন্য হয়ে পরায় প্রতিপক্ষরা দফায় দফায় লুটপাট করছে বলে অভিযোগ করেন আবু কাশেম।