প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সামাজিক দুরত্ব নিয়ন্ত্রনে যৌথ বাহিনীর সহায়তায় প্রশাসন মাঠে-ঘাটে, হাট-বাজারে অভিযান চালিয়ে গেলেও কে শুনে কার কথা।
করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে যৌথ বাহিনীর সহায়তায় প্রশাসনের লোকজনকে কাজ করতে দেখা গেলেও বিশ্ব স্বস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী সরকারের নির্দেশনায় 'সামাজিক দুরত্ব' বজায় রাখা নিশ্চিত করতে দায়িত্বশীলদের প্রচার-প্রচারণা তেমন বেশি চোখে পড়ছে না। হাটবাজার ও রাস্তা-ঘাটের জনসমাগম দেখলে মনে হয় এ ব্যাপারে যেন কারোর কোনো মাথা ব্যথাই নেই।
অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরমর্শ অনুযায়ী করোনা-সংক্রমণ ঠেকাতে মানুষে-মানুষে সামাজিক দূরত্ব (তিন ফুট) বজায় রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন সরকার। কিন্তু উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও হাটবাজারে গেলে দেখা যায় সেই দূরত্ব অনেকেই মানছে না। হাটবাজারে ক্রেতা-বিক্রেতারা একে অন্যের গা-ঘেঁষে দাঁড়াচ্ছেন। এমনকি হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার রক্ষা করছে না। এতে করোনা-সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে বলে মনে করছেন সমাজের সচেতন মহল। বিশেষ করে এলাকার চায়ের দোকানে এবং রাস্তা-ঘাটে অনেকটা আগের মতই মানুষের আড্ডা ও শিশু-কিশোরদের খেলাধুলা চোখে পড়ে। অনেকে প্রশাসনের নির্দেশনার তোয়াক্কা করছে না।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কুলিয়ারচর উপজেলা সদরের দোকানপাট অনেকটা বন্ধ থাকতে দেখা গেলেও মাছ বাজারে মাছ কিনতে ক্রেতারা ভিড় করছেন। নামা বাজারে মানুষের ঢল। এছাড়া উপজেলার অন্যান্য বাজারগুলোর অবস্থা আরো খারাপ। সে সব বাজারে ক্রেতা ও বিক্রেতার মাঝখানে এক ফুট জায়গাও ফাঁকা থাকছে না। অনেকে মাস্কও ব্যবহার করেনি। হাতে গ্লাভসও নেই। বলতে গেলে দোকানি ও ক্রেতার মাঝখানে তেমন দূরত্ব রক্ষা করা হয়নি। ক্রেতা-বিক্রেতাকে যেখানে-সেখানে কফ-থুথু ফেলতেও দেখা যায়। এসব হাটবাজারের কয়েকজন ক্রেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়ে জানেন, কিন্তু কেনাকাটা করতে এসে পরিস্থিতির কারণে ঠিকমতো সেই দূরত্ব রক্ষা করতে পাছেন না। অপরদিক বিক্রেতারা বলছেন, ক্রেতাদেরকে দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলেও তারা কেউ শুনছেন না।
উল্লেখ্য, এর আগে ওষুধের দোকান, মুদি দোকান ও সবজির দোকান ব্যতিত অন্যান্য সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু বাস্তবে উপজেলা প্রশাসনের এ নির্দেশনা অনেক হাটবাজারের ব্যবসায়ীরা মানছেন না। তারা প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করে প্রায় সব ধরণের দোকানপাট খোলা রেখছেন। যা দেখে মনে হয় তারা যেন দোকানপাট খোলা রাখার প্রতিযোগীতায় নেমেছেন।
উপজেলার পৌরসভাসহ ছয়টি ইউনিয়নের ছোট-বড় মিলিয়ে বেশ কয়েকটি হাটবাজার ও বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে ও গ্রামের ভিতরে অবস্থিত কিছু চায়ের দোকান এখনো খোলা রয়েছে। তাদের কেউ গোপনে, কেউ আগের মত দিব্যি বেচাকেনা করছেন। আবার রাস্তার মোড়ে মোড়ে অনেকে কফিও বিক্রি করছেন। কফির দোকানেও একে অপরের গা ঘেঁষে বসে কফি খেতে দেখা যায়। এর মধ্যে উপজেলার উছমানপুর ইউনিয়নের চৌমুড়ি বাজার। রামদী ইউনিয়নের আগরপুর বাজার ও আগরপুর বাসস্ট্যান্ড বাজার। গোবরিয়া-আবদুলাপুর ইউনিয়নের বড়চারা বাজার, লক্ষীপুর বাজার ও ছিদ্দুরমোড় বাজার। ছয়সূতী ইউনিয়নের দ্বারিয়াকান্দি বাসস্ট্যান্ড বাজার, ছয়সূতী বাসস্ট্যান্ড বাজার, মাটিকাটা চকবাজার, আরব আলীর চক বাজার, সালুয়া ইউনিয়নের বাজরা-তারাকান্দি বাসস্ট্যান্ড বাজার, চরকালপুর নতুন বাজার, ডুমরাকন্দা বাজার ও মধ্য সালুয়া মোড়ের বাজার। ফরিদপুর ইউনিয়নের আনন্দ বাজার, নাপিতেরচর ইউসুফ মার্কেট বাজার, মাজার সংলগ্ন বাজার ও খিদিরপুর চকবাজার সহ গ্রামের ভিতরে আরো বেশ কিছু জায়গায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দোকান খোলা রেখেছেন। এসব দোকানগুলোতে আগের মতই মানুষের ভিড় চোখে পড়ছে।
উল্লেখিত বাজারগুলোতে কেউ গোপনে, কেউ প্রকাশ্যে চা বিক্রি করতেও দেখা গেছে। বাজারগুলোতে মানুষের ভিড় ও চায়ের দোকানগুলোতে আড্ডা দেখে মনে হয় করোনা ভাইরাসের বিষয়ে এ উপজেলার মানুষগুলো মোঠেও সচেতন না। যেকারণে তারা সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার উপর খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছেনা। অনেকে আগের মতই বাজারে চলাফেরা করছে। বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম সহ বিভিন্ন শহর থেকে যারা গ্রামে এসেছেন তারা বাড়িতে না থেকে বাজারে আড্ডা জমাচ্ছে। অথচ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে ও সরকারের নির্দেশানা অনুযায়ী তারা হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা। কিন্তু তারা তা না মেনে দিব্যি আড্ডা দিচ্ছেন বাজারে।
বিশ্ব স্বস্থ্য সংস্থার মতে (কোভিড- ১৯) করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের যে কয়েকটি ধাপ রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম ধাপ হলো সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখলে ৬০ ভাগেরও বেশি রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। করোনা ভাইরাস একজন মানুষ থেকে অন্য মানুষে সর্বনিম্ন ৩ ফুট থেকে সর্বোচ্চ ৬ ফুট পর্যন্ত দূরত্বে ছড়াতে পারে। তাই মানুষে-মানুষে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা জরুরি।
অনেকের মতে হাটবাজারে মানুষ ভিড় করায় সামাজিক দূরত্ব লঙ্ঘিত হওয়ার কারণে যে কোনো সময় বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে।
সচেতন মহল মনে করছেন এ উপজেলায় সরকারের পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি ও সমাজের দায়িত্বশীলরা করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ সামগ্রী ও গরীব-দুঃখিদের পাশে সাহায্য সামগ্রী নিয়ে যে ভাবে এগিয়ে এসেছেন ঠিক তেমনিভাবে সামাজিক দুরত্ব বাজায় রাখার ক্ষেত্রেও যদি তারা এভাবে প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে আসতেন তাহলে সাধারণ মানুষ আরো কিছুটা সচেতন হতেন। এমনকি এ ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলদের উপস্থিতি আশানুরূপ চোখে পড়ছে না। তারা মনে করেন, দায়িত্বশীলরা একটু এগিয়ে আসলেই সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি সম্পর্কে গ্রামের সাধারণ মানুষগুলো আরো অনেক সচেতন হতো।
এ ব্যাপারে কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুল হাই তালুকদার সাংবাদিকদের জানান, আমরা বিভিন্ন হাটবাজারে গিয়ে ওষুধ, মুদি ও সবজি দোকান ছাড়া বাকি সব দোকান বন্ধ রাখতে প্রচার অব্যাহত রেখেছি।
অনেকেই বলছে প্রশাসন চেষ্টা চালিয়ে গেলেও কে শুনে কার কথা।