কুলিয়ারচরের বিভাটেক চালক হাকিম হত্যার ঘটনায় ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই

ঢাকা বিভাগ কিশোরগঞ্জ

কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে বিভাটেক রিকশা চালক হাকিম হত্যার ঘটনায় ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই। জানা যায়, বিভাটেক রিকশাসহ নিখোঁজ হওয়ার ১৩ দিন পর গত ১ অক্টোবর উপজেলার সালুয়া ইউনিয়নের মধ্য সালুয়া গ্রামের মো. মনির মিয়ার ছেলে বিভাটেক রিকশাচালক মো. হাকিম মিয়ার (২০) লাশ উদ্ধার করা হলেও দীর্ঘদিনেও এ ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার কিংবা বিভাটেক রিকশাটি উদ্ধার করা যায়নি। এ নিয়ে এলাকাবাসী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে। গত ৯ অক্টোবর মামলাটির তদন্ত পিবিআই এর হাতে ন্যাস্ত করা হয়। অবশেষে পিবিআই এর বিশেষ অভিযানে নিহত হাকিমের বিভাটেক ও মোবাইল ফোন উদ্ধার এবং ঘটনার সাথে জড়িত অটোরিকশা ও বিভাটেক ছিনতাই চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে, কাজল মিয়া (২২), বাবুল (২২), মনির (২৭), মো. ফুল মিয়া (৩৯) ও মোস্তফা ওরফে মস্তো (১৯)। তাদের মধ্যে কাজল মিয়া ও বাবুল আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে ঘটনার বিবরণ দিয়েছে। অন্যদিকে গ্রেপ্তারকৃত ছিনতাই চক্রের সদস্যদের মধ্যে কাজল মিয়া ভৈরব উপজেলার মধ্যেরচর আলগাবাড়ীর মো. ইরু মিয়ার ছেলে, বাবুল একই উপজেলার মিরারচর উত্তরপাড়ার মো. বিল্লাল মিয়ার ছেলে, মনির কালিকা প্রসাদ গ্রামের সৈকত আলীর ছেলে, মো. ফুল মিয়া চন্ডিবের মধ্যপাড়ার মৃত খলিল মিয়ার ছেলে এবং মোস্তফা ওরফে মস্তো কুলিয়ারচর উপজেলার মধ্য লালপুর গ্রামের ছফর উদ্দিনের ছেলে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিভাটেক চালক মো. হাকিম মিয়া গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিকালে তার বিভাটেক নিয়ে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়। তাকে খোঁজাখোঁজি করে কোথাও না পেয়ে পরদিন ১৯ সেপ্টেম্বর হাকিম মিয়ার পিতা মো. মনির মিয়া কুলিয়ারচর থানায় একটি সাধারণ ডায়রী (নং-৬৯৮) করেন। পরবর্তীতে ঘটনার ১৩ দিন পর গত ১ অক্টোবর বিকালে উপজেলার সালুয়া ইউনিয়নের ভিটিগাঁও সংলগ্ন দ্বারিয়াকান্দি-বেলাব সড়কের পাশের একটি জলাশয়ে কচুরিপানার ভেতর থেকে অর্ধগলিত এক অজ্ঞাত তরুণের লাশ পাওয়া যায়। সংবাদ পেয়ে বিভাটেক চালক হাকিমের স্বজনরা গিয়ে তার পরনে থাকা গেঞ্জি দেখে এটি হাকিমের বলে লাশ শনাক্ত করেন। এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) কুলিয়ারচর থানায় মামলা দায়েরের পর শুক্রবার (৯ অক্টোবর) পিবিআই কিশোরগঞ্জ মামলাটি গ্রহণ করে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পান পিবিআই কিশোরগঞ্জের এসআই মো. গোলাম হোসেন। ওই দিনই নিহত হাকিমের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় অভিযান পরিচালনা করে চক্রের দুই সদস্য কাজল মিয়া ও বাবুলকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। তাদের কাছ থেকে নিহত হাকিমের মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়। পরদিন শনিবার (১০ অক্টোবর) দুজনেই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। তাদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ওইদিন রাতে অভিযান পরিচালনা করে চক্রের বাকি তিন সদস্য মনির, মো. ফুল মিয়া ও মোস্তফা ওরফে মস্তোকে গ্রেপ্তার করে এবং ফুল মিয়ার গ্যারেজ থেকে বিভাটেকটি উদ্ধার করে পিবিআই। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কাজল, বাবুল, মোস্তুফা ও মনির সমবয়সী ও পরস্পরের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। তাদের একটি সংঘবদ্ধ অটোরিকশা-বিভারটেক চুরি ও ছিনতাইয়ের সিন্ডিকেট রয়েছে। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তারা দীর্ঘদিন ধরে অটোরিকশা-বিভারটেক চুরি ও ছিনতাই করে আসছে। মো. ফুল মিয়া অটোরিকশা-বিভারটেকটি চোরাই জানার পরও সিন্ডিকেটের সদস্যদের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে স্বল্প দামে ক্রয় করে। মামলার তদারককারী অফিসার পিবিআই কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. শাহাদাত হোসেন পিপিএম সাংবাদিকদের জানান, ১ অক্টোবর নিহত হাকিম মিয়ার অর্ধগলিত লাশ পাওয়ার পর পিবিআই কিশোরগঞ্জ জেলার ক্রাইমসিন ইউনিট ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে হত্যার বিষয়ে ছায়া তদন্ত অব্যাহত রাখে। পরবর্তীতে গত ৯ অক্টোবর মামলাটি স্ব-উদ্যোগে গ্রহণের পর জড়িতদের গ্রেপ্তার এবং নিহত হাকিমের মোবাইল ফোন ও ছিনতাই হওয়া বিভাটেকটি উদ্ধার করা হয়। পুলিশ সুপার মো. শাহাদাত হোসেন পিপিএম তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে বলেন, গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিকালে কাজল, বাবুল, মোস্তুফা ও মনির মিরারচর বাজার সংলগ্নে রেললাইনে বসে এই দিন সন্ধ্যায় একটি অটোরিকশা ছিনতাই করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক সন্ধ্যার পর মোস্তুফা, কাজল ও বাবুল মিরারচর বাজার রেললাইন হতে মিরারচর বাসস্ট্যান্ড যায়। মনির আগে থেকেই বাসস্ট্যান্ডে অপর একটি অটো নিয়ে অন্যদের অপেক্ষায় ছিল। মিরারচর বাসস্ট্যান্ডে তারা মিলিত হয়ে সিদ্ধান্ত নেয় যে, ডুমরাকান্দা বাজার এলাকায় গিয়ে অটো ছিনতাই করবে। মোস্তুফা, কাজল ও বাবুলকে নিয়ে মনির অটো চালিয়ে মিরারচর থেকে দ্বাঁড়িয়াকান্দি হয়ে ডুমরাকান্দা বাজারে তাদেরকে নামিয়ে দিয়ে পুনরায় মনির তার অটোরিক্সা নিয়ে মিরারচর বাজারে চলে যায়। অন্যদিকে মোস্তুফা, বাবুল ও কাজল একটি অটোরিকশা খোঁজতে থাকে। তারা হাকিমকে পেয়ে ডুমরাকান্দা বাজার থেকে দ্বাঁড়িয়াকান্দি যাওয়ার জন্য প্রতিজন ১০ টাকা করে তিনজন ত্রিশ টাকায় ভাড়া করে তার বিভারটেকে উঠে। কাজল চালক হাকিমের পাশের সিটে এবং মোস্তুফা ও বাবুল পিছনের সিটে বসে। যাত্রীবেশধারী ছিনতাইচক্রের সদস্যদের নিয়ে হাকিম ডুমরাকান্দা বাজার থেকে দ্বাঁড়িয়াকান্দির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। ৭টার দিকে ভিটিগাঁও এর ফাঁকা জায়গায় পৌঁছলে হাকিমের মুখ চেপে ধরে তাকে বিভারটেক থামাতে বাধ্য করে যাত্রীবেশে ছিনতাইকারীরা। তারা রাস্তার পাশে নিচে নামিয়ে এলোপাতাড়িভাবে কিল, ঘুষি মেরে ও আঘাত করে হাকিমকে রক্তাক্ত জখম করে। এক পর্যায়ে হাকিমের পরিহিত লুঙ্গি খুলে সেটি ছিঁড়ে তার হাত-পা বেঁধে নাকে-মুখে কিল-ঘুষি মেরে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে কচুরিপানার মধ্যে লাশ ফেলে বিভারটেক মিশুক নিয়ে দ্বাঁড়িয়াকান্দির দিকে চলে যায়। হাকিমের বিভারটেক মিশুক ভৈরবের চন্ডিবের নিয়ে মো. ফুল মিয়ার গ্যারেজে ১৬ হাজার টাকায় বিক্রিয় করে সকলেই টাকা ভাগ করে নেয় এবং হাকিমের মোবাইল ফোনটি কাজল নিয়ে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *